জানুয়ারি ৩, ২০২২, ১২:১৫ পিএম
গণবিক্ষোভের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ্ হামদক। সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিতর্কিত চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় পুনর্বহাল হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি সরে গেলেন। তার পদত্যাগের পর এবার বেসামরিক শাসনের দাবিতে রাজপথে নেমেছে হাজারো বিক্ষোভকারী। তাদের একটাই দাবি, ক্ষমতার স্বাদ সেনাবাহিনী নিতে পারবে না। দেশ চলবে বেসামরিক শাসনে।
স্থানীয় সময় রবিবার সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেই রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদক। ভাষণে তিনি বলেন, সুদানের পরিস্থিতি বিপজ্জনক দিকে মোড় নিচ্ছে, যা দেশের সমগ্র অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। দেশকে বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন বলেও তিনি জানান।
২০২০ সালের অক্টোবরে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে আবদাল্লাহ হামদককে গৃহবন্দি করে। সে সময় তারা প্রধানমন্ত্রী হামদককে গৃহবন্দী করে। পাশাপাশি গ্রেপ্তার করে হামদক সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীকে।
অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান অক্টোবরের অভ্যুত্থানের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, আসন্ন গৃহযুদ্ধের হুমকি থেকে দেশকে রক্ষা করতে সামরিক বাহিনী এ পদক্ষেপ নিয়েছে। সুদান এখনও বেসামরিক শাসনে ফিরতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে তিনি জানান। দেশটিতে ২০২৩ সালের জুলাইতে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে সুদানের প্রধানমন্ত্রীকে গৃহবন্দী করে রাখার ঘটনায় সামরিক বাহিনী আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র নিন্দা-সমালোচনার মুখে পড়ে। তাই চুক্তির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদে হামদককে ফেরাতে তারা বাধ্য হয়। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশের চাপে হামদকের সঙ্গে অভ্যুত্থানের নেতাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তি হয়। এর মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসেন আবদাল্লাহ হামদক।
হামদক ক্ষমতায় ফিরে আসলেও গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতা ভাগাভাগির বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। তাদের দাবি, সুদানে পুরোপুরিভাবে বেসামরিক শাসন চালু করতে হবে। এরপর শুরু হয় দেশজুড়ে বিক্ষোভ, সহিংসতা। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে অবশেষে আবদাল্লাহ হামদক তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
নভেম্বরে হামদকের সঙ্গে সমঝোতার অধীনে, পুনর্বহাল হওয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত টেকনোক্র্যাটদের একটি মন্ত্রিসভার নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল। তবে ওইসময় নতুন বেসামরিক সরকারের কতটা ক্ষমতা থাকবে তা স্পষ্ট করা হয়নি । বিক্ষোভকারীদের দাবি, তারা সামরিক বাহিনীকে বিশ্বাস করে না। তাদের শাসনও দেখতে চায় না।
এদিকে, রবিবার রাতে হামদকের পদত্যাগের পর রাজধানী খার্তুম ও ওমদুরমান শহরের রাস্তায় নেমে আসে হাজারো মানুষ। গণতন্ত্রপন্থী ও সামরিক শাসনবিরোধী বিক্ষোভকারীরা ‘জনগণের কাছে শক্তি’ স্লোগান দেয় এবং সামরিক বাহিনীকে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়। তারা ২০২২ সালকে প্রতিরোধের বছর হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছে। রবিবারের সংঘর্ষে অন্তত দুজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এনিয়ে অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী মারা গেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে সুদানের ক্ষমতায় ছিলেন স্বৈরশাসক ওমর আল বশির। ২০১৯ সালে ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে ওমর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর দেশকে গণতান্ত্রিক শাসনের দিকে নিয়ে যেতে বেসামরিক ও সামরিক নেতারা নড়বড়ে ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তি করে দেশ চালাতে থাকেন।
তবে গণতন্থপন্থীরা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠায় তা আর সম্ভব হয়নি। গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন হামদক। আর সেনাবাহিনীকে ফিরে গিয়ে শাসন ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছে হাজারো গণতন্ত্রপন্থী।