চিত্তবিনোদনের জন্যে মানুষ অবসরে হরেক রকমের কাজ করে থাকে। কেউ বাগান করেন, কেউ ঘুরে বেড়ান দেশ-দেশান্তরে, আবার কারো কারো শখ গেমিংয়ের। কেউবা মাছ ধরেন, বই পড়েন আরও কত কী! তবে কারো কারো শখ এ শখগুলোর থেকে একটু ভিন্ন।তেমনি একটি শখ হলো প্রাচীন জিনিসপত্র সংগ্রহ বা এন্টিক কালেকশন। অনেকে এ জিনিসগুলো সংগ্রহ করে থাকেন ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরার প্রয়াস থেকে, আবার অনেকেই করে থাকেন শৌখিনতার বশবর্তী হয়ে। কেউ বা এসব সংগ্রহ করেন ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবে।
যারা ঐতিহ্যকে আঁকড়ে রাখতে চান তাদের অনেকের উদ্দেশ্য থাকে প্রাচীন সংস্কৃতির সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। একটা কুপির কথা ধরা যাক, কয়েক দশক আগেও আঁধার কাটাতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঘরে ঘরে জ্বলে উঠত কুপিবাতি। তবে বৈদ্যুতিক বাতির প্রভাবে হারিয়ে গিয়েছে এক সময় নিত্য প্রয়োজনীয় এ জিনিসটি। কিন্তু রয়ে গিয়েছে অনেক সংগ্রাহকের সংগ্রহশালায়। তারা সেগুলো সযত্নে তুলে রেখেছেন নতুন প্রজন্মকে সেগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবেন বলে। শুধু কুপি নয়, এমন ছোট ছোট অনেক জিনিসই তারা সংগ্রহে রাখেন এ উদ্দেশ্যে।
সেকেলে জিনিসগুলো যে শুধু পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখে তা কিন্তু নয়, পাশাপাশি ঘরের শ্রী বৃদ্ধি করতেও এর জুড়ি মেলা ভার। তাই অনেকেই নিজের ড্রয়িং রুম সাজাতে ব্যবহার করেন বিলুপ্ত জিনিসগুলো। পুরোনো টেলিফোন, গ্রামোফোন, কাঠের সিন্দুকের সাথে ধাতব বিভিন্ন জিনিসের সমন্বয়ে সাজানো ঘর যে কাউকে বিমোহিত করতে বাধ্য।
যে সব জিনিস থাকে সংগ্রাহকদের পছন্দের তালিকায়:
সংগ্রাহকদের আকর্ষণ সেকেলে প্রতিটি জিনিসেই। তবে যে জিনিস যত বেশি পুরোনো, সে জিনিসে তত বেশি আগ্রহ থাকে তাদের। সাধারণত ধাতুর তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র, পুরান আমলের কয়েন, কাঠের বিভিন্ন আসবাব, পুরোনো টেলিফোন-রেডিও-টেলিভিশন,পুরোনো ঘড়ি, জাহাজের বিভিন্ন জিনিসপাতি এগুলোর প্রতি আগ্রহ দেখা যায় বেশি।
ধাতুর জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে কাসা ও পিতলের বাসন, মূর্তি, পুরাতন তালা, বিভিন্ন ধাতব গয়না, পুরাতন অস্ত্র, গ্রামোফোন ইত্যাদি। কাঠের আসবাবের মধ্যে রয়েছে পুরোনো পালংক, সদর দরজা, গয়নার বাক্স, সিন্দুক, আরাম কেদারা, জলচৌকি, আয়নাসহ আরও বিভিন্ন ধরনের জিনিস। পুরোনো জাহাজের কম্পাস এবং দূরবীনের প্রতিও বেশ আগ্রহ আছে সংগ্রাহকদের।
যেখানে মিলবে:
আপনার যদি প্রাচীন জিনিসপত্রের প্রতি আগ্রহ থেকে থাকে তাহলে আপনার গন্তব্য হতে পারে গুলশান ২ এর ডিসিসি মার্কেট। দোতলা এ মার্কেটে নিচ তলা ও ওপর তলা মিলে বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে যেখানে মিলবে আপনার পছন্দের জিনিসগুলো। এ দোকানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো– হালিম হ্যান্ডিক্রাফট, টিভলি আর্ট গ্যালারি, কাঁসা সেন্টার।
মার্কেটের পাশের রাস্তা থেকেই দোকানগুলোর বাইরে সাজিয়ে রাখা অনিন্দ্য সুন্দর কাঠ আর ধাতব জিনিসগুলো আপনাকে আকৃষ্ট করবে চুম্বকের মতো। এগিয়ে গিয়ে দোকানগুলোর ভেতরে ঢুকলেই মোহবিষ্ট থাকতে হবে বেশ কিছুক্ষণ। সেকেলে জিনিসপত্রের ভীড়ে মনে হতে পারে আপনি চলে গিয়েছেন শতবর্ষ পেছনে কিংবা তারও আগে!
