আব্দুর রশিদ সেলিম সালমান খান। তবে ভারত ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী তিনি ‘সালমান খান’ নামেই পরিচিত। একাধারে তিনি অভিনেতা, প্রযোজক, প্লেব্যাক শিল্পী ও জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব। ফিল্মফেয়ার, জাতীয় চলচ্চিত্রসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি হিন্দি চলচ্চিত্রে দাপটের সাথে রাজত্ব করে চলেছেন। বলিউডের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যাচেলর তিনি। তবে কেন তিনি চিরকুমার, সালমানের হয়ে ওই গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন ছোট বোন অর্পিতা খানের স্বামী অভিনেতা আয়ুশ শর্মা। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
৫৬ বছরের জীবনে ঘটনা তো কম ঘটেনি সালমান খানের। প্রেম, বিচ্ছেদ, অসংখ্য বান্ধবী, বলিউডের অলিখিত নিয়ন্ত্রক, অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনায় ফুটপাথবাসীর প্রাণ নেওয়া, কৃষ্ণসার হরিণ শিকার। সব মিলিয়ে যেন জীবন্ত রুপোলি পর্দা তিনিই! বসন্তের মতোই রঙিন! তবু যেন সবচেয়ে ঘটনাবহুল সালমান খানের জীবনে। ‘প্রিয় সখী’ ক্যাটরিনা কইফ সাতপাক ঘুরে ফেললেন বয়সে ছোট ভিকি কৌশলের সঙ্গে। জন্মদিনের ঠিক আগের দিন সাপের কামড়ে হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী ‘ভাইজান’। আয়ুষ শর্মার দাবি, খানদানের বড় ছেলে নাকি ছাপোষা, মধ্যবিত্ত মানসিকতার! সত্যিই কি তিনি তাই?
ভারতের বলিউড জগতের প্রখ্যাত চিত্রনাট্যকার ও গীতিকার সেলিম খানের বড় ছেলে সালমান খান। দিওয়ার-এর বিখ্যাত সংলাপ ‘মেরে পাস মা হ্যায়’-এর জ্বলন্ত সংস্করণ। এখনও চোখে হারান মাকে। তাই সেলিম খান যখন দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন হেলেনকে, অনেক দিন পর্যন্ত তাঁকে মা বলে মেনে নিতে পারেননি। বলিউড বলে, বাবার এই আচরণই নাকি তাঁকে বিয়ে-বিমুখ করে তোলার জন্য অনেকটা দায়ী!
মায়ের মতোই ভাল আঁকতে পারেন। গানও গাইতে জানেন। পড়াশোনায় কতটা মনোযোগী ছিলেন? বলিউড বলছে, মুম্বইয়ের বান্দ্রার সেন্ট স্ট্যানিসলাস হাই স্কুল থেকে ১২ ক্লাসের পড়াশোনা শেষ করেছেন সালমান। তার আগে তিনি কয়েক বছর গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া স্কুলে পড়াশোনা করেন।
সালমান খানের বলিউতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে অবদান রয়েছে বাবা বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার জুটি সেলিম-জাভেদের সেলিম। স্বাভাবিক ভাবেই ছেলেও বলিউডমুখী। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া হিন্দি ছবি ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’-এ সালমানের প্রথম অভিনয়। রেখা-ফারুক শেখ অভিনীত 'বিবি হো তো অ্যায়সি'-তে ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। পরের বছরই তিনি সফলতম নায়ক! সুরজ বরজাতিয়ার 'ম্যায়নে পেয়ার কিয়া'য় 'প্রেম'। বিপরীতে ভাগ্যশ্রী।
তারও আগে মডেল হিসেবে সফল সালমান খান। সঙ্গীতা বিজলানির ও সালমান দেশের প্রথম সারির পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থার হয়ে এক ফ্রেমে ধরা দিয়েছিলেন। প্রথম প্রেমেও পড়েছিলেন। বলি পাড়ায় রটনা, বিয়ের কার্ড পর্যন্ত নাকি ছাপা হয়ে গিয়েছিল তাদের! তবে জানা যায়নি কে পিছিয়ে এসেছিল সাতপাক ঘোরা থেকে। তবে সলমনের ‘প্রেম রোগ’ তখন থেকেই। পাঁচ বছরের বড় সঙ্গীতা এখনও সালমানের খুব কাছের বন্ধু।তাইতো প্রিয় বন্ধুর ৫৭তম জন্মদিনে অংশগ্রহণ করেন।
সঙ্গীতা বিজলানি চলে গেলেও প্রেম কিন্তু ছাড়েনি পর্দার ‘প্রেম’কে! ছবিতে এই নামেই বিখ্যাত সালমানের জীবনে এসেছিলেন পাকিস্তানি নায়িকা ও সুপার মডেল সোমি আলি। ‘বুলন্দ’ তাঁদের প্রথম অভিনীত ছবি। সেই ছবির আউটডোর শ্যুটিং হয়েছিল নেপালের রাজধানীতে। তার পাহাড়ি পথের বাঁকে অপেক্ষা করছিল ভাইজানের নতুন ভালবাসা।
টানা আট বছর সম্পর্কে ছিলেন সোমি-সালমান। বলিউড জানায়, এক মাত্র সোমিই নাকি ‘পাত্রী’ হিসেবে পছন্দ ছিল সালমানের। আর সোমির অভিযোগ, সালমানের এত বান্ধবী যে কাকে ছেড়ে কাকে সামলাবেন! প্রায়ই নাকি তিনি সোমিরর বদলে অন্য কারও সঙ্গে ব্যস্ত থাকতেন। যা নায়িকা মেনে নিতে পারেননি। তাই তাদের প্রেমের ফলাফল-বিচ্ছেদ।
প্রেমের ইনিংসে সোমি আউট হয়ে গেলেও সালমান কিন্তু ক্রিজে একা থাকেননি। পরেই জীবনে এসেছেন ফারিয়া আলম।বাংলাদেশের মেয়ে ফারিয়া আলমের রয়েছে অনেক প্রেমিক। বলিউড অভিনেতা সালমান খান তাদের একজন। ফারিয়া আলম ও বলিউডের হার্টথ্রব নায়ক সালমান খানের সম্পর্ক নিয়ে সরব হয়ে উঠেছিল পশ্চিমা মিডিয়া।যদিও ফারিয়া আলমের সঙ্গে সম্পর্কের কথা কোনও দিন অভিনেতা স্বীকার করেননি।
তবে ইন্ডাস্ট্রিতে ঝড় তোলার মতো কোনও প্রেম যদি সালমান করে থাকেন, সেটি এক মাত্র ঐশ্বর্য রাইয়ের সঙ্গে। সঞ্জয় লীলা বানশালি-র ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ যারা দেখেছেন, তারা বুঝবেন তাদের সেই রসায়নের কথা। প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরীকে চোখে হারাতেন 'ভাইজান'।
শুরুতে সারাক্ষণ আগলানো। পরে সেটাই সন্দেহ হয়ে দেখা দিয়েছিল তার মধ্যে। যা ঐশ্বর্য মেনে নিতে পারেননি। তাদের সম্পর্ক অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছিল। বিয়ে করার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন সালমান খান। এমনকি সালমানের হয়ে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে শাহরুখ খান ঐশ্বরিয়া রাইয়ের বাবা-মার কাছে গিয়েছিলেন। তবে ঐশ্বরিয়া ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। পরবর্তীতে সালমানের হাত থেকে নিস্তার পেতে সাময়িক বিবেক ওবেরয়ের মোহেও মজেছিলেন সাবেক ওই বিশ্বসুন্দরী।
বলিউড জুড়ে তখন বিবেক ওবেরয় ও ঐশ্বর্য রাইয়ের বিয়ের গুঞ্জন! অন্যদিকে, পাগলপারা সালমান। বিবেককে খুনের হুমকি, ঐশ্বর্যকে মারধর- কী করেননি বলিউডের ভাইজান! বলিউড সাক্ষী, সালমান কিন্তু কোনও নায়িকার জন্য এত আকুল ছিলেন না। তবু আটকাতে পারেননি রাই সুন্দরীকে। ১৪ বছর হল তিনি বচ্চন-বধূ।
তবে রাই তাঁর ‘জান’কে কি ভুলতে পেরেছেন? সালমানকে কিন্তু মনের ব্যথা সামলাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। ঐশ্বর্য আর তার সঙ্গে অভিনয় করবেন না, তা মানতে পারেননি 'প্রেম'। বদলে তিনি কলেজ ছাত্রী স্নেহা উল্লালকে খুঁজে এনে নায়িকা বানিয়েছিলেন।
বলিউডকে উপহার দিয়েছিলেন ঐশ্বর্যর ‘হুবহু সংস্করণ’। এক ছবিতেই রাতারাতি জনপ্রিয় নায়িকা স্নেহা। ‘লাকি: নো টাইম ফর লাভ’-এ তাঁর বিপরীতে সালমান। ছবির গল্প, গান তুমুল জনপ্রিয়। বলিউড বুঝেছিল, সলমনের মনে কতটা জায়গা দখল করেছিলেন রাই বচ্চন।
এর পরেই কি ভাইজান একটু বেশি ‘দামাল’ হয়ে উঠেছিলেন? মত্ত অবস্থায় আচমকা গাড়ি চালিয়ে ফুটপাথে। তারই বলি নিরীহ ফুটপাথবাসী। ‘ওরা ফুটপাথে কেন শুয়ে থাকবে’-র মতো উদ্ধত বার্তা দেওয়া। কৃষ্ণসার হরিণ শিকার, সব মিলিয়ে পরপর কেলেঙ্কারি! তার জেরে কারাগারের পিছনেও কাটাতে হয়েছে বলিউডের এই সুপারস্টারকে।
সারা দেশের তামাম মহিলাকুল সেই সময়ে কায়মনোবাক্যে চেয়েছিলেন, সালমান-ঐশ্বর্য রাইয়ের ‘প্রেম’ যেন অক্ষয় হয়। তারপরও বিধাতা সায় দেয়নি।
ওই সময়ে সালমানের পাশে ছায়ার মতো ছিলেন ক্যাটরিনা কাইফ। বিদেশিনী কন্যা যেন সালমানের ক্ষতবিক্ষত জীবনে প্রেমের প্রলেপ হয়ে এসেছিলেন। ক্যাটরিনা সালমানকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। বদলে বলিউডে শক্ত হয়েছে তার পায়ের তলার জমি। সব দেখেশুনে সালমান-অনুরাগীরা তাঁকে ‘ভাবিজি’ বলে ডাকতে শুরু করেছিলেন।
সবাই অপেক্ষায় ছিলেন, কবে চার হাত এক হবে? শুধু মাত্র ক্যাটের জন্য রোমানিয়ান বান্ধবী ইউলিয়া ভান্তুরকে কেউ সালমানের পাশে দেখতে, মানতে রাজি হননি!
ক্যাটরিনাও ২০২১ সালে ছেড়েছেন সালমানের হাত। বয়সে ছোট ভিকি কৌশল এখন তার জীবনসঙ্গী। প্রেমিকার বিয়েতে দেশ ছেড়েছেন ভাইজান। কিন্তু উপহার দিতে ভোলেননি। স্বামীর উপহারকে ছাপিয়ে গিয়েছে প্রাক্তনের উপহার। একদা প্রেমিকাকে ৩ কোটি টাকা দামের গাড়ি উপহার দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, সালমানের ৫৭তম জন্মদিনেও ভুলতে পারেনি ক্যাট। আর এই দিনে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে ইন্সটাগ্রামকে বেছে নেন তিনি।
ইন্সটাগ্রাম স্টোরিতে সালমানের একটি সাদা কালো ছবির সঙ্গে ‘হ্যাপি বার্থডে’ স্টিকার দেন ক্যাটরিনা। তার সাথে একটি বার্তাও পোস্ট করেন তিনি। তাতে তিনি লিখেছেন, “আনন্দময় জন্মদিনের শুভেচ্ছা আপনাকে। আপনার মধ্যকার ভালোবাসার আলো এবং প্রতিভা সবসময় বিদ্যমান থাকুক।”
তবে ৫৭তম জন্মদিন বোধহয় জীবনে ভুলতে পারবেন না 'ভাইজান'। জন্মদিনের এক দিন আগেই সর্পাঘাতে শয্যাশায়ী। ২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে পানভেলে নিজের খামারবাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন সালমান। হঠাৎই হাতে ব্যথা। বন্ধুদের চোখে পড়ে সলমন যেখানে বসেছিলেন, একটি সাপ সেখান থেকে নেমে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে হুলুস্থূল। চিৎকার করে সবাই সাহায্য চাইতে শুরু করেন। দেরি না করে নবী মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ‘ভাইজান’কে।
বসন্ত বাতাস যেমন এক নিমেষে ওলোটপালট করে দেয় সব কিছু, সালমানও যেন তেমন! ভরা শীতে জন্মেও সদা চঞ্চল। ক্ষণস্থায়ী প্রেম, কখনও প্রতিহিংসা পরায়ণ, পর ক্ষণেই দানবীর! সলমনকে চেনা গণ্ডিতে বাঁধা দায়! অতিমারিতে তিনি নিজে ইন্ডাস্ট্রির কলাকুশলীদের হাতে রেশন তুলে দিয়েছেন। ব্যাঙ্কে পাঠিয়েছেন নির্দিষ্ট অর্থ। আজ পর্যন্ত কেউ কোনও দিন তাঁর কাছে এসে খালি হাতে ফিরে যাননি।
সালমান খান দাতা, এ খবর জেনে এক মহিলা ছেলের পড়াশোনার জন্য ল্যাপটপ চাইতে এসেছিলেন। নিজের মহার্ঘ্য ল্যাপটপ তাঁর হাতে তুলে দেন ‘টাইগার'। তাঁর বাড়িতে সকলের সব সময়ে অবারিত দ্বার। পোশাক থেকে খাবার- সব সময়েই বাড়তি মজুত। সলমন নিজে ইদ পালন করেন। আবার গণেশ বন্দনাতেও মাতেন।
তবে অতি সম্প্রতি বোন অর্পিতার স্বামী আয়ুশ মুখ খুলেছেন সালমানের হয়ে। কেন চিরকুমার থাকলেন ৫৫-র যুবক? আয়ুশের কথায়, বৈভবের মধ্যে থাকলেও সালমান নিতান্তই মধ্যবিত্ত, ছাপোষা। সেই মানসিকতার মেয়ের খোঁজ আজও তিনি পাননি। সবাই যে সালমানের বিত্ত-ই চায়। মানুষ সালমানকে চান ক'জন!