ফোনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন অভিযোগ নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে গিয়েছেন সদ্য কারামুক্ত বিএনপি নেতা ও পরবর্তীতে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া শাহজাহান ওমর।
বুধবার দুপুরে শাহজাহান ওমরের ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে ‘সাইবার বুলিংয়ের’ অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।
ডিবিপ্রধান জানান, ‘আর দশজন মানুষের মতো শাহজাহান ওমরও আমাদের এখানে এসেছেন তার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার ব্যাপারে অভিযোগ দিতে। তাকে নানা মাধ্যমে সাইবার হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা তার অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
ডিবি কার্যালয়ে আসা ও অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘আপনারা জানেন, আগে আমি বিএনপি করতাম। এরপরে ব্যক্তিগত কারণে আওয়ামী লীগে যোগ। আমি একজন সাবেক সংসদ সদস্য। আমি ইদানিং বিভিন্নভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছি। বিভিন্ন মানুষ আমাকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে। মাঝে মাঝে ফোনে আমাকে না পেয়ে আমার মেয়ের ফোনে, স্ত্রীর ফোনে, ছেলে ও আমার জুনিয়র আইনজীবীর ফোনে, এমনকি আমার বন্ধুবান্ধবের ফোনেও কল করে আজেবাজে কথা বলে। আমি যদি কল ব্যাক করি তাহলে কেটে দেয়। এ জন্যই আমি ডিবি অফিসে হারুন সাহেবকে জানাতে আসলাম, ভাই আমি সাইবার বুলিংয়ের শিকার।’
কারা বুলিং করছে জানা গেছে কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা তো তারা (পুলিশ) খুঁজে বের করবে।’ তবে শুধু ফোন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, প্রকাশ্যেও তাকে হেনস্থা করা হচ্ছে। আদালতেও কতিপয় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা তাকে হেনস্তা করেছেন বলে অভিযোগ সাবেক এই সংসদ সদস্যের।
সম্প্রতি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না না এটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং। আমি আগে বিএনপি করতাম তো। অনেক দিন পরে এলাকায় গিয়েছিলাম। বিএনপির অনেক লোক আমার সাথে সাথে গেল, আওয়ামী লীগ যারা... এখন তো বিএনপি-আওয়ামী লীগ নাই আমার এলাকায়। আমরা সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছি ওখানে। আমার লাইসেন্স করা পিস্তল আছে আপনারা জানেন হয়তোবা। সেইটা আমার সাথে ছিল এবং সেইটা আমি অফিসে রেখে চলে আসছি। ইটস এ মিসটেক, অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি। আমার এক লোক সেইটা হাতে হাতে নিয়া গেছে। ওখানে কোনো ফর্মাল মিটিংও ছিল না, কোনো সভাপতি ছিল না, কেউ বক্তব্যও রাখে নাই।’
ইলেকশন কমিশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এটা রং ইনফরমেশন। নির্বাচনী আচরণবিধি আমার কাছে ছিল না, আমি সেটা আনতে গিয়েছিলাম। এখন দেখেন, আপনি আমার ছবি তুলতেই পারেন। কিন্তু বলতে হয় না- ভাই, আপনার একটা ছবি তুলি? এটুকু তো আমি অন্তত আশা করতেই পারি। জানালার ফাঁক দিয়ে ছবি তোলে। আমি বলেছি যে, আপনে এই কাম করেন কেন? আপনি সামনে আসেন। আমাকে বলেন যে, ভাই আপনার একটা ছবি তুলব। অসুবিধা কী? সাংবাদিক হিসেবে আপনারা ছবি তুলতেই পারেন, কথা বলতেই পারেন। কিন্তু এরকম লুকিয়ে লুকিয়ে কেন করেন ভাই? ছবি তোলার আগে আমার পারমিশন নেন। তারপর দশবার তোলেন আমার আপত্তি নাই। ওপাশ থেকে বলা হলো- আপনি ঝাড়ি দিয়ে কথা বলেন। তখন আমি বললাম ঝাড়ি দিলাম কই? আপনারা আমার সঙ্গে সৌজন্যতা দেখান আমিও দেখাব।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে আপনি দুঃখপ্রকাশ করবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নো ব্রাদার, সাংবাদিকদের সঙ্গে আমি কোনো দুর্ব্যবহার করিনি। খুবই সদাচরণ করেছি।’
ডিবি কার্যালয়ে আসার আগে শাহজাহান ওমর সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে সাক্ষাৎ পাননি এমন খবর শোনা যাচ্ছে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘নো, বুঝছেন। আমি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। আইনজীবীদের বার কাউন্সিলে সদস্য হতে হয়। গত ১০-১২ বছর বাই মিসটেক সদস্যপদটা আমি রিনিউ করিনি। কিছু চাঁদা দিতে হয় বার কাউন্সিলে প্রতিবছর। এটা আমার জুনিয়ররাও বলে নাই, ক্লার্কও বলে নাই। এগুলো যখন করতে গেলাম তখন আমাকে বলা হলো রেজিস্টার সাহেবের থেকে একটা ফর্ম আনেন। আমি গেছিলাম। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের কাছে আমার যাওয়াটা সাজে না, তাছাড়া পলিটিক্যাল বিষয়ে তার কাছে কেন যাব?’