বাংলাদেশি মেয়েকে বিয়ে করলেন ভারতীয় নারী

আন্তর্জাতিক

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২, ১২:৪২ এএম

বাংলাদেশি মেয়েকে বিয়ে করলেন ভারতীয় নারী

ভারতের তামিল রীতি মেনে বাংলাদেশি মেয়ে টিনা দাসকে বিয়ে করলেন ভারতীয় নারী সুবিক্ষা সুব্রাহ্মণী। তারা দুজনই কানাডার ক্যালগরি শহরের বাসিন্দা। গত বুধবার চেন্নাইয়ে ধুমধামের সাথে তাদের বিয়ে হয়েছে।

সুবিক্ষা সুব্রাহ্মণী ও টিনা দাস ছয় বছর আগে ক্যালগরিতে প্রাইড মান্থ উদযাপনে পরিচয় হয়। সেখান থেকে প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু সেই প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়াবে সেটা কখনই ভাবেনি সুবিক্ষা এবং তার স্ত্রী টিনা।

সুবিক্ষা সুব্রাহ্মণী ও টিনা দাস দুজনই হিন্দু পরিবারের জন্ম গ্রহণ করেন। নিজের বিয়ে নিয়ে সুবিক্ষা বলেন, ‘ বিয়ে করা আমাদের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে, সেটা কখনই ভাবিনি! দীর্ঘ ছয় বছর লড়াইয়ের পর আমাদের প্রিয়জন পাশে দাঁড়িয়েছেন।’

২৯ বছর বয়সী সুবিক্ষা ডেলোয়েটে একজন চার্টার্ড আকাউন্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। নিজেকে উভকামী (বাইসেক্সুয়াল) হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। অন্যদিকে ৩৫ বছর বয়সী টিনা দাস কানাডার ক্যালগরির ফুটহিলস মেডিকেল সেন্টারের পেশেন্ট কেয়ারে কাজ করেন। টিনা নিজেকে লেসবিয়ান হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। এর আগে টিনা দাস বিষমকামী (হেটেরোসেক্সুয়াল) পুরুষকে বিয়ে করেছিলেন। সেখানে চার বছরের মতো সংসার করেছেন।

টিনা দাস বলেন, ‘আমার বেড়ে ওঠা মৌলভীবাজারে। ২০০৩ সালে মা-বাবার সাথে আমি মন্ট্রিলে আসি। আমার বোন বিয়ের পর এখানে থাকতে শুরু করে। আমরাও তার ওখানেই থাকতাম। এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায় সম্পর্কে আমার মা-বাবার কোনো ধারণাই ছিল না। তারা মনে করতো, আমার কোনো অসুখ হয়েছে এবং সেজন্যে ১৯ বছর বয়সে আমাকে বিয়ে দেওয়া হয়। তারা ভেবেছিল এতে করে আমি ঠিক হয়ে যাবো।’

সুবিক্ষা সুব্রাহ্মণীর সাথে সম্পর্ক চার বছরে গড়ালে, টিনার বোন তার সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন এবং পরিবারও তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। কিন্তু তাতে দমে যাননি টিনা। আস্তে আস্তে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়ান এবং সুবিক্ষার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যান।

সুবিক্ষার মা পুর্নাপুশকালা সুব্রাহ্মণী বলেন, ‘কুইয়্যার কমিউনিটি সম্পর্কে কানাডায় এসে জানতে পেরেছি। এরপরও তাদের বিয়ের আগে সমাজের কথা ভাবতে হয়েছে। ভারতে থাকা আমাদের আত্মীয়স্বজন আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, এই ভয়ে ছিলাম। দ্বিতীয়ত, সমাজ সুবিক্ষাকে কিভাবে দেখবে এবং সে মাতৃত্বের বিষয়টি কিভাবে গ্রহণ করবে।’

সুবিক্ষার মা পুর্নাপুশকালা বলেন, ‘আমাদের মেয়েই যদি সুখী না হয়, সেখানে আমাদের পরিবারের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার কথা চিন্তা করে কী লাভ?’

সুবিক্ষা ও টিনার বিয়েতে পুরোহিত হিসেবে ছিলেন সংস্কৃত পন্ডিত ও শিক্ষক সৌরভ বোন্দ্রে। মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করা সৌরভ জানান, এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের কোনো বিয়েতে পৌরহিত্য করলেন তিনি। তবুও তামিল প্রথানুযায়ী বাগদান অনুষ্ঠান, হিন্দু বিয়ের রীতি, দুই সংস্কৃতির মেলবন্ধন ও পরিবারবর্গের উপস্থিতি- সব মিলিয়ে এই বিয়েটি তার কাছে বিশেষভাবে মনে রাখার মতো।

সৌরভ বলেন, সময় বদলেছে, ‘এখন অনেক পুরোহিতই এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের বিয়ে পড়াতে কোনো আপত্তি করছেন না। এরপরও অনেকে ভয়ে এ ধরনের বিয়ে পড়ানো থেকে দূরে থাকেন। তবে সুপরিচিত মন্দিরগুলোর প্রধান পুরোহিতেরা চাইলে অন্যদের মধ্যে চিন্তার পরিবর্তন এনে নতুন পরিবর্তনের সূচনা করতে পারেন। কিন্তু তার জন্যে ইচ্ছা থাকতে হবে।’

সুবিক্ষার মা পুর্নাপুশকালা জানান, মেয়ের প্রতি তাদের অটল সমর্থনে আত্মীয়স্বজনেরা বিয়েতে এসেছেন। সুবিক্ষা মালাবদল করেছেন তামিল ব্রাহ্মণ প্রথানুযায়ী, বাবার কোলে বসে। এমনকি সুবিক্ষার ৮৪ বছর বয়সী দাদি পদ্মাবতীও ছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। তার ভাষ্যে, "আমরা চেয়েছি আমাদের সন্তানরা মনে কষ্ট পেয়ে দূরে চলে যাওয়ার বদলে সুখী থাকুক এবং আমাদের পাশেই থাকুক।"

সুবিক্ষা ও টিনার বিয়ে রেজিস্টার করা হয়েছে ক্যালগরিতেই। বিয়ের পরপরই তারা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছেন এবং এরপর তারা ক্যালগরিতে ফিরে আসবেন।

 সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Link copied!