রণদীপ হুদা। বলিউডের পরিচিত নাম। চরিত্রের প্রয়োজনে বারবার নিজেকে বদলে আলোচনায় থাকেন তিনি। এবার মহাভারতের অনুকরণে পৌরাণিক রীতিতে বান্ধবী লিনকে বিয়ে করে আবারও আলোচনায় রণদীপ!
যখন বলিউডের অন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নামি-দামি হোটেল কিংবা প্রাসাদে ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’ করতে ব্যস্ত, তখন ছক ভাঙলেন রণদীপ।
মহাভারতের থিমেই বিয়ের মণ্ডপ সাজিয়ে সাদা ধুতি, ফতুয়া, চাদর আর মাথায় সাদা পাগড়ি পরে মণিপুরের আঞ্চলিক পোশাকেই বিয়ে সারলেন আলোচিত এই বলি অভিনেতা।
রণদীপের স্ত্রী লিনের পরনেও ছিল মণিপুরের সাবেক পোশাক পটলোই। মেরুন আর সোনালি রঙের পটলোই পরেছেন তিনি। হালআমলের বলিউডি শেরওয়ানি কিংবা ঘাগড়া নয়, একেবারেই সাবেকি পোশাকে বিয়ে করার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন গতকাল বিয়ে করা এই যুগল।
ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বিয়ের ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। যেখানে দেখা গেছে, বিয়ের রীতিনীতি পালন করতে ব্যস্ত বর-কনে। কখনও বরযাত্রীকে নিয়ে ব্যান্ডপার্টির সঙ্গে হেঁটে বিবাহমণ্ডপে ঢুকছেন রণদীপ, কখনও আবার লিনের পাশে বসেই বিয়ের অজানা সব নিয়ম-আচার বোঝার চেষ্টা করছেন।
বলিউডের কোনো বন্ধুবান্ধব নয়, একেবারে দুই পরিবারের উপস্থিতিতেই ঘরোয়াভাবে বিয়ের আয়োজন করেছেন রণদীপ-লিন।
বিয়ের আগে রণদীপ ও লিন— দুজনই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের একটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে লেখেন, ‘মহাভারতে অর্জুন যেখানে মণিপুরের যোদ্ধা ও রাজকুমারী চিত্রাঙ্গদাকে বিয়ে করেছিল, সেখানেই আমরা আমাদের পরিবার ও বন্ধুদের আশীর্বাদ নিয়ে বিয়ে করছি। আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, ২৯ নভেম্বর আমাদের বিয়ে। মণিপুরের ইম্ফলে এ অনুষ্ঠান হবে। তারপর মুম্বাইয়ে রিসেপশন। আমাদের এই নতুন সফরে আপনাদের আশীর্বাদ চাই।’
রণদীপভক্তরা বলছেন, বলিউডে এমন অনেক অভিনয়শিল্পী আছেন প্রতিভা থাকার পরও লাইমলাইটে কম থাকেন। মানে আলোচনা কম হয় যাদেরকে নিয়ে, ক্রেজি ফ্যানবেজ নেই, রণদীপ হুদা তাঁদেরই একজন। দারুণ একজন অভিনেতা হয়েও তিনি আন্ডাররেটেড।
রণদীপ হুদা ভারতের বাণিজ্যিক বা শৈল্পিক ঘরানার সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় মুখ। মীরা নায়ারের ‘মনসুন ওয়েডিং’ দিয়ে অভিষেক হয় তাঁর, এরপর তাঁকে দেখা গেছে ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন মুম্বাই’, ‘রঙ রসিয়া’, ‘হাইওয়ে’, ‘সর্বজিৎ’ ইত্যাদি সিনেমায়।
জান্নাত ২’, ‘জিসম ২’, ‘কিক’-এর মতো পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। ২০২০ সালে ‘এক্সট্রাকশন’ দিয়ে হলিউডে অভিষেক হয় তাঁর। এর আগে সুস্মিতা সেনসহ অনেক অভিনেত্রীর সঙ্গে প্রেমের গুজব শোনা গেছে তাঁর।
রণদীপের মুভিগুলো যারা দেখেছেন তারা জানেন, তার অভিনয় শৈলী সম্পর্কে। চরিত্রে মিশে গিয়ে প্রাণ ঢেলে দেয়া তাঁর সহজাত গুণাবলী। যে চরিত্রেই কাজ করেন নিজেকে ভেঙে গড়ার চেষ্টা করেন।
ভারতের হরিয়ানায় জন্ম নেয়া রণদীপের শৈশব কাটে দাদীর সঙ্গে। মেডিকেল সার্জন পিতা ও গৃহিনী মাতা রোজগারের খাতিরে মধ্যপ্রাচ্যে কাটিয়েছেন বেশিরভাগ সময়। তাই দাদীর কাছেই থেকেছেন রণদীপ। রণদীপ হুদা উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান ১৯৯৫ সালে।
সেখানে ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়েছেন মার্কেটিংয়ে। পরবর্তীতে মাস্টার্স করেন হিউম্যান রিসোর্সে। অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালীন আর্থিক প্রয়োজনে অসংখ্য পার্টটাইম জব করেন রণদীপ। ওয়েটার, ডিস ওয়াশার, কার ওয়াশার, সমুদ্রতীরে লাইফগার্ডের চাকরী, ট্যাক্সি চালানো বাদ যায়নি কিছুই!
