নজরুল সঙ্গীতের কিংবদন্তী ফিরোজা বেগম

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১, ০২:০৩ এএম

নজরুল সঙ্গীতের কিংবদন্তী ফিরোজা বেগম

নজরুল সঙ্গীতের সবচেয়ে বড় শিল্পী কে? সবাই চোখ বন্ধ করে বলে দেবে ফিরোজা বেগম। হ্যাঁ, ফিরোজা বেগমই নজরুল সঙ্গীতের সবচেয়ে বড় পোস্টার। তার গাওয়া নজরুল সঙ্গীত ‘শাওন রাতে যদি’ এর রেকর্ড ১০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল।

ফিরোজা বেগমের শৈশব বা কৈশোরের কোন এক সময় কাজী নজরুল ইসলাম তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন যে, ফিরোজা একদিন অনেক বড় গায়িকা হবে। ফিরোজা নজরুলের আশীর্বাদ সত্যি করে দিয়ে এত বড় শিল্পী হয়েছিলেন যে নজরুলের গান আর তার নাম সমার্থক হয়ে গিয়েছে। আজও নজরুল সঙ্গীত গাওয়ায় ফিরোজা বেগম অনন্য। তার তুলনা তিনি নিজেই।

১৩ বছর বয়েসে ফিরোজা বেগমের সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয় চিত্ত রায়ের হাত ধরে। তবে প্রথম গানে কন্ঠ দেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে। তখন কেবল ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তিনি। এর অল্পদিন পর তিনি গান শিখতে আরম্ভ করেন উপমহাদেশের তৎকালীন শ্রেষ্ঠ সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক কমল দাশগুপ্তের কাছে। গান শিখতে আরম্ভ করার মাত্র ১ বছরের মাথায় ১৯৪২ সালে তার প্রথম গানের রেকর্ড বের হয়। গানের রেকর্ডটিতে ছিলো বেশ কয়েকটি ইসলামি গান। এর কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে তার গলায় উর্দু গানের রেকর্ড হয়। এই রেকর্ডের গান 'ম্যায় প্রেম ভরে’, ‘প্রীত ভরে শুনাউ' আর 'প্রীত শিখানে আয়া' বেশ বিখ্যাত হয়েছিল। ফিরোজা বেগম নজরুল সঙ্গীতকে এতো বেশি ভালোবেসেছিলেন যে, নজরুল সঙ্গীত গাইবেন বলে অন্য গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন।

জীবনের প্রথম পর্যায়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সহচার্য লাভ করেন। তার কাছ থেকে লাভ করেন গানের তালিম। তবে নজরুলের গান নিয়ে তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। এরপর ফিরোজা বেগম নজরুলের প্রায় ৭ শত গান গেয়েছেন। নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর ফিরোজা বেগম নজরুল সঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

ব্যক্তি জীবনে ১৯৫৫ সালে বিয়ে করেছিলেন তার গুরু কমল দাশগুপ্তকে। বিখ্যাত ব্যান্ড শিল্পী শাফিন আহমেদ, হামীন আহমেদ এবং তাহসিন আহমেদ এই দম্পতির সন্তান।

আজীবন সঙ্গীতসাধনা বিশেষ করে নজরুলকে নিয়ে মেতে থাকার স্বীকৃতিও মিলেছে বেশ কয়েকবার। বাংলাদেশের ‘একুশে পদক’, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী স্বর্ণপদক, ভারতের নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার ইত্যাদি ছাড়াও ফিরোজা বেগম নজরুল আকাদেমি পদক, চুরুলিয়া স্বর্ণপদক এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট মর্যাদায় ভূষিত হয়েছেন।

১৯৩০ এর ২৮ জুলাই জন্ম গ্রহণ করা নজরুল সঙ্গীতসহ বাংলা গানের জগতের এই উজ্জ্বল ফিারোজা ফিরোজা বেগম কিডনি জটিলতায় ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

Link copied!