সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইসহ ১৩০টি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ১১, ২০২৩, ০১:২৫ পিএম

সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইসহ ১৩০টি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা চূড়ান্তের পর ঢাকার আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা অসন্তোষ প্রকাশ করে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ১৩০টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।  

প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের মুখে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। এসব কারখানার শ্রমিকেরা আজ শনিবার সকালে কর্মস্থলে এসে বন্ধের নোটিশ দেখে চলে গেছেন। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

সকাল ৮টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর ও কাঠগড়া এলাকায় গিয়ে দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড, অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড, হা-মীম, শারমীন, পাইওনিয়ার লিমিটেড এবং আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড, ডুকাটি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আগামী অ্যাপারেলস লিমিটেড, ক্রসওয়্যার লিমিটেড, ছেইন অ্যাপারেলস লিমিটেড, টেক্সটাউন লিমিটেড, অরনেট নিট গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ শতাধিক পোশাক কারখানার গেটে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখা গেছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, গত ৯ নভেম্বর সকাল ১০ টায় এবং বিগত কয়েকদিন ধরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বহিরাগত পোশাক শ্রমিকগণ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে কারখানা ভাংচুর ও কারখানার কাজ বন্ধ রাখায় কর্মস্থলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে কারখানার উৎপাদন কাজ মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়েছে। এমতাবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ১০ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো।

তবে উপস্থিত কারখানার শ্রমিকগণ জানান, গত বৃহস্পতিবার কারখানায় এসে কাজ যোগ দেয়ার পরপরই ছুটি দেয়া হয়। এরপর আমরা সবাই বাসায় ফিরে যাই। শুক্রবার ছিল সাপ্তাহিক বন্ধ। আজ (শনিবার) সকালে কারখানার সামনে এসে অনির্দিষ্টকালের ছুটির নোটিশ দেখতে পাই। তবে মালিকপক্ষ কি কারণে বন্ধ দিলো আমাদের কিছুই জানানো হয় নাই।

তারা আরও জানান, কারখানা কবে খুলবে মালিকপক্ষ সেটা জানায়নি। এখন তারা যে কোন একটা সিদ্ধান্ত নিক। ২০-২৫ হাজার টাকা যা-ই বেতন বাড়াক, কারখানা খুলে দিলে আমরা কাজে যোগ দিব। আমরাতো কাজ করতে চাই। কারণ হেলপারের বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে কিন্তু অপারেটরদেরতো কোন ডিসিশন দিচ্ছে না। এই জন্য আমরা কাজ করিনি।

পুলিশ জানায়, মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। শ্রমিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলতা এড়াতে কর্তৃপক্ষ আজ শনিবার থেকে বেশ কিছু কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে।

কাঠগড়া এলাকার আগামী এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ৩১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকেরা কারখানায় এসে ফেইস পাঞ্চ করেন। তাঁরা কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রেখে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। পরে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পর কারখানা ত্যাগ করে বাইরে চলে যান।

নিরুপায় হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে শ্রমিকেরা ৫ নভেম্বর কাজে যোগ দিয়ে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত কাজ করেন। ৭ নভেম্বর বেতন দেওয়া হলে ৮ নভেম্বর থেকে তারা আবারও কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করতে থাকেন। এ অবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে আজ শনিবার থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে।

শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘গত বুধ ও বৃহস্পতিবারের তুলনায় আজকের পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো আছে। বেশির ভাগ কারখানায় শান্তিপূর্ণভাবে কাজ চলছে। যেসব কারখানা চলছে, ওই সব কারখানার  নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং থাকবে।‍‍` তিনি আরও জানান, এই সংখ্যা হয়ত আরও ৫-৭ টা বাড়তে পারে।

Link copied!