কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতি রুনা লায়লা (৩৮) পাশবিক র্নিযাতনের শিকারের কথা এবার নিজেই গণমাধ্যমকে জানালেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। তবে জামিনের পর আবারও তাকে কারা ফটকের ভেতরে নিয়ে ফের বসিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। কারাগারে নির্যাতনে তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় এদিনই বিকালে তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর আগে সোমবার চিফ মেট্রোপলিটন আদালত ঢাকার বিচারক আরফাতুল রাকিব তার জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতের জামিনের কাগজপত্র কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছলে কারা কর্তৃপক্ষ যাচাই করে মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে তাকে মুক্তি দেয়। মুক্তি পেয়ে নির্যাতনের বর্ণনা দেন রুনা।
আরও পড়ুন: কাশিমপুর কারাগার: যার নির্দেশে হাজতি নির্যাতন তিনিই তদন্ত কমিটির প্রধান!
দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে রুনা লায়লা বলেন, কারাগারে আমাকে মারার জন্য লাঠি দিয়ে বেদম পেটানো হয়। জেলার ফারহানা, ডেপুটি জেলার জান্নাতুন তায়্যিবা, মেট্রন ফাতেমা, কারারক্ষী হাফিজা, কারারক্ষী সাহিদা, চিফ কারারক্ষী শামীমা, আলোচিত হাজতি নরসিংদীর বহিস্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী রক্সি, হাজতি আসামী আনন্দিকা, অবন্তিকা, মাদকের আসামী সোনালি এবং হাজতি পাপিয়ার কেস পার্টনার হাজতি তায়েবা— সবাই মিলে তাকে গণপিটুনি দেয়। তারা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল ওই সময়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রুনা লায়লা বলেন, আমার ওপর হওয়া অন্যায়ের বিচার চাই। তারা আমাকে কোনো চিকিৎসাই দেয়নি। তারা শিকল দিয়ে অন্ধকার রুমে আমাকে বেঁধে রেখেছিল। আমার জামিনের কথা শুনে বড় বড় কয়েকটা ওষুধ খাইয়েছে মারপিটের ফোলা কমাতে। জেলার ফারহানা নির্দেশ দিয়ে নির্যাতন করিয়েছেন। তিনি আমাকে অকথ্য গালাগাল করেছেন। তিনি নিজেও আমাকে মেরেছেন।
জেলের ভেতর ওরা যখন শুনলো আমার জামিন হয়েছে, শুনে পাপিয়া হুমকি দিয়েছেন আমাকে। তিনি বলেছেন, অনেক ওপরের মহলে তার যোগাযোগ আছে। জামিনে বেরিয়ে আমি যদি আমার ভাইয়ের মত সাংবাদিকের সাথে কথা বলি তাহলে তিনি তার লোক দিয়ে গায়েব করে দেবেন!
রুনা লায়লার ভাই আব্দুল করিম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমরা জামিনের খবর আজ সকালে জানতে পারি। তবে আমাদের এই কয়েকদিন +৯৮৭ জাতীয় বিদেশি নম্বর থেকে কল করে কয়েকজন হুমকি দিয়েছেন। হুমকিদাতারা বলেছেন, সাংবাদিকদের কেন আমরা নির্যাতনের কথা জানিয়েছি?
রহস্যময় ওই নম্বর থেকে হুমকি-ধামকি দেওয়ায় জেল খানার গেটে আমি না গিয়ে আমার আরেক বোনকে পাঠাই। সে গিয়ে দেখে লিস্টে রুনা লায়লার নাম নাই! পরে চলে আসার সময় সে দেখে সিএনজি অটোতে করে এক মেয়েকে ধরাধরি করে এক পুরুষ দিয়ে কোথায় যেন পাঠানো হচ্ছে! আমার সেই বোনটি কাছে গিয়ে দেখে, সে আমাদেরই রুনা! তখন সাথে থাকা পুরুষ কারারক্ষী সেখানে আমার বোনকে রেখেই পালিয়ে যায়। সিএনজি চালককে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, জেলার ফারহানা আপা বলছে, এই মহিলাকে নিয়ে গাজীপুর বা কাপাসিয়ার কোথাও রেখে আসতে। এ কথা শুনে আমার বোন মনে করেছে রুনা হয়ত মারাই গেছে। তখনই তাড়াতাড়ি সিএনজি পরির্বতন করে বোনকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসে সে।
আরও পড়ুন: হাজতি নির্যাতনের অভিযোগে পাপিয়াকে কারা স্থানান্তরিত
হাসপাতালের কর্তব্যরত এক ডাক্তার রুনা লায়লাকে দেখেছেন। তিনি তাকে দেখে বলেছেন, রোগীকে যেভাবে প্রহার করা হয়েছে, এতে করে মলদ্বার দিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। কিডনিও ড্যামেজ হতে পারে তার।
প্রসঙ্গত, নির্যাতনের স্বীকার রুনা লায়লা জেলার কাপাসিয়া থানার করিহাতা গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে। ঢাকার কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় তাকে গত ১৬ জুন কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার ৩- এ আনা হয়। সেখানেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এ নিয়ে হাজতিরা হাজতিদের পেটান কাশিমপুর কারাগারে! শিরোনামে প্রথম রিপোর্ট করে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ। এরপরই নড়েচড়ে বসে কারাকর্তৃপক্ষ, গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।