মে ১৪, ২০২২, ০৯:০৩ পিএম
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনের বর্তমান অবস্থা এখন অনেক বেশি খারাপ। আগের চেয়ে বেশি যোদ্ধা হারানোর পাশপাশি সোভিয়েত আমলের অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ জয় সম্ভব নয় বলে মন করছেন ইউক্রেনের সংসদ সদস্য ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন’র বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থা শুরুর সময়ের চেয়ে এখন ‘অনেক বেশি খারাপ’ উল্লেখ করে দেশটির সংসদ সদস্য ওলেকসান্দ্রা উস্তিনোভা ইউক্রেনকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও যুদ্ধবিমান সরবরাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের সুশীল সমাজের নেতৃস্থানীয় কর্মী দারিয়া কালেনিয়ুক এ বিষয়টির ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘সোভিয়েত সরঞ্জাম দিয়ে আমরা এ যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব নয়।”
তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিততে না পারার তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন। ১. ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার অনেক বেশি সোভিয়েত সরঞ্জাম আছে।২. এই অস্ত্রের জন্য আমরা অন্য কোথাও থেকে গোলাবারুদ পাচ্ছি না। ৩. রাশিয়ার তুলনামূলক বেশি মানুষ ও সেনা আছে।’
ইউক্রেনের পার্লামেন্ট সদস্য উস্তিনোভা বলেন, “ইউক্রেন এখন আর সোভিয়েত আমলের মিগ যুদ্ধবিমান চায় না। কারণ, ‘যুদ্ধের ধরন বদলে গেছে’। এর পরিবর্তে রাশিয়াকে ঠেকাতে ইউক্রেনের দরকার মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস), প্যালাডিন সেলফ-প্রোপেলড হাউইটজার এবং এফ-১৬–এর মতো যুদ্ধবিমান।” এ ধরনের যুদ্ধবিমান ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান এই আইনপ্রণেতা।
সম্প্রতি কিয়েভে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন কালেনিয়ুক। নিজের অর্জন করা অভিজ্ঞতা দেখে তিনি বলেন, “ইউক্রেনের ‘যুদ্ধ-অভিজ্ঞ পাইলট আছেন। তাঁরা এখন প্রশিক্ষণ নিতে প্রস্তুত। আগের দিনও তাঁরা প্রশিক্ষণের জন্য যেতে চেয়েছিলেন। তবে যুদ্ধবিমান সরবরাহের বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়ায় ’তাঁদের নেওয়া এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রুম হামলা মোকাবিলায় ইউক্রেনে ভারী অস্ত্রশস্ত্র পাঠাতে শুরু করলেও এখন পর্যন্ত এমএলআরএস ও যুদ্ধবিমান সরবরাহ করেনি। উস্তিনোভা ও কালেনিয়ুক একাধিক বৈঠকে অংশ নিতে এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে অবস্থান করেন। বলেন, দ্রুত এসব ভারী অস্ত্রশস্ত্র পাঠানোর ব্যাপারে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছার’ অভাব আছে বলে তাঁরা মনে করেন। এখনো মস্কোকে উসকানির ভয়ের একটা আবহ আছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখন যেসব অস্ত্র পাঠাচ্ছে, এসব ভারী অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক বেশি সময় নেওয়ায় দেশটির সমালোচনা করেছেন উস্তিনোভা ও কালেনিয়ুক। উস্তিনোভা বলেন, ‘যদি আমরা দুই মাস আগে হাউইটজারগুলো পেতাম, তাহলে মারিউপোলের ঘটনা ঘটত না। কারণ, তারা যেভাবে শহরটিকে ঘিরে ফেলেছে, সেটা করতে সমর্থ হতো না—শহরটিকে ঘিরে ফেলা এবং আক্ষরিক অর্থে এটা ধ্বংস করে দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য সময় মানে জীবন, হাজারো জীবন। আমরা শুনে আসছি যে কত দ্রুত সবকিছু এগোচ্ছে এবং কত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ ধরনের যুদ্ধ আর হয়নি। আর দুর্ভাগ্যজনক হলো, এখানে আমরা দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেই আসছি।’
প্রসঙ্গত, উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য কয়েক বছর আগে আবেদন করা নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় মস্কো-কিয়েভের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করতে যুদ্ধ শুরুর দুই মাস আগ থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখে মস্কো। তবে ওই কৌশল কাজে না আসায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। এর দুদিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে।