মাত্রাতিরিক্ত ঘুম: যেন লোভনীয় এক মৃত্যুফাঁদ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ৮, ২০২১, ০৫:৩৮ পিএম

মাত্রাতিরিক্ত ঘুম: যেন লোভনীয় এক মৃত্যুফাঁদ

কে না জানে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আমাদের গতি কমে যায়। কাজের ক্ষিপ্রতা হারিয়ে যায়। কিন্তু এই ঘুমই যদি আবার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন আপনার বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলতে পারে। হয়ত বলবেন, করোনাকাল বড্ড ঘুমকাতুরে করে তুলেছে আমাদের। তবু এই দোহাই আর নয়; মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ছোবলে আপনার ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ এমনকি কম বয়সে মৃত্যুঝুঁকিও কাঁধে চেপে বসতে পারে।

কে কতক্ষণ ঘুমাবেন?

পরিবারের ছোট সদস্যটির বয়স যদি সাত কিংবা আটের ঘরে থাকে, তবে তার সাত কিংবা আট ঘণ্টা ঘুমানোই উচিত। আর একেবারে শিশুদের। মানে দুনিয়ার আলো-বাতাস যারা দু-চার দিন আগে গায়ে মাখল, তাদের দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেওয়াটাই স্বাভাবিক।

তাছাড়া বাসার যেই দুষ্টুটা স্কুলে যাবে যাবে করছে, তার ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুম দরকার পড়েই। যারা স্কুলের পথ ধরেছে, তাদের ৯ ঘণ্টা না ঘুমালে যে স্কুলের বেঞ্চে নাক ডাকতে হয় সেটা সবারই জানা। আর তরুণ থেকে মধ্যবয়স পর্যন্ত যদি ৬ ঘণ্টার কোটা না পূরণ করতে পারেন, তবে আপনার নাক ডাকাও শুরু হয়ে যেতে পারে চলন্ত রিকশায়।

তবে আমরা এও জানি, অসুস্থ অবস্থায় কিংবা টেনশনে থাকলে উল্টো রথে চড়ে ঘুমের পারদ উপরে উঠতে থাকে। আপনি যদি ৪ ঘণ্টা ঘুমানোটাকে নিয়মে পরিণত করে নিতে পারেন, তবুও এই দাঁতাল দানব তার ছোবলে আপনাকে কাবু করতে পারবে বলে মনে হয় না।

যখন বেড়ে যায় ঘুমের মাত্রা

-মাঝেমধ্যে শরীর বা স্বাস্থ্যই আমাদের ঘুমের পিছু ছুটায়। ধরুন, আপনি যদি হাইপার সমনিয়াতে ভোগেন তবে সারাদিনই ঘুম ঘুম ভাব লেপ্টে থাকবে আপনার চেহারায়। এই ভাবটা কাটানো বড্ড দায়।

- আবার অনেকে আলসেমি করে বিছানা ছাড়তে চান না। যারা এই অভ্যাসে কাবু, তাদের কিন্তু খুব সহজেই শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

- অবস্ট্রাক্টিভ স্ট্রিপ ডিজঅর্ডার রোগটা যার ভেতর বাসা বাঁধে, সে কিন্তু ঘুমের মধ্যে স্বাভাবিক নিঃশ্বাস নিতে পারে না। এর ফলেও অতিরিক্ত ঘুম হতে পারে!

- যারা ঘুমকাতুরে, তারা আবার ভাববেন না যে, বেশি ঘুমানোই এসব রোগের কারণ। অন্য কারণও থাকতে পারে। তবে ঘুমকেই চিহ্নিত করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ছাড়া মাদকদ্রব্য, ঘুমের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অবসাদগ্রস্ততা আপনার ভেতর বাসা বাঁধলে অধিক ঘুমে তলাতে পারেন আপনি। তবে আলসেমি থেকে জন্ম নেওয়া ঘুম আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যেত পারে সহজেই।

অতিরিক্ত ঘুমের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিসমূহ

ডায়াবেটিস: এই রোগে আক্রান্ত প্রায় ৯ হাজার লোকের ওপর চালানো ইউএসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসের সঙ্গে অধিক ঘুমের সরাসরি একটা যোগসাজশ রয়েছে। তাছাড়া যারা ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের অর্ধেকই ৭ ঘণ্টা ঘুমানো লোকদের চেয়ে বেশি ডায়াবেটিস ঝুঁকিতে থাকেন।

মুটিয়ে যাওয়া: মাত্রাতিরিক্ত ঘুম মোটা হওয়ার অন্যতম কারণ। ৯ থেকে ১১ ঘণ্টার বেশি ঘুমালে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা ২০ ভাগ বেড়ে যায়। তবে এর সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস আর ব্যায়ামের ব্যাপারটাও জড়িত।

মাথাব্যথা: বেশি ঘুমানোই হতে পারে আপনার অতিরিক্ত মাথাব্যথার কারণ। দিনে বেশি ঘুমালে ব্রেইনের নিউরো-ট্রান্সমিটারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

কোমর ব্যথা: আগে বলা হতো মাথা নিচে থাকলে কোমর ব্যথা হতে পারে। কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঘুমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা।

অবসাদ: যদিও কম ঘুমকে অবসাদের কারণ ধরা হয়। কিন্তু ১৫ ভাগ মানুষ অবসাদে ভোগে অধিক ঘুমের জন্য।

হার্টের সমস্যা: যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯ থেকে ১১ ঘণ্টার বেশি ঘুমানো নারীর ৩৮ ভাগেরও বেশি হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকে। যদিও হৃদরোগের সঙ্গে অধিক ঘুমের সরাসরি কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

মৃত্যুঝুঁকি: অন্য গবেষণায় দেখা যায়, ৯ থেকে ১১ ঘণ্টার বেশি ঘুমানো মানুষের মৃত্যুহার বেশি।

এখনই টানুন ঘুমের লাগাম

আপনার অতিরিক্ত ঘুমের কারণ যদি হয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, তবে ওষুধের মাত্রা আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কমিয়ে নিন। ঘুমজনিত জটিল সমস্যা আরও হতে পারে যথাযথ মাত্রা থেকে উঁচু মাত্রায় ওষুধ নিলে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

 

Link copied!