হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএসএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
জামায়াত নেতা সাঈদী আশির দশকে ‘ওয়াজ মাহফিল’-এর বক্তা হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। তার জন্মস্থান পিরোজপুরের জিয়ানগরের সাঈদখালি। সেখানে তার নাম ছিল দেলোয়ার শিকদার নামে। যা ছিল বংশগত নাম। পরে নাম পাল্টে সাঈদী নাম যুক্ত করেন তিনি।
শুরুতে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পর্ক স্বীকার না করেই বাংলাদেশ মানুষের মধ্যে ধর্মপ্রচারের নামে পরিচিতি বাড়াতে থাকেন। পরে তার নানা রাজনৈতিক মন্তব্য এবং জামায়াতে ইসলামীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রকাশ হলে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন এবং ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পর পর দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলে তাকেও বিচারের কাঠগড়ায় যেতে হয়। ২০১১
সালের ডিসেম্বরে সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পিরোজপুরে হত্যা, হত্যায় সহযোগিতা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ এবং ধর্মান্তরে বাধ্য করাসহ বিশটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সাজা হয় তার।
এছাড়াও অভিযোগে উঠে আসে, যুদ্ধ শুরু হলে আধা মিলিশিয়া রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছিলেন সাঈদী। বিশটি অভিযোগের মধ্যে আটটিতে দোষী সাব্যস্ত হন এই যুদ্ধাপরাধী। এর মধ্যে দুটি অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয় আদালত। পরে আপিল বিভাগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।
যে ২০টি অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা হয়
অভিযোগ-১
১৯৭১ সালের ৪ মে। শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সেদিন সকালে পিরোজপুর সদর থানার মধ্য মাসিমপুর বাসস্ট্যান্ডের পেছনে একদল মানুষের জমায়েতের খবর জানিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সেখানে নিয়ে আসে। সেখানে সাঈদী ২০ অজ্ঞাতনামা নিরস্ত্র ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে।
অভিযোগ-২
একইদিন (১৯৭১ সালের ৪ মে) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সাঈদী তার সহযোগীদের নিয়ে মাছিমপুর হিন্দুপাড়ায় চড়াও হয়ে ঘরবাড়ি লুট করে আগুন লাগিয়ে দেয়। ভীতসন্ত্রস্ত নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ পালাতে শুরু করলে প্রকাশ্যে তাদের ওপর সাঈদীর দলবল এলোপাথাড়ি গুলি করে। এতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। যাদের মধ্যে রয়েছেন- শরৎ চন্দ্র মণ্ডল, বিজয় মিস্ত্রী, উপেন্দ্রনাথ, যোগেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি, সুরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী, মতিলাল মিস্ত্রী, যজ্ঞেশ্বর মণ্ডল, সুরেশ মণ্ডলসহ আরও অজ্ঞাতনামা ৫ ব্যক্তি।
অভিযোগ-৩
একই দিনে (১৯৭১ সালের ৪ মে) সাঈদীর নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল মাছিমপুর হিন্দু পাড়ায় গিয়ে মনীন্দ্র পসারী ও সুরেশচন্দ্র মণ্ডলের বাড়ি লুট করে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। এরপর সাঈদী সরাসরি নিজে বিভিন্ন গ্রামে রাস্তা পাশের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ ঘটান। গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে- কালিবাড়ি, মাছিমপুর, পালপাড়া, শিকারপুর, রাজারহাট, কুকারপাড়া, ডুমুরতলা, কালামতলা, নওয়াবপুর, আলমকুঠি, ডুকিগাথি, পারেরহাট এবং চিংড়াখালি। ধর্মীয় কারণে নিরস্ত্র মানুষের ওপর এই হামলা চালানো হয়।
অভিযোগ-৪
একইদিনে (১৯৭১ সালের ৪ মে) পরিকল্পিতভাবে সাঈদী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে নিয়ে সদর থানার এলজিইডি ভবনের পেছনে ও ধোপাবাড়ির সামনে হিন্দুপাড়া ঘিরে ফেলে। হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংসের জন্য তারা নির্বিচারে অজ্ঞাতনামা হিন্দু বেসামরিক মানুষের ওপর গুলি করে। ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে বন্দুকের গুলিতে হত্যা করা হয় দেবেন্দ্রনাথ মণ্ডল, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, পুলিন বিহারী ও মুকুন্দ বালাকে।
অভিযোগ-৫
