চলছে আষাঢ় মাস। ভারী বর্ষণে জল কাঁদা আর কদমের সুগন্ধে মেতেছে প্রকৃতি । এর মধ্যে কবি নজরুলের লাইনটা না বললেই যেন না
দোলে শিহরে কদম ,বিদরে কেয়া
নামিলো দেয়া।
সাধারণত বর্ষা নামার কয়েকদিন আগেই কদম ফুল ফুটে থাকে । এজন্য বোধকরি কদমকে বর্ষার আগমনী সংকেত বলা হয়। সরু সবুজ পাতার ডালে, গোলাকার মাংসের পুষ্পাধার আর সরু হলুদ পাপড়ির মুখে সাদা অংশ দিয়ে ঘেরা এই কদম ফুল । এই ফুল এতোটাই সুন্দর যে বর্ষার যুগলের প্রেমে এই কদমফুল থাকতেই হবে ।
রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় ছোট বাচ্চারা কদম ফুলের গুচ্ছ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিক্রি করা ফুলে চলে তাদের অসুস্থ বাবা-মায়ের সংসার। আর এই কদম ফুল বর্ষায় যুগলের প্রেম নিবেদনের আরেক নাম ।
তবে যুগলের এই প্রেমচ্ছটায়, খেয়ে ফেলছে পাখি এবং অন্যান্য প্রাণীর খাবার । প্রেম নিবেদন হোক কিন্তু তা পাখি বিলুপ্তির কারণ না হোক । গবেষকরা বলছেন আষাড়,শ্রাবণ এবং ভাদ্রমাসে অত্যাধিক বর্ষণে পাখিদের খাবার থাকে না। কারণ তখন গ্ৰীষ্মের মধুময় ফল শেষ হয়ে যায় ।বলতে গেলে খাবারের আকাল চলে । পাখ-পাখালি,বাদুড় ও কাঠবিড়ালীদের জন্য কদম তখন হয়ে ওঠে প্রধান খাবার। প্রকৃতিতে কদমের বীজ ছড়ানোর জন্য ওরাই প্রধান বাহন।
কদম সাধারণত তিনবার পুষ্পিত হয় । কদম গাছের ছাল জ্বরের ঔষধ হিসেবে উপকারী। কদমের রস কৃমিনাশক ঔষধ হিসেবে খাওয়া হয় ,ব্যাবহৃত হয় চর্মরোগের ঔষধ হিসেবে। ফুল থেকে বানানো পেস্ট মুখে মাখলে ত্বক উজ্জ্বল হয় কদম ফলের মাংস টক হয় ,তবে লিভার ভালো রাখতে এই ফলের জুড়ি নেই । ফল পাকলে অনেকেই এটা খেয়ে থাকেন । একটা কদম ফুলের প্রায় আট হাজার বীজ থাকে । একটা কদম ফুল নষ্ট হওয়া মানে আট হাজার গাছ নিধন করা হচ্ছে।
একটা সময় পুরান ঢাকায় কদম গাছের রুপছটা পাওয়া যেতো । কদমের রাস্তা হিসেবে পরিচিত ছিলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা । ছিলো হলুদ ,লাল কদমের গাছ । লাল কদম বিলুপ্ত হয়েছে বহু দিন আগেই ।
তবে হলুদ কদমের বিচরণ পাখি ব্যাতীত মানুষের কাছে চলতে থাকলে বিলুপ্তি হবে অচিরেই ।
কদমের কাঠ অর্থকরী না হওয়াতে গাছ রোপনে আগ্ৰহী না অনেকেই । কারণ কদমের কাঠ অর্থকরী না । তবে কদমের মন্ড দিয়ে তৈরি হয় কাগজ ,বই পুস্তক। পুরাণ মতে রয়েছে ধর্মীয় গুরুত্ব। কদম ফুল যেমন সুন্দর,তেমন আরাধ্য ও বটে । শ্রীকৃষ্ণ এবং বিষ্ণুর প্রিয় ছিলো এই কদম ফুল । কদম ফুল বাড়িতে থাকলে বাড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকে বলে বিশ্বাস অনেকের।
সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন সময়ে গাছ লাগাই। আমি আপনাদের অনুরোধ করবো,আপনারা যদি কদম গাছ লাগান এটা আমাদের পরিবেশের জন্য সহায়ক হবে । কদম ফুলের গাছে যে জৈবিক বিষয় রয়েছে ,তা মশা নিয়ন্ত্রণ করে। যদি সেখানে পাখি, ফিঙে পাখি বাসা বাঁধে, সেটাও মশা নিধনে সহায়ক ।
বর্তমানে ঢাকা শহরে কদম গাছের সংখ্যা খুবই কম । যদি স্বেচ্ছায় কদম গাছের রোপন নাহয় তবে বর্ষায় পাখি তো বিলুপ্ত হবেই , সঙ্গে পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা ভেস্তে যাবে ।