জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৯:৪৩ এএম
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সময়ই দেখা যায় স্কুল, কলেজ বা শপিং মলে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটছে। দীর্ঘদিনের সমস্যা এটি। ফলে ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে মার্কিনীরা চলাফেরা করেন। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ এক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটলো। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০ জন। আহত হয়েছেন আরও ১০জন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গির্জা বা ধর্মীয় উপাসনালয়ে, রেস্টুরেন্ট ও শপিংমলে বন্দুক হামলার ঘটনা বেশি ঘটছে। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হলো- ‘স্কুলগুলোতে বিশেষ করে হাইস্কুলগুলোতে পদ্ধতিগত বন্দুক সহিংসতা নাটকীয়ভাবে বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় তাদের মধ্যকার সব দ্বন্দ্ব গোলাগুলির পর্যায়ে গিয়ে শেষ হচ্ছে। তবে বড় বড় অনুষ্ঠানেও বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে।
লস অ্যাঞ্জেলসের মন্টিরে পার্কে চাইনিজ লুনার নিউ ইয়ারের অনুষ্ঠান চলছিল সেদিন। ওই সময় ওই আততায়ী মেশিনগান নিয়ে ঢুকে পড়েন বলরুম ড্যান্স ক্লাবে। ড্যান্স বারে ঢুকেই এলোপাথারি গুলি চালান তিনি। মুহূর্তেই রক্তাক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম নিরাপদখ্যাত শহর মন্টিরে।
অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি মার্কিন গবেষণা সংস্থা গান ভোয়োলেন্স আর্কাইভের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের শুরু থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মোট ৩৭টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬১ জন। আর আহত হয়েছেন ১৬২ জন। গত ১৬ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গোসেন শহরে বন্দুকযুদ্ধে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই সবশেষ হামলা হয় একই অঙ্গরাজ্যের লসঅ্যাঞ্জেলসে।
২০২২ সালেও দেশটিতে রেকর্ডসংখ্যক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ জানায়, ওই বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ৬০৭টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ৬৩৭ জন প্রাণ হারান। আর আহত হয় আড়াই হাজারের বেশি। ২০২১ সালে দেশটিতে ৬৯০টি বন্দুক হামলার ঘটনায় ৩ হাজার ২৬৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। এতে নিহত হন ৬৪৫ জন। এর আগের বছর ৬১০টি হামলায় ২ হাজার ৮৭৩ জন গুলিবিদ্ধ হন, মৃত্যু হয় ৪৬৩ জনের।
বন্দুক হামলা বৃদ্ধির কারণ
দেশে বন্দুক হামলা বৃদ্ধির ঘটনায় নানা সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিষেধাজ্ঞার পক্ষে জনমত গড়ে উঠেছে। তবে ল্যাভার্ন স্পাইসারের মতো আইন প্রণেতাদের অনেকেই এটি চান না। তাঁরা মনে করেন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হামলা ঠেকানো সম্ভব নয়। তাদের মতে সমস্যা মূলত মানসিক। হামলাগুলোর জন্য বন্দুকধারীদের মানসিক সমস্যা দায়ি, আগ্নেয়াস্ত্র নয়।
২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার ফল টেনে স্পাইসারের মতো অন্যরাও বলছেন, ১৯৬৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত হামলার ঘটনায় জড়িতদের দুই-তৃতীয়াংশেরই মানসিক সমস্যা ছিল। তাই বন্দুক হামলার অন্যতম কারণ আততায়ীদের মানসিক সমস্যা।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক সমস্যা দিয়ে সহিংসতার ব্যাখ্যা কোনোভাবেই মানা যায় না। অস্ট্রেলিয়ার প্রসঙ্গ টেনে তারা যুক্তি দেখান, বন্দুক রাখার আইনে কড়াকড়ি থাকলে এই ধরনের হামলা কম হয়। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় মাত্র চারটি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের সহজলভ্যতা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। একারণেও বন্দুক হামলা বেড়ে যাচ্ছে। ৩২ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ২৭ থেকে ৩১ কোটি বন্দুকের সরবরাহ আছে। এর অর্থ প্রায় প্রত্যেকেই একটি বন্দুক রাখতে পারে। গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, গড়ে তিনটি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবারের অন্তত একজন বন্দুক বহন করেন।
কিশোর-যুবকদের খ্যাতির লোভও বন্দুক হামলার কারণ হতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম লক্ষ্য হলো বিখ্যাত হওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের কিশোরেরা খ্যাতির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বড় হতে থাকে। এবং দেখা যায়, বন্দুক হামলার ওই সব ঘটনা ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ পায়। আর এটা খ্যাতি অর্জনের পথ মনে করে তাঁরা।