স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পিরোজপুরের তৎকালীন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাইফ মিজানুর রহমান সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। এটা জানার পর তাকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয় সাঈদী। সাঈদী ও তার সহযোগী শান্তিকমিটির সদস্য মন্নাফ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনাসদস্যকে নিয়ে ৫ মে দুপুরে সামরিক যানে করে পিরোজপুর হাসপাতাল যান, যেখানে মিজানুর রহমান লুকিয়ে ছিলেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে সাঈদীর দলে একজন মিজানুর রহমানকে চিনিয়ে দিলে তাকে নিয়ে বলেশ্বর নদের তীরে যান। একই দিনে পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ (লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালের বাবা) এবং ভারপ্রাপ্ত এসডিও আবদুর রাজ্জাককেও কর্মস্থল থেকে ধরে সেখানে নিয়ে আসা হয়। খুনে বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে সাঈদীর উপস্থিতিতে এ তিন বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তাকে গুলি করে লাশ বলেশ্বর নদে ফেলে দেওয়া হয়। সাঈদী সরাসরি এই তিন ব্যক্তির অপহরণ, হত্যায় অংশ নিয়েছে, যা একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ।
অভিযোগ-৬
৭ মে সাঈদীর নেতৃত্বে একদল শান্তি কমিটির সদস্য পিরোজপুর সদরের পারেরহাটে গিয়ে পাকিস্তানি আর্মিকে ওই এলাকায় স্বাগত জানান। তাদের পারেরহাট বাজারে নিয়ে এসে সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষদের বাড়িঘর ও দোকানপাট চিনিয়ে দেন সাঈদী। পরে সাঈদী অন্যান্যদের সাথে এ সকল বাড়ি ও দোকানে হানা দিয়ে মূল্যবান সম্পদ লুট করে। যার মধ্যে সেখানে মুকুন্দ লাল সাহার দোকান থেকে বাইশ সের স্বর্ণ ও রৌপ্যও লুট করেন সাঈদী।
অভিযোগ-৭
৮ মে বেলা দেড়টায় সাঈদী সশস্ত্র সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সদর থানার ভাদুরিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম খানের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম সেলিমের বাড়িতে হানা দেন। সেখানে নুরুল ইসলাম খানকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসাবে চিনিয়ে দেন সাঈদী। পরে তিনি তাকে আটক করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেন। যারা তাকে নির্যাতন করে। বাড়ি লুটপাট করার পর যাওয়ার পূর্বে আগুন লাগিয়ে বাড়িটাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়।
অভিযোগ-৮
একইদিন (৮ মে ১৯৭১) বেলা ৩টায় সাঈদীর নেতৃত্বে তার সাঙ্গপাঙ্গরা পাক বাহিনীর সহায়তায় সদর থানার চিতলিয়া গ্রামের মানিক পসারীর বাড়িতে হানা দিয়ে তার ভাই মফিজ উদ্দিন এবং ইব্রাহিমকেসহ দুই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে পাঁচটি বাড়িতে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেনা ক্যাম্পে ফেরার পথে সাঈদীর প্ররোচনায় ইব্রাহিমকে হত্যা করে লাশ ব্রিজের কাছে ফেলে দেয়া হয়। মফিজকে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে সাঈদী ও অন্যদের আগুনে পারের হাট বন্দরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সাঈদী সরাসরি অপহরণ, খুন, যন্ত্রণাদানের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন।
অভিযোগ-৯
১৯৭১ সালের ২ জুন সকাল নয়টার দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে তার সশস্ত্র সহযোগীরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইন্দুরকানি থানার নলবুনিয়া গ্রামের আবদুল হালিম বাবুলের বাড়িতে হানা দিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট এবং বাড়ি আগুনে ছাই করে দেয়।
অভিযোগ-১০
একইদিন (১৯৭১ সালের ২ জুন) সকাল ১০টার দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে তার সশস্ত্র সহযোগীরা ইন্দুরকানি থানার উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ার হানা দিয়ে ২৫টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। যার মধ্যে চিত্তরঞ্জন তালুকদার, হরেণ ঠাকুর, অনিল মণ্ডল, বিসাবালি, সুকাবালি, সতিশবালা। সাঈদীর ইন্ধনে তার সহযোগীরা বিসাবালীকে নারকেলগাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। বেসামরিক মানুষের বসবাসের বাড়িতে আগুন দেয়া নিপীড়নের শামিল।
অভিযোগ-১১
