জাতীয় ঐক্যের সরকার চায় শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এপ্রিল ৪, ২০২২, ০৯:১৪ পিএম

জাতীয় ঐক্যের সরকার চায় শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সরকার গঠনের আহ্বান জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। এর আগে দেশটির সব মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।পদত্যাগ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও। তাছাড়া দর পতন হওয়ায় দেশটির শেয়ারবাজারের কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।

সোমবার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান জাতীয় সংকট মোকাবিলায় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা সব রাজনৈতিক দলকে একত্রে কাজ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।এতে আরও বলা হয়, জাতীয় প্রয়োজন বিবেচনা করে সব নাগরিক ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সময় এসেছে।

বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, গভীরতর সংকটের সমাধান 'গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে' খুঁজে পাওয়া উচিত।

এদিকে, সোমবার শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অজিথ নিভার্দ ক্যাবরাল পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।এক টুইটার পোস্টে ক্যাবরাল বলেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে অর্থনৈতিক সংকটে বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও তার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে ছাড়া মন্ত্রিসভার বাকি ২৬ সদস্য পদত্যাগ করেন।

এর আগে গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে সর্বদলীয় অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন  দেশটির সাবেক শিল্পমন্ত্রী উইমাল উইরাওয়ানসা। রবিবার পার্লামেন্টের ১১টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই প্রস্তাব দেন তিনি।

রবিবার গভীর রাতে এক বৈঠকের পর তারা একযোগে পদত্যাগ করেন।খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের কারণে জনগণের ক্ষোভের মুখে যারা পদত্যাগ করেছেন, তাদের মধ্যে প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের তিন সদস্য রয়েছেন।

রাজাপক্ষে পরিবারের ছোট ভাই অর্থমন্ত্রী বাসিল, বড় ভাই কৃষিমন্ত্রী চামাল ও পরিবারের সন্তান ক্রীড়ামন্ত্রী নামাল পদত্যাগ করেছেন।

১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। ৭৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ায় বাইরের দেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার সরকার।

ফলে, ভয়াবহভাবে ব্যহত হচ্ছে দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং গত বেশ কিছুদিন ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার অধিকাংশ এলাকা ১৩ ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে দেশটির বেশ কিছু হাসপাতাল সার্জারি বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি সড়বাতিগুলোও জ্বালানো সম্ভব হচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দ্রব্যমূল্যোরর উর্ধ্বগতি। শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে দেশটিতে খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।

সংকট মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েক শ’ মানুষ। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী গুলিবর্ষণ ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।এরপর দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকার।

Link copied!