দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, তার দেশে যে অর্থনৈতিক সংকট গণমানুষের জন্য দুর্ভোগ ও অস্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছে, তা কাটিয়ে ওঠার আগে এটি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
শুক্রবার বিবিসির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে জ্বালানির ঘাটতি চরমভাবে দেখা দিয়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। এতে শ্রীলঙ্কার অনেক বাসিন্দা তিনবেলা খাবার যোগাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। সংকট মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতার কারণে দেশটিতে বিক্ষোভ-সহিংসতা দেখা দেয়। এতে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে।
বিক্ষোভ প্রশমিত করার প্রয়াসে রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান।
দায়িত্ব নেয়ার পর দেয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে বিক্রমাসিংহে বিবিসিকে বলেন, তিনি তার দেশের সব পরিবার যেন দিনে তিন বেলা খাবার পায়- সেটা নিশ্চিত করতে চান। আরও আর্থিক সাহায্যের জন্য বিশ্বের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খাদ্য-সংকট থাকবে না, আমরা খাদ্যের ব্যবস্থা করবো।’
নতুন প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে ‘ভঙ্গুর’ বলে বর্ণনা করেন। তবে তিনি শ্রীলঙ্কার জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘ধৈর্য ধরুন, আমি পরিবর্তন আনবো।’
বিক্রমাসিংহে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের কাছে শপথ গ্রহণ করেন। কিন্তু তার নিয়োগ নিয়ে দেশটির জনগণের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। কারণ, তাকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ হিসেবে দেখা হয়।
সাক্ষাৎকারে বিক্রমাসিংহে বলেন, যারা প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে আসছেন, তিনি সেসব বিক্ষোভকারীদের অনুভূতির সাথে একমত। তবে এটা হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ক্রমশ নিম্নগামী। খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি ফুরিয়ে যাচ্ছে বা সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। পেট্রোল স্টেশনে জ্বালানির অপেক্ষায় থাকা বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর দ্বীপ রাষ্ট্রটির এটি সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট।
রাজধানী কলম্বোর ৬৮ বছর বয়সী এক নারী বলেন, আমাদের কেরোসিন নেই, আমাদের পেট্রোল নেই, আমাদের ডিজেল নেই, আমাদের রান্নার গ্যাস নেই এবং কাঠের চুলারও সুযোগ নেই। সন্তানদের খাদ্য জোগাড় করতে আমরা প্রতিদিন সংগ্রাম করছি। গত কয়েক দিনে খাদ্যমূল্য তিনগুণ বেড়েছে। এই অবস্থায় কীভাবে মানিয়ে নেবো?
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে দেশটির আমদানি নির্ভরতা। কিন্তু আমদানির মূল্য পরিশোধের জন্য জরুরি বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও ফুরিয়ে যাচ্ছে।