বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নিয়োগ পেতে সিভিতে পুতুলের ‘মিথ্যা’ তথ্য, দুদকের দুই মামলা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২০, ২০২৫, ০৬:৫৮ পিএম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নিয়োগ পেতে সিভিতে পুতুলের ‘মিথ্যা’ তথ্য, দুদকের দুই মামলা

ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

‘দুর্নীতি ও প্রতারণার’ মাধ্যমে সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য ৩৩ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের অভিযোগে এ দুটি মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ কমিশনের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক মামলা দুটি করেছেন বলে জানিয়েছেন সংস্থার উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম।

এক মামলায় পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভ করে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়, তিনি এ পদে নিয়োগ লাভের উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ২০২৩ সালে জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) পাঠান।

এজাহারে বলা হয়েছে, সিভিতে তিনি তখনকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ’র শিক্ষকতা বা শিক্ষা ম্যানুয়েল রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, অটিজম এবং মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার কথা তুলে ধরেন। দায়িত্ব পালনের এই যোগ্যতা অন্তর্ভুক্ত করায় তার সিভি সমৃদ্ধ হয়, যার ফলে আঞ্চলিক পরিচালক পদে ‘নিয়োগের পথ সুগম’ হয়।

কিন্তু অনুসন্ধানে ‘জালিয়াতির মাধ্যমে’ পুতুল সিভিতে ‘মিথ্যা ও ভুয়া যোগ্যতা’ অন্তর্ভুক্ত করেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছে দুদক।

এ মামলায় পুতুলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৮/৪৭১ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

তার আগে অনুসন্ধানের বরাতে দুদক বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মনোনয়নকালে পুতুল কানাডার পাসপোর্টধারী তথা কানাডার নাগরিক ছিলেন। ভারতে সংস্থার আঞ্চলিক দপ্তরে কর্মরত থাকা পুতুলকে সরানোর পদক্ষেপ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল দুদক।

তার আগে ‘তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে পুতুলের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

১২ জানুয়ারি করা এই মামলায় পুতুল, শেখ হাসিনাসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। ক্ষমতায় পালাবদলের পর ওই মামলায় পুতুলকে প্রথম আসামি করা হয়।

দুদক কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন, দুই মামলার মধ্যে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে’ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এর সদস্যভুক্ত ব্যাংকগুলোর সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি) তহবিল থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা গ্রহণের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৪ সালে গড়ে ওঠা সূচনা ফাউন্ডেশন মানসিক ও স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে।

এ মামলায় সূচনা ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারপারসন পুতুলের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি এর সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকেও আসামি করা হয়েছে বলে দুদক কর্মকর্তা তুলে ধরে ধরেন।

তিনি বলেন, আরেক মামলায় পুতুলের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও জালিয়াতির’ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ লাভের অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুতুল ও নজরুল মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, তারা পরস্পর ‘যোগসাজশে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে’ ব্যাংকগুলোর সিএসআর ফান্ড থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকা দিতে চাপ দেন। এর ফলে ২০১৭ সালের মে মাসে ২০টি ব্যাংক ‘বাধ্য হয়ে’ তাদের সিএসআর খাত থেকে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা সূচনা ফাউন্ডেশনে দেয়।

এই অর্থ কীভাবে এবং কোন খাতে খরচ করা হয়েছে তা জানার জন্য অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সূচনা ফাউন্ডেশনে দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হলেও কোনো রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। দুদকের অভিযানেও প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

ভুয়া রেকর্ডপত্রের মাধ্যমে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়ার দাবি করা হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেরে এই তহবিল (সিএসআর ফান্ড) অপব্যয় ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

Link copied!