৩৫ বছর আগে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদকে হত্যার দায়ে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে তিনজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ (বিশেষ দায়রা জজ আদালত) বিচারক আলী হোসাইন এই রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া দুজন হলেন আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান এবং তাঁর পরিচিত মারুফ রেজা। তাঁদের আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
খালাস পাওয়া তিনজন হলেন সগিরার ভাশুর চিকিৎসক হাসান আলী চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহিন ও মিন্টু ওরফে মন্টু মণ্ডল। তাঁরা জামিনে আছেন।
মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। সেদিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন স্বামী সালাম চৌধুরী।
মামলার অধিকতর তদন্তের পর ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রে বলা হয়, মূলত পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আসামিরা। পরিকল্পনামাফিক তা বাস্তবায়নের জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়োগ দেওয়া হয়।
এই মামলায় পুলিশ প্রথম অভিযোগপত্র দিয়েছিল ১৯৯০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক হত্যাকাণ্ডে দুজন জড়িত থাকার কথা বললেও এই অভিযোগপত্রে মিন্টু ওরফে মন্টু নামের একজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। নেওয়া হয় সাতজনের সাক্ষ্য।
বাদীপক্ষের সাক্ষ্যে আসামি মন্টু ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজার নাম আসে। মারুফের নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২৩ মে বিচারিক আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।
এই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজা হাইকোর্টে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট রুল দিয়ে অধিকতর তদন্তের আদেশ স্থগিত করেন। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ান। থমকে যায় মামলার কার্যক্রম।
বিষয়টি নজরে এলে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ২৬ জুন হাইকোর্ট অধিকতর তদন্তের আদেশের স্থগিতাদেশটি প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে ৬০ দিনের মধ্যে মামলার অধিকতর তদন্ত শেষ করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
তদন্ত শেষে পিবিআই চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।