হক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সদস্য ব্যবসায়ী আদম তমিজী হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।
শনিবার রাত ১০টার দিকে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আদম তমিজী হকের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা আছে। তাঁর বিরুদ্ধে লাইভে এসে বাংলাদেশের পাসপোর্ট পোড়ানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
ডিবি প্রধান আরও বলেন, ‘আদম তমিজী হক মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে থাকলে চিকিৎসার জন্য তাঁকে রিহ্যাবে পাঠানো হবে। সুস্থ করে এনে তাঁকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর তিনি যা করেছেন তা যদি সুস্থ মস্তিষ্কে করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডিবি কার্যালয়ে ঢোকার সময় গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে আদম তমিজী হক বলেন, ‘আমাকে খুব রেসপেক্ট দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি ভেরি হ্যাপি উইথ দ্য গভমেন্ট অব বাংলাদেশ। আমাকে অনেক সম্মান দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে একের পর ফেসবুক পোস্ট, লাইভ ও ভিডিও নিয়ে নেটজগতে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি করেছিলেন আদম তমিজী হক। ফেসবুক স্ট্যাটাসে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং তাঁর চাচা মতিউর রহমান মতিকে গালমন্দও করেন তিনি।
আদম তমিজী হক অভিযোগ করেন, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ-সদস্য, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও তার চাচা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান মতির লুটপাটের কারণে ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠান হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা অবৈধ হস্তক্ষেপ, লুটপাট ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে।
এছাড়াও ফেসবুক লাইভে এসে নিজের বাংলাদেশি পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলেন আদম তমিজী হক। ওই লাইভে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন নেতা ছিলাম আমি। আওয়ামী লীগ আমার ১ হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছে। আমাকে দেশ ছাড়া করেছে। আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটানোর চেষ্টা করছে। যে কারণে আমি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করলাম। এ দেশের নাগরিকত্ব আর চাচ্ছি না। কারণ, এদেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।’
এরপর বিদেশে অবস্থানকালে আদম তমিজী হক ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘শুভ বিকাল, আমার কারখানা থেকে বেআইনিভাবে জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বাবা একজন ভালো মানুষ ছিলেন, তিনি আমার বাবার বন্ধু। প্রতিমন্ত্রী রাসেল, তার চাচা মতিউর রহমান মতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরু আমার প্রতিষ্ঠান থেকে বেআইনিভাবে টাকা-পয়সা নিতেন।’
পরে আবার ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আর বাকি কিছু নেই, শ্রমিক, ব্যাংকস এবং সরবরাহকারীদের টাকা জাহিদ আহসান রাসেলের কাছে আছে। উনার থেকে বুঝে নিবেন। আমি সৌদি যাচ্ছি। তারপর আমার জন্মভূমি ইউকে চলে যাচ্ছি। বাদশাহী দীর্ঘজীবী হোক।’
আরেকটি ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘আমার ফ্যামিলির যদি কিছু হয়, আপনারা দয়া করে খুঁজবেন কারা করছে। আর আমি এই কথাটা বলে রাখব, আওয়ামী লীগের মতো নিকৃষ্ট দলকে আপনারা ভোট দিবেন না। বাই; বাই; বাংলাদেশ, আপনারা অনেক সুখে থাকবেন আওয়ামী লীগকে নিয়ে। এ দেশের জন্য আমি প্রযোজ্য নাগরিক না, আমি ব্রিটিশ, আই বর্ন ইন ইংল্যান্ড, আই রিটার্ন টু মাই কান্ট্রি।’