জুলাই ১৯, ২০২৩, ০৯:৫২ এএম
কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির প্রধান মনে করেন, এর ফলে বিশ্বের গরীব দেশগুলো আরও গরীব হবে এবং গরীব মানুষের জীবনযাত্রা আরও নিচের দিকে নেমে যাবে। একই কারণে উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। সংস্থাটি বলছে- এতে বৈশ্বিক মন্দা ফের চাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
কৃষ্ণসাগরীয় শস্যচুক্তি থেকে রাশিয়া বেরিয়ে যাওয়ায় বিপদের মুখোমুখি এক পুরো বিশ্বের মানুষ। এবিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খোদ জাতিসংঘ। সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের গলাতেও শোনা গেছে হতাশার সুর।
বিশ্ব নানান প্রান্তে কোটি কোটি মানুষ খিদের জ্বালায় ধুঁকছে, প্রতিদিন জীবনযাত্রার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে শস্য চুক্তি নিয়ে মস্কোর সিদ্ধান্তের ফলে প্রবল সমস্যায় পড়বেন সাধারণ মানুষ।
গুতেরেস এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, মস্কোর পদক্ষেপ বিশ্বের অভাবী ও দরিদ্র জনসাধারণকে বিপদের মুখে ঠেলে দিল।
ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গম উৎপাদনকারী দেশ। তাই ইউক্রেনকে ‘ইউরোপের রুটির ঝুড়ি’ বলা হয়। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করে। জাহাজভর্তি এসব খাদ্যশস্য কৃষ্ণ সাগর দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। যুদ্ধ শুরুর পরই কৃষ্ণ সাগরসহ ইউক্রেনের বন্দরগুলো রুশ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিলে বেকায়দায় পড়ে ইউক্রেন সরকার। তবে তুরষ্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় শস্যচুক্তিতে রাশিয়া সই করায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইউক্রেন খাদ্যশস্য রপ্তানি করে আসছিল এতদিন। বেশ কয়েকবার এই শস্যচুক্তি নবায়ন হয়। তবে সম্প্রতি ক্রিমিয়া সেতুতে হামলার ঘটনার পর রুশ প্রশাসন বেঁকে বসে। একপর্যায়ে শস্যচুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। এতে বেশ হতাশ জাতিসংঘসহ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা।
তবে এ বিষয়ে রাশিয়ার যুক্তি কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তির আওতায় ইউক্রেন ৩২ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য রপ্তানি করছে। ক্রেমলিনের অভিযোগ, ইউক্রেন শুধু ধনী দেশগুলোকেই খাদ্য দিচ্ছে। দরিদ্র দেশগুলো এখনো খাদ্য ঝুঁকিতে ভুগছে। অথচ চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ইউক্রেন এমন দেশগুলোকে শস্য রপ্তানিতে প্রাধান্য দেবে যারা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে কিন্তু এর বদলে তারা তাদের ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোকে খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নতুন মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্তে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেন, “কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাবার, গবাদি পশু খাদ্য এবং সার বাণিজ্য বিশ্বব্যাপী খাবারের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি দুঃখের সঙ্গেই বলছি যে, গরিব মানুষেরা আর গরিব দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে।”
কৃষ্ণ সাগর শস্য চু্ক্তি ভেঙে পড়ার প্রতিক্রিয়ায় একই কথা বিবিসি-কে বলেছেন খাদ্য বাণিজ্য দেখভালকারী আন্তর্জাতিক শস্য পরিষদের প্রধান কর্মকর্তা।
রাশিয়ার শস্য চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, গমের দাম বেড়ে যাওয়া। আর এই গমের দাম বেড়ে গেলে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মোটেও ভাল হবে না। বেশি দাম দিয়ে কেনার মতো অর্থ তাদের থাকবে না।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হলে দেশটি থেকে শস্য রপ্তানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেইন থেকে পণ্যের যোগান বন্ধ হয়ে গেলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে বিশ্ববাজারে। এর ফলে, শস্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
এর ফলে বিশ্বব্যাপী দেখা যায় খাদ্য সংকট। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। অন্যদিকে, ইউক্রেইনের গুদামগুলোতে টন টন শস্য পড়ে নষ্ট হতে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইউক্রেইন থেকে শস্য রপ্তানির বিষয়ে তিন পক্ষের মধ্যে গত বছর ওই চুক্তি হয়। শস্যচুক্তিটি হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেইন প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ টন শস্য এবং অন্যান্য খাবার পরিবহন করেছে। তবে সোমবার রাশিয়ার শস্য চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় আবারও বৈশ্বিক খাদ্য সঙ্কট প্রবল আকার ধারণ করবে-এমনই সতর্কবার্তা দিলো জাতিসংঘ ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা।