অর্থের দিক দিয়ে মুকেশ আম্বানীকে ছাড়িয়ে এশিয়ার নতুন শীর্ষ ধনী হয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানী। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্লুমবার্গ বিলিওনার ইনডেক্স অনুসারে, আদানীর সম্পত্তির পরিমাণ এখন ৮৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুকেশ আম্বানীর সম্পত্তির পরিমাণ ৮৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত এক বছরে বেশ কিছু ব্যবসা থেকে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন তিনি। এরমধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবসা, বিভিন্ন ঠিকাদারি, কয়লার ব্যবসা উল্লেখযোগ্য। নবায়নযোগ্য জ্বালানীখাতে ২০৩০ সাল নাগাদ ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আদানির। মুকেশ আম্বানীও আগামী ৩ বছরে গ্রিন এনার্জি খাতে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার কথা জানিয়েছেন।
গৌতম আদানি গুজরাটের একটি ছোট শহর আহমেদাবাদ থেকে তার ব্যবসা শুরু করেন। মূলত পণ্যসামগ্রীর ব্যবসা শুরু করে আজ বিশ্বসেরা ধনীদের তালিকায় আছেন এ উদ্যোক্তা।
বর্তমানে এই সংস্থার কর্মচারির সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি। মূলত নবায়নযোগ্য জ্বালানী, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবসা, পোর্টের ব্যবসা,সড়ক ব্যবস্থাপনার ব্যবসাসহ নানা ব্যবসা আছে আদানী গ্রুপের।
গৌতম আদানি ১৯৬২ সালের ২৪ শে জুন আহমেদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শান্তিলাল আদানি একজন বস্ত্রব্যবসায়ী ছিলেন। গৌতম আদানি গুজরাট ইউনিভার্সিটিতে কমার্স নিয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রিতে ভর্তি হলেও পড়াশোনায় আগ্রহী ছিলেন না।
দ্বিতীয় বছরই কলেজ ছেড়ে দেন এবং ১৯৭৮ সালে মুম্বাই পাড়ি দেন। মুম্বাই এ মহেন্দ্র ব্রার্দাস এ একজন হীরা বাছাইকারি হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। বছর দু,তিন পরে মুম্বাই এর জাভেরি বাজারে নিজের ডায়মন্ড ব্রোকারেজ ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে তাঁর বড় ভাই মুনসুকভাই আদানি আহমেদাবাদে একটি প্লাস্টিক কারখানা কেনেন এবং পরিচালনার দায়িত্ব দেন গৌতমকে।
গৌতম আদানি লক্ষ্য করলেন প্লাস্টিক তৈরির প্রধান উপাদান পলিভিনাইল ক্লোরাইড সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অভাব। তিনি নিজেই বিদেশ থেকে আমদানি করা শুরু করলেন। এইভাবে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে পরিচয় ঘটলো গৌতম আদানির। ১৯৮৮ সালে স্থাপন করেন আদানি এক্সর্পোটস যা মূলত পণ্যসামগ্রী আমদানি রফতানির কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলো। পরর্বতীকালে আদানি এক্সর্পোটস এর নামকরণ হয় আদানি এন্টারপ্রাইজস্ যা আদানি গ্রুপের প্রধান কোম্পানী। আদানি এন্টারপ্রাইজস্ প্রধানত চাষবাস এবং বিদ্যুৎ সংক্রান্ত পণ্যের বিপণনের সঙ্গে যুক্ত ছিলো। ১৯৯১ সালে অর্থনৈতিক উদারীকরণ নীতি চালু হলে কোম্পানি খনিজ পদার্থ, বস্ত্রশিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে তার ব্যবসার প্রসার ঘটায়।
১৯৯৪ সালে গুজরাট সরকার মুন্দ্রা বন্দর পরিচালনার জন্য বেসরকারি কোনো কোম্পানি খুঁজছিলো। ১৯৯৫ সালে মূন্দ্রা বন্দর পরিচালনার চুক্তি পায় আদানি। বর্তমানে মুদ্রা র্পোট হল ভারতের প্রথম বৃহত্তম প্রাইভেট পোর্ট যা বাৎসরিক ২১০ মিলিয়ন টন কার্গো ধারণ ক্ষমতা রাখে।
