ইয়েমেনে চালানো ব্যাপক বিমান হামলায় অন্তত ২৬৪ জন হুথি বিদ্রোহী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলের তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ মারিব অঞ্চলে সৌদি সামরিক জোট তিন দিন ধরে ওই বিমান হামলা চালায়।
স্থানীয় সময় রবিবার (২৫ অক্টোবর) জোটের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইয়েমেনের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ মারিবে গত তিন দিনে হামলায় বিদ্রোহীগোষ্ঠী হুথিদের ২৬৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস অ্যাজেন্সি (এসপিএ) জানায়, ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় মারিবের ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণের আল-জাওবা এবং আল-কাসসারার ৩০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে সৌদি জোটের বিমান হামলায় বিদ্রোহীদের ৩৬টি সামরিক যানবাহন ধ্বংস এবং ২৬৪ জনের বেশি হুথি সদস্য নিহত হয়েছেন।
চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারি মাসে মারিব দখলে অভিযান চালিয়েছিল হুথি বিদ্রোহীরা। ওইসময় ব্যাপক প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় হুথি বিদ্রোহীরা দখল অভিযান স্থগিত রাখে। তবে গত ২৩ সেপ্টেম্বর হুথি বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায় ইয়েমেনের পূর্বাঞ্চলীয় মারিব প্রদেশ। তবে গত তিন দিন ধলে নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রদেশটিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় সৌদি জোট।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
সৌদি জোটের ওই অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে দেশটিতে দুই শাসক গোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনো মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। অন্যদিকে, উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা। অন্যদিকে, ইরানের সামরিক সহাযোগিতায় হুথি বিদ্রোহীরা সৌদি সামরিক জোটের চালোনো হামলার পাল্টা জবাব দিয়ে আসছে।
ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের এক সময়ের তেলসমৃদ্ধ ও সচ্ছল এই রাষ্ট্র টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।