এছাড়া হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিপরীতে অবস্থিত পরীবাগ মার্কেটেও রয়েছে এসব প্রাচীন জিনিসপত্রের দু-তিনটি দোকান। তবে ডিসিসি মার্কেটের মতো তেমন জৌলুস নেই দোকানগুলোতে। এখানকার সংগ্রহও গুলশানের থেকে বেশ কম।
শুধু দোকানে নয় অন্যান্য জিনিসের মতো এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও কেনা-বেচা হচ্ছে এসব প্রাচীন জিনিস। অনেক দোকানের রয়েছে ফেসবুক পেজ। তৈরি হয়েছে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপ। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য Antique shop Bangladesh (বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জিনিস সংগ্রহ ও প্রদর্শন), Antique collector in BD এবং Antiques, vintage and collectibles` cafe Bangladesh।
বাজার মূল্য:
ক্ষয়ে যাওয়া সেকেলে জিনিস মনে হলেও দুষ্প্রাপ্যতার কারণে এ জিনিসগুলোর দাম বেশ চড়া। আগেকার দিনের ঝাড় লণ্ঠনের দাম শুরুই হয় চার হাজার টাকা থেকে। কাঠের আসবাবগুলোর দাম নির্ভর করে এর কারুকার্যের ওপর। যে আসবাবের কারুকাজ যত সূক্ষ্ম তার দাম তত বেশি। কিছু কিছু কাঠের জিনিসের দাম লাখেরও ওপরে। গয়না বাক্সগুলোর দাম শুরু হয় হাজার থেকে।
ধাতব জিনিসগুলোর দামও নির্ভর করে কারুকার্যের ওপর। হাজার-বারোশ থেকে শুরু করে এসবের দাম কখনো কখনো বিশ হাজারও ছড়িয়ে যায়। পুরাতন দেয়াল ঘড়িগুলোর দামও বেশ চড়া,পাওয়া যায় আট থেকে দশ হাজারের মধ্যে ।
সেকেলে প্রতিটি জিনিসের দামই এমন শুনলে যেন চোখ ছানাবড়া হওয়া অবস্থা। আগ্রহ আর শৌখিনতার সাথে তাই এ জিনিসগুলো সংগ্রহের জন্য অর্থও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে দাম যেমনই হোক না কেন দুষ্প্রাপ্য কোন জিনিস হাতে পেতে লাখ লাখ টাকা খরচ করতেও কার্পণ্য করেন না এন্টিকপ্রেমীরা। ‘শখের দাম লাখ টাকা’ কথাটির বাস্তব উদাহরণই যেন তাদের এত টাকা খরচ করে সেকেলে জিনিসপাতি কেনাটা।
কেনার ক্ষেত্রে থাকতে হবে সাবধান:
প্রাচীন বলে বিক্রি করা জিনিসগুলোর প্রতিটি জিনিসই প্রাচীন নয়। অনেক নতুন জিনিস বানিয়ে পুরোনো জিনিসের রূপ দিয়ে সেগুলোকে পুরোনো বলে চালানোর চেষ্টা হয় অনেক সময়। পুরাতন ভাব নিয়ে আসার জন্য অনেক সময় মাটির নিচে পুঁতেও রাখা হয় এসব জিনিস। নকল এ জিনিসগুলো আসে মূলত ভারত ও চীন থেকে। এ জন্য কেনার সময় এসব ভালো করে পরখ করে দেখা উচিত।
অনলাইন কেনাকাটাতেও থাকতে হবে সাবধান। এখানে যেহেতু সরাসরি দেখে কেনার সুযোগ নেই তাই কেনার আগে বিক্রেতা বিশ্বাসযোগ্য কি না তা যাচাই করে নিতে হবে।