মেরিলিন মনরো: যার মৃত্যু এখনও গবেষণার বিষয়

মিজানুর রহমান খান

জুন ১, ২০২৩, ০২:৩৭ পিএম

মেরিলিন মনরো: যার মৃত্যু এখনও গবেষণার বিষয়

তকমা পেয়েছেন সেক্স সিম্বল বা ব্লন্ড বম্বশেল হিসেবে। মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া সৌন্দর্য আর অভিনয় দক্ষতার পাশাপাশি যৌনতার প্রতীক হিসেবে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কাঁপিয়েছেন পুরো বিশ্ব। আবার মৃত্যুর পর রেখে গেছেন এক গাদা রহস্য। রুপালি জগতের আলো, তার প্রতি পুরুষের গভীর আকর্ষণ, এই সব ছাড়িয়েও তিনি হলিউডের এক সফল অভিনেত্রী, গায়িকা ও সুপার মডেল। তিনি আর কেউ নন, মেরিলিন মনরো। পুরো নাম- নর্মা জিন মর্টেনসন।

১৯২৬ সালএই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে মানসিক ভারসাম্যহীন এক মায়ের কোলে তার জন্ম। আমৃত্যু জানতে পারেননি বাবার পরিচয়। শিশুকাল থেকেই ছিলেন সুখের কাঙাল। চরম নিরাপত্তাহীনতা কাকে বলে, হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। বয়স যখন সাত, মায়ের ঠিকানা তখন মানসিক হাসপাতালে। আর মনরোর এতিমখানায়; কখনো কখনো কয়েকটি পরিবারে।  বিভিন্ন সময়ে  মোট ১১ জন পালক বাবা-মায়ের কাছে বড় হন মনরো।

১২ বছর বয়সেই অন্তত ২ বার ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পান। প্রথমবার সৎবাবা আর দ্বিতীয়বার চাচাতো ভাইয়ের কীর্তি। একারণে পুরুষদের সম্পর্কে তাঁর মনে তৈরি হয় আজন্ম ঘৃণা আর অবিশ্বাস। ৩৬ বছরের জীবনে উচ্চতায় হিমালয়ের সমান জনপ্রিয়তা পেলেও ভালবাসা ও সুখ নামের সোনার হরিণের সন্ধান তিনি কখনও পাননি। 

ভালবাসার মানুষগুলোকে নিজের সুখের তারা মনে করলেও ওই তারাগুলোই মনরোকে গলিয়ে দিয়েছে, যেমন সুর্য গলিয়ে দেয় তুষারপাতকে।  

একাধিক বিয়ে, প্রেম, সম্পর্কের গুঞ্জন- ব্যক্তিগত জীবনেও কম বিতর্ক ছিল না হলিউডের সর্বকালের সেরা এই গ্ল্যামার কুইনের। ১৬ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে। 

তারপর আরও দুইজনের গলায় মালা পরালেও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এর বাইরে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন প্রথমে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। 

প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনেক আগে থেকেই তাঁদের প্রেম। জন কেনেডি তাকে ডাকতেন সুইট ক্যান্ডি নামে। পরে কেনেডি সরে গেলে ভাই রবার্ট কেনেডির প্রেমে পড়েন ভারবাসার কাঙাল মনরো।  কয়েক বছর একই ছাদের তলায় থাকলেও সম্পর্কের স্বীকৃতি পাননি কখনও।

অভিনয় জীবন শুরু হয় মডেলিং দিয়ে ১৯৪৬ সালে। এখানেই মনরো বাদামি বা ব্রাউনিস কালার চুল কে প্লাটিনাম হোয়াইটের এক আভা আনেন যা তার ট্রেডমার্ক বলা চলে। আর তার নামের পরিবর্তে নতুন নাম হয় মেরিলিন মনরো।  

খুব কম সময়েই জায়গা করেছিলেন হলিউডের প্রথম সারিতে। আজও পৃথিবীর সব থেকে গ্ল্যামারাস নারী মেরিলিন। দুই দশকের ক্যারিয়ারে ডেঞ্জারাস ইয়ার্স, অ্যাজ ইয়ং অ্যাজ ইউ ফিল, লেটস মেক ইট লিগাল, দ্য প্রিন্স অ্যান্ড দ্য শোগার্ল, মাঙ্কি বিজনেস সহ ৩৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। 

অসম্ভব সাফল্যের আড়ালেও এক জনমদুখী মানুষ মেরিলিন মনরো। একাকীত্বে ভুগতেন। ২৫ বছর বয়সের আগেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনবার। এক অজানা আতঙ্ক কাজ করতো মেরিলিন মনরোর মনে। তার ব্যক্তিগত ডায়েরিতে নাকি ৩৭ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের নাম পাওয়া যায়। 

পরবর্তীতে লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন গ্ল্যামার কুইন। সরকারি ভাবে বলা হয় আত্মঘাতী হয়েছিলেন মনরো। তবে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে আসে তার মৃত্যুতে। কেন তিনি নিজেকে মের ফেললেন, কেন তার হাতে ফোনের রিসিভার ছিল, কেনই বা নগ্ন অবস্থায় চাদরের তলায় পাওয়া গিয়েছিল তাকে। 

এসব প্রশ্নের জবাব আজও মেলেনি। শুধু জানা যায়, তার রক্তে ছিল অস্বাভাবিক পরিমাণে ঘুমের ওষুধ।

Link copied!