ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু চোরাচালান কমেছে বিস্ময়করভাবে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৫, ২০২২, ০৬:২৭ এএম

ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু চোরাচালান কমেছে বিস্ময়করভাবে

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাচালান করা গবাদিপশু আটকের ঘটনা কয়েক বছর ধরে দ্রুত কমছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশে গরু চোরাচালানের ঘটনা কার্যকরভাবেই মোকাবিলা করছে ভারত।

ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু চোরাচালান নিয়ে দ্য হিন্দুস্তান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এমনটিই বলা হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (এমএইচএ) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ২০১৫ সালে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬০২টি গবাদিপশু আটক করে। ৬ বছর পর এসে ২০২১ সালের প্রথম ১১ মাসে (নভেম্বর পর্যন্ত) মাত্র ২০ হাজার ৪১৫টি গবাদিপশু চোরাচালানকালে আটক করে এ বাহিনী।

গত সাত বছরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু চোরাচালান মোকাবিলায় ২০১৮ সাল ছিল টার্নিং পয়েন্টের (মোড় ঘোরানো) বছর। এর আগের বছর ১ লাখ ১৯ হাজার ২৯৯টি গবাদিপশু আটক করেছিল বিএসএফ। এক বছর পরই (২০১৮) তা ৫০ শতাংশ কমে ৬৩ হাজার ৭১৬-এ নেমে আসে। গত দুই বছরে এ সংখ্যা আরও দ্রুত কমে ২০১৯ সালে হয় ৪৬ হাজার ৮০৯ ও ২০২১ সালে ২০ হাজার ৪১৫।

২০১৪ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার গো–সুরক্ষায় ও গরু চোরাচালান প্রতিরোধে বিশেষ মনোযোগ দেয়।

২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের একটি সীমান্ত ফাঁড়িতে বিএসএফ কর্মীদের উদ্দেশ করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, তিনি এই বাহিনীকে গরু চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবহার করতে চান, যাতে বাংলাদেশ গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয়।

রাজনাথ সিংয়ের এমন মন্তব্যের পর গবাদিপশু পাচার বন্ধ করতে সীমান্তে সার্বক্ষণিক নজরদারি শুরু করে বিএসএফ। এ কাজের জন্য তারা অতিরিক্ত সদস্যও মোতায়েন করে। নদীপথে গবাদিপশু পরিবহনকারী চোরাকারবারি ঠেকাতে বাড়ানো হয় স্পিডবোটে টহল। এই ধরনের আন্তসীমান্ত অপরাধীদের ওপর প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্রের ব্যবহারও শুরু করে বিএসএফ। গত বছর ভারত সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিএসএফ গবাদিপশু পাচারকারীদের ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

তবে বিএসএফের সূত্রগুলো বলেছে, গবাদিপশু চোরাচালান অনেকটাই আটকে যাওয়ার পেছনে অন্য কারণও রয়েছে। একজন জ্যেষ্ঠ বিএসএফ কর্মকর্তা বলেন, ‘এর আগে আমরা গবাদিপশু জব্দ করার পর শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতাম, যা তারা পরে নিলামে বিক্রি করত। তখন নিলাম করা গবাদিপশুগুলো প্রায়ই একই চোরাকারবারিরা কিনে নিত।’

নাম প্রকাশ না করা ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালে এসে এই নিলাম প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়। জব্দ করা গরুর দায়িত্ব স্থানীয় পুলিশের নেওয়ার কথা থাকলেও তারা এ বিষয়ে সহযোগিতা করেনি। তাই বিএসএফ কিছু এনজিওর সহায়তায় জব্দ পশুর দেখভাল শুরু করে। পরে সেগুলো গো-আশ্রয়ণে পাঠিয়ে দেয়। বিএসএফকে এর জন্য খরচও বহন করতে হয়েছে। এ উদ্যোগে চোরাকারবারি আটকের সংখ্যাও কমেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ বছরের পর বছর নিজস্ব দুগ্ধ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়িয়ে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি করছে। এটিও সীমান্তে গবাদিপশুর চোরাচালান সীমিত করেছে। আরেক বিএসএফ কর্মকর্তা বলেন, হরিয়ানা জাতের গরু এখন সীমান্তে খুব কমই আটক করা হচ্ছে। কিন্তু উত্তর প্রদেশ ও বিহারের লোকেরা এখনো এ জাতের গরু চোরাচালানে সক্রিয় আছেন। রাজ্য সরকারগুলো এগিয়ে এলে বিএসএফকে গরু চোরাচালান ঠেকানোর কাজ আর করতে হবে না।

ভারতের ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গরু আটকের হার কমার সঙ্গে বিএসএফের ওপর চোরাকারবারিদের হামলাও কমেছে। চোরাকারবারিদের হামলায় ২০১৫ সালে ১০৩ জন বিএসএফ সদস্য আহত হন। এ সংখ্যা ২০২১ সালে ৬৩–তে নেমেছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর হামলার চেষ্টা কমে গেছে।

সাম্প্রতিককালের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে বিএসএফ প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে ২১৯টি গুলি চালায়। ২০২১ সালে এটি বেড়ে ২৪৪ হয়। প্রকৃত পক্ষে, এটি শুধু দুই বছরে ২০০-এর নিচে ছিল—২০১৭ (১৩৯) ও ২০১৮ (৭৭) সালে। সবচেয়ে বেশি ৩৫৫টি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে ২০১৬ সালে।

সূত্র: প্রথম আলো 

Link copied!