২ জুন সাঈদীর নেতৃত্বে শান্তি কমিটি ইন্দুরকানি থানার টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে যায়। সেখানে সাঈদী মাহাবুবুলের বড় ভাই আবদুল মজিদ হাওলাদারকে ধরে নির্যাতন করে। এরপর সাঈদী নগদ টাকা, অলঙ্কারাদি ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে যায়।
অভিযোগ-১২
স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সাঈদীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্র দল পারেরহাট বাজারের হিন্দুপাড়ায় গিয়ে ১৪ জন হিন্দুকে ধরে এক দড়িতে বেঁধে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে তাদের হত্যা করে লাল নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
অভিযোগ-১৩
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই-তিন মাস পর এক রাতে সাঈদীর নেতৃত্বে শান্তি কমিটির সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে সদর থানার নলবুনিয়া গ্রামের আজহার আলীর বাড়িতে হানা দেয়। সেখানে আজহার আলী ও তার ছেলে সাহেব আলীকে ধরে নির্যাতন করা হয়। পরে সাহেব আলীকে অপহরণ করে সাঈদী, যার লাশ ফেলে দেয়া হয় নদীতে।
অভিযোগ-১৪
মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে এক সকালে সাঈদীর নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি রাজাকার বাহিনী সদর থানার হোগলাবুনিয়ার হিন্দুপাড়া আক্রমণ করে। সেখানে শেফালী ঘরামি ও মধুসুদন ঘরামি ছাড়া বাকিরা সবাই পালিয়ে যায়। তখন রাজাকার বাহিনীর কিছু সদস্য শেফালী ঘরামির ঘরে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। দলনেতা হওয়া সত্ত্বেও সাঈদী এই ধর্ষণে বাধা দেননি। পরে তারা এই হিন্দুপাড়ার ঘরে আগুন দিয়ে দেয়।
অভিযোগ-১৫
মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের রাজাকার দল হোগলাবুনিয়া গ্রামের তরণী শিকদার, নির্মল শিকদার, শ্যামকান্ত শিকদার, বাণীকান্ত শিকদার, হরলাল শিকদার, প্রকাশ শিকদারসহ ১০ জন হিন্দু নাগরিককে ধরে নিয়ে যায়। এদেরকে তুলে দেয়া হয় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে, যারা এদেরকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
অভিযোগ-১৬
স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সাঈদীর নেতৃত্বে ১০-১২ জন সশস্ত্র রাজাকার দল পারেরহাট বন্দরের গৌরাঙ্গ সাহার বাড়ি থেকে তাঁর তিন বোনকে অপহরণ করে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেয়। সেখানে তাদেরকে আটকে রেখে তিন দিন ধরে ধর্ষণ করে পরে ছেড়ে দেয়।
অভিযোগ-১৭
সাঈদী ও তাঁর নেতৃত্বের সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পারেরহাটের বিপ্লব সাহার মেয়েকে তাঁর বাড়িতে আটকে রাখে। তারা ওই বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত তাকে ধর্ষণ করত।
অভিযোগ-১৮
ভাগিরথি নামে এক নারী পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে কাজ করতেন। পাকিস্তানি বাহিনী সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দেওয়ার অভিযোগে সাঈদী তাকেও আটক করে নির্যাতন করেন। পরে তাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ-১৯
স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সাঈদী জোর করে মধুসুদন ঘরামী, কৃষ্ট সাহা, ডা. গণেশ সাহা, অজিত কুমার শীল, বিপদ সাহা, নারায়ণ সাহা, গৌরাঙ্গ পাল, সুনীল পাল, নারায়ণ পাল, অমূল্য হাওলাদার, শান্তি রায়, হরি রায় জুরান, ফকির দাস, টোনা দাস, গৌরাঙ্গ সাহা, হরিদাস, গৌরাঙ্গ সাহার মা ও তিন বোন মহামায়া, অন্যরাণী ও কামাল রাণীসহ ১০০/১৫০ জন হিন্দুকে ধর্মান্তর করেন।
অভিযোগ ২০
নভেম্বর মাসের শেষের দিকে সাঈদী সংবাদ পান যে, হাজার খানেক মানুষ জীবন বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যাচ্ছে। এরমধ্যে একদিন সাঈদীর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে ইন্দুরকানি গ্রামের তালুকদার বাড়িতে হামলা করে ৮৫ ব্যক্তিকে আটক করে। সেখানে ব্যাপক লুটপাট চালায়। পরে আটককৃতদের নিয়ে আসা হয় স্থানীয় রাজাকার ক্যাম্পে। সেখান থেকে ফজলুল হক নামে এক রাজাকারের মধ্যস্থতায় ঘুষের বিনিময়ে ১০-১২ জন ছাড়া বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখানে আটক পুরুষদের নির্যাতন এবং খগেন্দ্রনাথ সাহার মেয়ে দীপালি, স্ত্রী নিভারাণী, রাজবল্লভ সাহার মেয়ে মায়ারাণীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়, যারা ক্যাম্পে ধর্ষণের শিকার হন।