ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩, ০৬:৩৮ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে এবং আগামী ৭ জানুয়ারি আসন্ন সাধারণ নির্বাচন বানচাল করে কাউকে লাভবান হতে দেয়া হবে না।
রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন-২০২৩ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলার মাটিতে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও নির্বাচন বানচাল করে কাউকে লাভবান হতে দেয়া হবে না।” এ সময় অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা অগ্নিসংযোগকারীদের এবং তাদের নির্দেশ দাতাদের নিন্দা জানিয়ে বলেন, মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা মহাপাপ, কোনো ধর্মই এটা মেনে নেয় না।
তিনি বলেন, যদি কারো জনসমর্থন পেতে হয়, তাহলে তারা জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়নে তাদের অঙ্গীকার তুলে ধরতে পারে।
গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতা প্রচারের মহৎ উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গকারী যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থানে শিশু ও নারীদের হত্যা করা হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখের বিষয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখনই আমি সুযোগ পাচ্ছি, বারবার যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের জন্যও দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা আমাদের দেশেও কিছু লোককে দেখছি রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে মানুষকে হত্যা করছে তারা।
তিনি বলেন, “মানুষ হত্যার জন্য এই লোকেরা রেললাইন উপড়ে ফেলে এবং ট্রেনের বগিতে আগুন দেয়। আমি জানি না এটা কী ধরনের রাজনীতি যে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। কেন এই আগুনের খেলা? কারো যদি আদর্শ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকে, তারা জনগণের কাছে গিয়ে তাদের সামনে তুলে ধরতে পারেন।”
সম্প্রতি ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে মা ও তার কোলে থাকা একটি শিশু জীবন্ত দগ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এমন করুণ দৃশ্য দেখতে চাই না। তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানুষের ক্ষতি করে পুড়িয়ে হত্যা করে তাদের কী লাভ হচ্ছে? এটা আমার প্রশ্ন। আমরা চাই এই ধরনের সহিংসতা বন্ধ হোক।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতা সব ধর্মের শিক্ষা। তাই তার সরকার এই শিক্ষার সাথে সঙ্গতি রেখে দেশ চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এই মাটিতে শ্রেণি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই স্বাধীনভাবে বসবাস করবে। আমরা সব মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়ন কামনা করি।’
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, তিনি বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত করেছিলেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে।
বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।
তিনি বলেন, ‘যেখানে সব ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে এবং আমরা সবাই মিলে (ধর্মীয়) উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করি। আমি মনে করি বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের বড়দিন উপলক্ষে দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারি খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে তার পক্ষ থেকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও “স্মার্ট সোনার বাংলাদেশে” রূপান্তরিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তাঁরা ইতোমধ্যে দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, আর্চবিশপ বেজয় নাইসেফরাস ডি’ক্রুজ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জুয়েল আরং এমপি, অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি, ধর্ম মন্ত্রণায়ের সচিব মোঃ এ হামিদ জমাদ্দার, বাংলাদেশ খ্রিস্টান লীগের সভাপতি ড্যানিয়েল নির্মল ডি. কস্তা এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত আই কোরায়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও।
ঢাকার আর্চবিশপ আর্চডায়োসিস বেজয় নাইসেফরাস ডি’ক্রুজ এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বড়দিনের শুভেচ্ছা কার্ড তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা বড়দিনের ক্যারোল এবং অন্যান্য দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।