তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি খাইরুল হকের বিরুদ্ধে মামলা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১৮, ২০২৪, ০২:১২ পিএম

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি খাইরুল হকের বিরুদ্ধে মামলা

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক। ছবি: সংগৃহীত

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিচারক হিসেবে দুর্নীতি, বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে রোববার (১৮ আগস্ট) শাহবাগ থানায় ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধান সম্মত ও বৈধ। এই সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কোনও কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি

এর আগে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া রায় পরিবর্তনের জন্য প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলার আবেদন করা হয়।

এদিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ বিথির আদালতে এই মামলার আবেদন করেন ইমরুল হাসান নামে একজন আইনজীবী। তবে এদিন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান আদালত।

মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে সংযোজন করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। এরপর থেকেই নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে গঠিত হচ্ছিল পরবর্তী সরকার। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজনের রিট আবেদন করলে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে রায় দেন। রায়ে বলা হয়, “ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধান সম্মত ও বৈধ। এই সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কোনও কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।”

ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারী আপিল করলে ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে এর শুনানি শুরু হয়। আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়া শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শীর্ষস্থানীয় আটজন আইনজীবী বক্তব্য দিয়েছেন। এর মধ্যে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম ও রোকনউদ্দিন মাহমুদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহালের পক্ষে মত দেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য আমলে না নিয়ে এ বি এম খায়রুল হক তার চাকরির মেয়াদের শেষদিকে তড়িঘড়ি করে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল।

২০১২ সালের ১৭ মে এ বি এম খায়রুল হক অবসর গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে তিনি ওই আপিল মামলার নথি বাসায় নিয়ে যান, যা বেআইনি। রায় দেওয়ার ১৬ মাস ৩ দিন পর ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় করেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রাখলেও প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে গিয়ে রায় ঘোষণার ১৬ মাস ৩ দিন পর যে রায় প্রকাশ করেন সেখানে তিনি এই অংশ রাখেননি। অসাধুভাবে প্রধান বিচারপতির পদ ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাস ভঙ্গ ও জালিয়াতির মাধ্যমে এই রায় দেন তিনি।

Link copied!