‘কেএনএফ’ প্রধানকে ঢাকায় বাসা ঠিক করে দেন ‘শারক্বীয়া’র আমির

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ২৪, ২০২৩, ০৩:০৩ পিএম

‘কেএনএফ’ প্রধানকে ঢাকায় বাসা ঠিক করে দেন ‘শারক্বীয়া’র আমির

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার আল ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির মো. আনিসুর রহমান মাহমুদ। ছবি: র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টার

পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান লনচেও বম গত বছরের শুরু  থেকে ৮ মাস ভাড়া বাসায় রাজধানীর বাসাবোতে ছিলেন। তবে ওই বছরের অক্টোবরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে অভিযান শুরু করলে কেএনএফ প্রধান আত্মগোপনে চলে যান। ঢাকায় থাকার সময় বাসা ভাড়া ঠিক করে দেওয়াসহ সব ধরণের সহযোগিতা করেছেন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার আল ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির মো. আনিসুর রহমান মাহমুদ।  মাহমুদকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব এসব তথ্য জানতে পেরেছে।

সোমবার (২৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈনএসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফীল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আমীর মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদী বই ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। অন্য  দুইজন হলেন-কাজী সরাজ উদ্দিন ওরফে সিরাজ ও মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। আনিসুর রহমান জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলেনে আরও বলা হয়, বান্দরবানে আসলাম নামক এক ব্যক্তির কাছে প্রায় এক মাস সামরিক বিভিন্ন কৌশল, অস্ত্র চালনা, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন আমির আনিসুর রহমান। পরে কুমিল্লার প্রতাপপুরে তার বাড়িসহ জমি এক ব্যক্তির কাছে ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন এবং তিনি জমি বিক্রির কিছু টাকা সংগঠনে দেন।  অবশিষ্ট টাকা দিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে সাড়ে ৩ বিঘা জমি ক্রয় করে ওই বছরই সেখানে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং পোল্ট্রি ফার্ম, চাষাবাদ ও গবাদি পশুর খামার পরিচালনা করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আনিসুরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার পূর্বের আমির ছিলেন মাইনুল ইসলাম রক্সি। ২০২১ সালে রক্সি গ্রেপ্তার হলে সংগঠনের অন্যান্য সূরা সদস্য ও সদস্যদের সিদ্ধান্তে মাহমুদকে আমির হিসেবে নির্বাচন করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থানের সময় তার সাথে ‘কেএনএফ’ সদস্যদের পরিচয় হয় এবং ‘কেএনএফ’ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুং এর সাথে সুসম্পর্ক তৈরি হয়।

পরবর্তীতে ২০২১ সালে ‘কেএনএফ’ এর ছত্রছায়ায় বান্দরবানের গহীন পাহাড়ে জামাতুল আনসারের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে তাদের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী কেএনএফ ২০২৩ সাল পর্যন্ত জামাতুল আনসারের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করবে এবং প্রতি মাসে ‘কেএনএফ’ সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও খাবার খরচ বাবদ ৩-৪ লাখ টাকা বহন করা হতো। মাহমুদের নির্দেশনায় দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হতো। সংগ্রহকৃত অর্থ দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের খরচ ও সারাদেশে অন্যান্য সাংগঠনিক কাজের জন্য অর্থ প্রদান করা হতো। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মাহমুদের সাথে আনসার আল ইসলামের নেতাদের সম্পর্ক ছিল। শীর্ষ জঙ্গি জিয়ার সাথে তার বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল। ২০২২ সালে কিশোরগঞ্জে আনসার আল ইসলামের সাথে একটি মিটিংয়ে মাহমুদের সাথে আনসার আল ইসলামের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত ও মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করে এবং পরবর্তীতে আরও টাকা প্রদান করবে বলে জানা যায়। চুক্তি অনুযায়ী জামাতুল আনসারের সদস্যদের আনসার আল ইসলাম আইটি ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। বিনিময়ে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জামাতুল আনসার পার্বত্য অঞ্চলে অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করবে বলে জানা যায়। 

এ বিষয়ে মাহমুদ ‘কেএনএফ’ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুং এর সাথে বৈঠক করে আনসার আল ইসলামের সাথে চুক্তির বিষয়ে অবহিত করেন ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় করেন। 

নিরাপত্তার জন্য নুতন জঙ্গি সংগঠনপ্রধান সবসময় তার সাথে ২ জন সশস্ত্র দেহরক্ষী রাখতেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানোনো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ২০২২ সালের শুরু থেকে আট মাস রাজধানী ঢাকার বাসাবোর একটি বাসায় ভাড়া থেকেছেন পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান লনচেও বম। জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার আল ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির মো. আনিসুর রহমান মাহমুদ কুকি-চিন প্রধানকে মাস প্রতি ২০ হাজায় টাকায় বাসাটি ভাড়া করে দেন। আর নাথান বমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল আমিরের।

Link copied!