বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ বিগত ১২ বছরে অনুষ্ঠিত ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সিআইডির সাইবার বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি তৌহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমরা নন ক্যডারের কিছু পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের তথ্য পেয়েছি। ওই সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত আমরা ১৫ জনের বেশি গ্রেফতার করেছি। তাদের ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন পিএসসির পরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও তাঁর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, ডেসপাস রাইডার খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনিশয়ান নিয়ামুন হাসান, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, নোমান সিদ্দিকী, আবু সোলায়মান মো. সোহেল, জাহিদুল ইসলাম, মামুনুর রশীদ, সাখাওয়াত হোসেন, সায়েম হোসেন এবং লিটন সরকার।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানে রোববার বেরিয়ে আসে এই প্রশ্নফাঁসের ঘটনা।
প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। ছেলে ছাত্রলীগ নেতা, পড়েছেন বিদেশে, এরপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকার ভেতর তাঁর দুইটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আলিশান রয়েছে এমন তথ্যও সামনে আসছে।
তবে সৈয়দ আবেদ আলীর ফেসবুক পেজে নিজের একটি হোটেলের তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি নিজেই। ১৮ মে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমাদের নতুন হোটেল এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা।’
এই হোটেলের কাজে গিয়ে কুয়াকাটার সৈকতে তিনি নামাজ পড়ছিলেন। সেই নামাজের ছবি ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন। সেটি এখন রীতিমতো ভাইরাল।
গতকাল রোববার (৭ জুলাই) থেকে মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবা-ছেলেকে নিয়ে রীতিমতো ঝড় উঠেছে। বেসরকারি টেলিভিশনটিতে প্রচারিত খবর থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত রেলওয়ের ৫১৬টি পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়। এছাড়াও, গত ১২ বছরে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির (বিপিএসসি) ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে বিভিন্ন ইউনিটের উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক, সাবেক সচিবের পিএসও রয়েছেন।
বিসিএসের প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলহোতা পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম গণমাধ্যমটিকে জানান, ‘পিএসসির একজন সদস্যের অফিসে সংরক্ষিত ট্রাঙ্ক থেকে আবু জাফর রেলওয়ের প্রশ্ন আমাকে বের করে দিয়েছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, আমি এটাও জানি ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস করা হয়।
বিসিএসের প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিশনের ক্ষমতাবলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠতে পারে। সেটি প্রমাণ হতে হবে। প্রমাণ হলে, কমিশন যদি মনে করে তাহলে প্রশ্নফাঁস হওয়া বিসিএসের কার্যক্রম বাতিলও হতে পারে।