২০০০ সালে ভারতে ফিরে একটি বিমান কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন রণদীপ। সাথে মঞ্চেও অভিনয় শুরু করেন তিনি। ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল অব্দি বেশ কয়েকটি মুভিতে ছোটখাটো চরিত্রে কাজ করেন। কিন্তু একটি মুভিও সফলতার মুখ দেখে নি।
অবশেষে ২০১১ সালে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন মুম্বাই’ মুভিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। অজয় দেবগন, ইমরান হাশমি, কঙ্গনা রানাওতের পাশে রণদীপের নামটা তখন একটু অচেনাই লাগছিল। কিন্তু সব পাল্টে যায় মুভি মুক্তির পর। মুভিটি ব্যবসাসফল হয়। রণদীপও রাতারাতি আলোচনায় চলে আসেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি লেখালেখিতে যথেষ্ট ভালো রণদীপ। এশিয়ান করেসপন্ডেন্ট, হিন্দুস্তান টাইমস-এর মতো সংবাদমাধ্যমে অনেক লেখা আছে তাঁর। ২০১০ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়ার ‘ইন্ডিয়া’স মোস্ট ডিজায়ারেবল ম্যান’-এর তালিকায় জায়গা পান রণদীপ হুদা। ২০১১ সালে আইএমডিবির `বিশ্বের সেরা ২০ আবেদনময় পুরুষ` এর তালিকায় সপ্তম স্থানে নাম আসে তাঁর।
চরিত্রে পারফেকশন আনতে কঠিন পরিশ্রম করতে পিছপা হন না রণদীপ হুদা । ২০১৬ সালে ‘সর্বজিৎ মুভিতে চরিত্রে বাস্তবতার ছাপ আনতে ২৮ দিনে ১৮ কেজি ওজন কমান। যা তখন রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল।
বলিউডের একমাত্র অভিনেতা হিসেবে পেশাদার ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন রণদীপ। পুরষ্কারও পেয়েছেন অনেকগুলো। পোলো, শো জাম্পিং-এর ইভেন্টেও তাঁকে অংশ নিতে দেখা গেছে। রণদীপের নিজের ৬টি ঘোড়াও আছে।
চাইলে পেশাদার ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার হতে পারতেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝেমধ্যে অসাধারণ কিছু ছবি পোস্ট করতে দেখা যায় তাঁকে।
রণদীপের স্ত্রী লিন একজন বলিউড অভিনেত্রী। ২০০৭ সালে ‘ওম শান্তি ওম’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন লিন, যেখানে তিনি ওম কাপুরের (শাহরুখ খান) বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
এরপর ২০১৪ সালে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মেরি কম , ২০১৫ সালে উমরিকা, ২০১৭ সালে রেঙ্গুন ও কায়দি ব্যান্ড এবং ২০১৯ সালে অ্যাক্সন সিনেমায় দেখা গেছে লিনকে।
এদিকে, রণদীপকে সর্বশেষ দেখা গেছে ভারতের স্বাধীনতার বীর ‘সাভারকার’-এর বায়োপিকে। ‘বীর সাভারকার’ নামে সিনেমাটির পরিচালনাও করেছেন অভিনেতা।