বেটা
ছবি: সংগৃহীত
দুই বছর আট মাস বয়সী শিশুটি তার ভারতীয় মায়ের কাছে থাকবে। তবে তার বাবা সপ্তাহে তিন দিন নিয়ে যেতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রায় দুই বছর পর সন্তানকে ফিরে পেলেন মা সাদিকা শেখ।
শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শিশুটির বাবা সানিউর টি আই এম নবীকে পাসপোর্ট জমা রাখার শর্তে জামিন দিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ সোমবার (৬ নভেম্বর) এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশ না মেনে শিশুটিকে নিয়ে দেশত্যাগ করায় আদালত অবমাননার মামলায় ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর এক আদেশে হাইকোর্ট সানিউরকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন।
আইনজীবীর তথ্যমতে, শিশুটিসহ গত অক্টোবরে দেশে ফেরেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক সানিউর। ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করলে গত ২৩ অক্টোবর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। আত্মসমর্পণের পর হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে আপিল বিভাগে জামিন চান তিনি।
আবেদনটি (১ নভেম্বর ) শুনানির জন্য আপিল বিভাগে ওঠে। শিশুটিকে মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে কি না, সেদিন জানতে চান আদালত। কিন্তু ৬ নভেম্বর শুনানির দিন রাখায় এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়। দাদি ও ফুফুর সাথে সকালে আদালতে আসে শিশুটি। এ সময় শিশুটির মাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। অন্যদিকে বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাসুদ রেজা সোবহান। আর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
শুনানিতে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, শিশুটিকে নিয়ে আসা হয়েছে। এত দিন বাবার কাছে ছিল। আজ সকালে মায়ের কাছে দেওয়া হয়েছে। জামিনে (শিশুটির বাবা) আপত্তি নেই। তবে শিশু মায়ের কাছে থাকবে।
শুনানি নিয়ে শিশুটির বাবার করা আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আদালত বলেন, শিশুটি তার মায়ের কাছে থাকবে। বাবা সপ্তাহে দুবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১ পর্যন্ত শিশুটিকে দেখতে পারবেন এবং সময় কাটাতে পারবে, তবে নিয়ে যেতে পারবেন না।
আদালতের অনুমতি ছাড়া শিশুটিকে দেশের বাইরে নেওয়া যাবে না। পারিবারিক আদালতে শিশুটির মায়ের করা মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সময়ের জন্য এ আদেশ দেওয়া হয়।
পরে শিশুটিকে নিয়ে আদালত কক্ষ থেকে বের হন সাদিকা। এ সময় তিনি প্রতিবেদনে বলেন, ‘ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না। দুই বছর পর আজ ওকে পেয়েছি, তাতে আমি খুব খুশি। এখন ওর বয়স পাঁচ বছর।’
সেদিন শুনানি শেষে অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া বলেন, ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে হায়দরাবাদের সাদিকা শেখ নামে এক নারীকে পছন্দ করেন বারিধারার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। মেয়েটিও হায়দরাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান।
২০১৭ সালে হায়দরাবাদে তাদের বিয়ের পর মালয়েশিয়ায় বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় এসে থাকতে শুরু করেন ওই দম্পতি। ২০১৮ সালে এই দম্পতির ছেলেসন্তান হয়। সানিউরের বিরুদ্ধে সাদিকাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। সাদিকা ও শিশুটি তখন সানিউরের বাসায় ছিল।
মারধরের বিষয়টি জানাজানির পর সন্তানসহ সাদিকাকে আটক রাখা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ২০২১ সালের ৮ আগস্ট রিট করেন। সানিউর ওই বছরের ১১ আগস্ট সাদিকাকে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ পাঠান।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৯ আগস্ট হাইকোর্ট আদেশ দেন। ২৬ আগস্ট মাসহ শিশুকে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাজিরের পর সেদিন আদালত শিশুকে মায়ের কাছে দিয়ে বাবাকে সপ্তাহে তিন দিন দেখা করার সুযোগ দেন।
হাইকোর্টের আদেশের পর সানিউরের খরচে গুলশান ক্লাবে শিশুটিসহ সাদিকার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সানিউর সপ্তাহে তিন দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। তবে ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর সানিউর শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার পর আর ফেরত দেননি।
বিষয়টি জানানো হলে হাইকোর্ট শিশুটিকে রিট আবেদনকারীদের আইনজীবীর চেম্বারে মায়ের কাছে হস্তান্তর করতে বলেন। এরপরও শিশুটিকে হাজির না করার বিষয়টি জানানোর পর ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর হাইকোর্ট শিশুটিকে নিয়ে সানিউরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন।
শিশু ও সানিউরকে ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর আদালতে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অনুসারে ২১ নভেম্বর পুলিশ জানায়, শিশুটিকে নিয়ে ১৬ নভেম্বর সকালে তার বাবা দেশত্যাগ করেছেন।
২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্ট সানিউরের বাংলাদেশি পাসপোর্টের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। একই সাথে শিশুটি নিখোঁজ হয়েছে বলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতেও বলা হয়। এ ছাড়া আদালতের আদেশ সত্ত্বেও শিশুকে নিয়ে দেশ ত্যাগ করায় সানিউরের প্রতি আদালত অবমাননার রুল দেওয়া হয়।
এরপর ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট আদেশে দেন। আদালতের আদেশ না মেনে তিন বছর বয়সী শিশুসন্তানকে নিয়ে দেশত্যাগ করা সানিউরকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন হাইকোর্ট। জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করলে সানিউরকে আরও এক মাস কারাভোগ করতে হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
শিশুটির মায়ের আইনজীবী কাজী মারুফুল আলম আজ বিকেলে এক প্রতিবেদনে বলেন, মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের তত্ত্বাবধানে এখন শিশুটি ও তার মা সাদিকা বনানীর একটি বাসায় আছেন।
-20240503123538.jpg)
