বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ১০, ২০২২, ০৮:৫৫ পিএম

বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে

অনাস্থা ভোটে হেরে প্রথম বারের মতো মুখ খুলেছেন পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। রবিবার সাবেক হওয়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার ক্ষমতাচ্যুতি নিয়ে কথা বলেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান বলেন, “শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে।”

দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পরদিন রোববার এই মন্তব্য করেছেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ইমরান খান বলেন, “১৯৪৭ সালে পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়। কিন্তু শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ আবার পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে।”

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এই চেয়ারম্যান আরও বলেন,“ দেশের জনগণই সর্বদা তাদের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা করে। এদিকে, ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই।” এরপরই পিটিআই চেয়ারম্যান কথিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার দিনভর নানা নাটকীয়তা শেষেও নিজের পতন ঠেকাতে পারেননি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। রবিবার প্রথম প্রহরে পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলোর আনা অনাস্থা ভোটে হেরে যান তিনি।

জাতীয় পরিষদে ৩৪২টি ভোটের মধ্যে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থার ভোট পড়েছে ১৭৪ টি। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বিপক্ষে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী পদে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান।

ইমরান খানের বিরুদ্ধে গত ৩ এপ্রিল পার্লামেন্টে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। তবে সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি ওই প্রস্তাবকে ‘অসংবিধানিক’ উল্লেখ করে খারিজ করে দেন। পাশপাশি তিনি জাতীয় পরিষদে জানান, “বিরোধীদের আনা প্রস্তাব আসলে ‘বিদেশি চক্রান্ত’।” পরবর্তীতে ইমরান খানের পরামর্শে জাতীয় পরিষদ ভেঙ্গে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।

তবে প্রেসিডেন্ট জাতীয় অধিবেশন ভেঙ্গে দিলেও বিরোধী দলগুলো ডেপুটি স্পিকারের অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। টানা চার দিন চরম নাটকীয়তার পর গত বৃহস্পতিবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেন সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটির তারিখ শনিবার নির্ধারণ করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের অধিবেশন শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর স্পিকার আসাদ কায়সার অধিবেশন মূলতবির সিদ্ধান্ত নেন। শুরু হয় একের পর একত নাটক।  বেলা ২টা ৩০ মিনিটে অধিবেশন পুনরায় শুরু হয়। পরে জানানো হয়, ইফতারের বিরতির পর রাত ৮টার দিকে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হবে। তবে মধ্যরাতেও সেই অধিবেশন শুরু হয়নি।

পরবর্তীতে ইমরান খানের অনুগত হিসেবে পরিচিত স্পিকার আসাদ কায়সার ও ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি অনাস্থা প্রস্তাবের ভোট থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে রাতেই পদত্যাগ করেন। স্পিকারের পদত্যাগের আগে অধিবেশনের সভাপতিত্বের দায়িত্ব পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এর এমপি আয়াজ সাদিকের কাছে ন্যাস্ত করেন আসাদ কায়সার। এরপরই শুরু হয় ভোট। তাতে অনাস্থার পক্ষে পড়েছে ১৭৪ জন সংসদ সদস্য ভোট দেন। আর এর মাধ্যমে পাকিস্তানের ইমরান খানের যুগের শেষ হয়।

Link copied!