আদানি এন্টারপ্রাইজস্: এটি হল আদানি গ্রুপের মূল কোম্পানি যা মাইনিংসহ বেশ কিছু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৯৯ সালে আদানি গ্রুপ আদানি উইলমার নামে একটি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়। ফরচুন ব্র্যান্ডের খাবার তেল, আটা, চাল, ডাল ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকারক হলো আদানি উইলমার গোষ্ঠী। এছাড়াও প্রসাধনী সামগ্রী, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ইত্যাদি উৎপাদন করা হয়।
আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস: এটি বিমান বন্দর পরিচালনার যাবতীয় কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। এটি মুম্বাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড এর প্রধান অর্থ সরবরাহকারী সংস্থা। এছাড়াও ২০২১ এর জানুয়ারি থেকে আহমেদাবাদ, জয়পুর, লক্ষ্ণৌ ইত্যাদি ছয়টি শহরে বিমানবন্দর নির্মাণ ও পরিচালনার জন্যে ৫০ বছরের লিজ নিয়েছে এই সংস্থা।
আদানি পাওয়ার: এটি ১৯৯৬ সালের আগস্টে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ভারতের বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার প্রজেক্ট পরিচালনায় চুক্তি নেয়। এর অন্তর্গত চারটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, দাহেজ ও মুন্দ্রা-তে অবস্থিত যা মিলিতভাবে ১০,৪৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ২০১৪ সালে আদানি পাওয়ার টাটা পাওয়ার কে টপকে ভারতের সর্ববৃহৎ তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে স্বীকৃতি পায়। ভারতের বাইরে আদানি পাওয়ার লিমিটেড নামে সংস্থাটি কাজর্কম চালায়।
আদানি গ্রীন এনার্জি: এটি ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থা বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত শক্তি যেমন বায়ুশক্তি, সৌর শক্তি ইত্যাদি উৎপাদনের কাজ করে।
২০২০ সালে মে মাসে আদানি গ্রীন এনার্জি লিমিটেড বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট (৮০০০ মেগাওয়াট) তৈরির চুক্তি পায়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে কোম্পানি বিদেশী বিনিযোগকারীদের কাছে ৩৬২.৫ মিলিয়ন ডলার এর গ্রীনবন্ড চালু করে যা এর আগে কোনো ভারতীয় কোম্পানি করেনি।
আদানি র্পোট: এটি নির্দিষ্ট একটি এলাকা যার ম্যানেজমেন্ট এবং কাস্টমস্ এর নিয়মকানুন স্বতন্ত্র। এটি হলো ভারতের বৃহত্তম প্রাইভেট পোর্ট কোম্পানি।
আদানি টোটাল গ্যাস: এটি একটি গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা যা আদানি গ্রুপ এবং ফরাসি তেল ও গ্যাস কোম্পানি টোটাল এর যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের ২ টি ভৌগোলিক এলাকায় পাইপের মাধ্যমে গ্যাস বিতরণের কাজ করছে।
এছাড়াও ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের সাথে যৌথ উদ্যোগে এই কোম্পানি ১৯ টি শহরে গ্যাস বিতরণ করে আসছে। আদানি রোড ট্রান্সর্পোট: এই সংস্থা হাইওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে এবং টোলওয়ে নির্মাণে কনট্র্যাক্ট নেয়।
ব্যবসার পাশাপাশি আদানি গ্রুপ বিভিন্ন ধরণের সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কোম্পানির পুরো মুনাফার ২ শতাংশ খরচ করা হয় ১৯৯৬ সালে গঠিত আদানি ফাউন্ডেশনের জন্য। পরিবেশ সংরক্ষণ, পানি সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন ধরণের জনহিতৈষীমূলক কর্মকান্ডে এ অর্থ ব্যয় করা হয়।
তথ্যসুত্র-ইন্টারনেট থেকে পাওয়া