সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যূত ও গ্রেপ্তার মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবি জোরালো হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চি কোথায় আছেন বা তাকে কোথায় বন্দি রাখা হয়েছে। অভ্যুত্থানের একদিন পেরিয়ে গেলেও সেনাবাহিনী এখনও সু চিকে কোথায় আটকে রেখেছে তা নিয়ে মুখ খোলেনি।
মিয়ানমারে সর্বশেষ নির্বাচনের ফল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সোমবার ভোরে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। তারা ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টকে গ্রেপ্তার করে। ওই দিন এনএলডির আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
ক্ষমতা দখলের পর সেনাবাহিনী দেশজুড় এক বছরের জন্য অলিখিত জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
কোথায় আছেন সু চি?
সোমবার সু চিকে গ্রেপ্তারের পর কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে সেনাবাহিনী বা অন্য কোথাও থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনএলডি-র এক এমপি’র বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদেরকে উদ্বিগ্ন না হতে বলা হয়েছে। যদিও আমরা খুবই উদ্বেগের মধ্যে আছি। যদি আমরা বাড়িতে তাদের অবস্থানের কোনও ছবি হাতে পেতাম তাও কিছুটা স্বস্তি পেতাম।
একইদিন এনএলডির আরও বেশ কয়েকজন এমপিকে আটক করা হয়। তাদেরকেও রাজধানী নিপিডোতে তাদের নিজ নিজ সরকারি বাসভবনে আটকে রাখা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এনএলডি’র কেন্দ্রীয় তথ্য কমিটির এক সিনিয়র কর্মকর্তা কী তোয়ে ফেইসবুকে এক পোস্টে ‘সু চির স্বাস্থ্য ভাল আছে’ বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবারের ওই ফেইসবুক পোস্টে তোয়ে বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন সু চির শরীর ভালো আছে এবং তাকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। এনএলডির এক সদস্য এটিকে ‘খোলা আকাশের নিচে বন্দিশালা’ বলে বর্ণনা করেন।
অন্যদিকে, চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া মিয়ানমারের এক সেনাকর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, অভ্যুত্থানের সময় যেসব আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক নেতাদের আটক করা হয়েছিল মঙ্গলবার তাদের বেশিরভাগকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সাগাইং অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী মিন্ত নাইংকেও সেনাবাহিনী আটক করেছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তির পর বিবিসি’কে তিনি বলেন, তাকে একটি ডরমিটরিতে রাখা হয়েছিল এবং তার সঙ্গে ভাল আচরণ করা হয়েছে।
মিয়ানমারে ঘটে চলেছে কী?
সেনা অভ্যুত্থানের একদিন পেরিয়ে গেলেও অস্বাভাবিক রকম শান্ত হয়ে আছে মিয়ানমার। সোমবার রাতে এবং মঙ্গলবার সকালে সব বড় বড় নগরীর বেশিরভাগ সড়ক ফাঁকা ছিল। সব সড়কেই সেনাসদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। আর রাতে কারফিউ জারি হয়েছে। ইয়াঙ্গুনে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা দ্য রিপোর্টকে সোমবার জানান, অভ্যুত্থানের পর মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সেবা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে সেগুলোর কিছুকিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। লোকজন নিত্যপণ্য কিনে বাসায় জড়ো করছে।
বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগুনের সড়কে যে কয়জনকে দেখা গেছে তাদের চোখেমুখে ছিল হতাশার ছাপ। তাদের কেউ কেউ গণতন্ত্রের জন্য তাদের কঠিন লড়াই ভেস্তে যাওয়া নিয়ে আক্ষেপও করেছেন।ইয়াংগুনে সোমবার বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ইন্টারনেট না থাকায় এটিএম বুথগুলোও অচল হয়ে পড়েছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকে ব্যাংকের কার্যক্রম চালু হয়েছে।
লোকজনকে লাইন ধরে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ তুলতে দেখা গেছে। ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় তারা হাতে নগদ অর্থ জমা করতে চাইছেন। তবে সোমবার বাজারে লোকজন যেভাবে হুড়োহুড়ি করে নিত্যপণ্য কিনছিল মঙ্গলবার সেই ভিড় বেশ খানিকটা কমে এসেছে।
ইয়াংগুনের বিমানবন্দর মঙ্গলবারও বন্ধ আছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। রাজধানী নিপিধোতে মঙ্গলবারও সেনাসদস্যদের ট্যাঙ্ক এবং ট্রাক নিয়ে পার্লামেন্ট ভবন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে।