সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক হামলায় পরোক্ষ সমর্থনের দায়ে নিজের ম্যানেজারকে বরখাস্ত করেছেন দুয়া লিপা। ব্রিটিশ-আলবেনীয় নাগরিক দুয়া লিপা এ আমলের সবচেয়ে জনপ্রিয় পপ-তারকাদের অন্যতম।
গতকাল সোমবার দ্য মেইলের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের গণমাধ্যম আনাদোলু নিউজ ও কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।
সংগীত জগতের বড় অনুষ্ঠান গ্ল্যাস্টনবারি ফেস্টিভাল থেকে ফিলিস্তিনপন্থি আইরিশ ব্যান্ড নিক্যাপ-কে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে লেখা একটি চিঠিতে সই দেন দুয়া লিপার ইহুদি ধর্মাবলম্বী ম্যানেজার ডেভিড লেভি।
গ্ল্যাস্টনবারি ফেস্টিভালের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ইভিসের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে সই দেন সংগীতাঙ্গনের একাধিক কর্মী। চিঠিতে নিক্যাপকে গান পরিবেশ করতে না দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা।
আনাদোলূ জানায়, সবার ওপরেই ছিল লেভি’র নাম।
ওই চিঠি জনসম্মুখে প্রকাশ পেলে অনেক শিল্পী ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ওই অনুষ্ঠানে কোনো বাধা ছাড়াই নিক্যাপ গান পরিবেশ করে।
চিঠিতে সই দিয়েছিলেন দুয়া লিপার এজেন্ট ডেভিড লেভি। তিনি ডব্লিউএমই ট্যালেন্ট এজেন্সির কর্মী।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, দুয়া লিপা মনেপ্রাণে একজন ফিলিস্তিনপন্থি মানুষ। তার ধ্যান-ধারণার সঙ্গে তার ম্যানেজারের দৃষ্টিভঙ্গিতে আকাশ-পাতাল ফারাক। মূলত এ কারণেই চাকরি হারিয়েছেন ডেভিড লেভি।
সূত্র দ্য মেইলকে আরও বলেন, ‘দুয়া মনে করেন ওই ম্যানেজার গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের ভয়াবহ আচরণকে সমর্থন করেন। যে চিঠিটিতে তিনি সই দিয়েছেন, তা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।’
আইরিশ ব্যান্ড নিক্যাপের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের হামাসকে সমর্থন করে। তবে ব্যান্ডটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দলের অন্যতম সদস্য মো শারা’র বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের আদালতে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়। এখনো ওই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি।
ফিলিস্তিন সমর্থক দুয়া লিপা
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার ফিলিস্তিনের পক্ষে নিজের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন দুয়া। ইসরায়েল সমর্থক ম্যানেজারকে বরখাস্ত করা এর সর্বশেষ নজির।
২০২০ সালে সামাজিক মাধ্যমে তিনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সমালোচনা করে লেখা একটি পোস্ট রিপোস্ট করেন। সেখানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
২০২১ সালে গাজায় যুদ্ধবিরতি চালুর আহ্বান জানিয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পাঠানো একটি খোলা চিঠিতে সই দেন তিনি। ওই ঘটনার জেরে তার বিরুদ্ধে ‘ইহুদিবিদ্বেষের’ অভিযোগ আসে। তবে তিনি ওই অভিযোগ উড়িয়ে দেন এবং জানান, ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন তিনি।
২০২৩ সালের অক্টোবরে তিনি ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি, উভয়ের জন্য সমবেদনা জানান। তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি চালু, গাজাবাসীদের মানবিক সংকটের স্বীকৃতি ও তাদের প্রতি নমনীয় থাকার আহ্বান জানান। তিনি ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি, উভয়ের কষ্টের কথা বললেও কিছু সংবাদমাধ্যমে শুধু ফিলিস্তিনের বিষয়টি উল্লেখ হয়। যার ফলে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন।
২০২৪ সালে তিনি আরেকটি খোলা চিঠিতে সই দিয়ে গাজার সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান।
ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে তিনি গাজায় আইডিএফের অভিযানকে ‘ইসরায়েলি গণহত্যা’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘শিশুদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার পেছনে কোন যুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়।’
সে বছরের গ্ল্যাস্টনবারি ফেস্টিভালে তিনি ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে নিয়ে দর্শকদের দিকে ছুটে যান।
২০২৫ সালে কসোভোর সানি হিল ফেস্টিভালে গান গাওয়ার সময় তিনি ‘ফিলিস্তিন মুক্ত কর’ লেখা প্রদর্শন করেন।
১৯৯৫ সালের ২২ আগস্ট লন্ডনে জন্ম নেন দুয়া। তার বাবা-মা দুকাগজিন লিপা ও আনেসা লিপা উভয়ই কসোভো-আলবেনীয় নাগরিক। ১৯৯২ সালে কসোভোয় চলমান সংঘাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে পালিয়ে যান তারা।
দুয়া লিপার ব্রিটেন ও আলবেনিয়ার দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে।
দুয়ার তিন অ্যালবামের বিক্রি আড়াই কোটি ছাড়িয়েছে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১১৫ থেকে ১৩০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।