সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে পরিচালক জোয়া আখতারের ‘দ্য আর্চিস’। শাহরুখ খানের কন্যা সুহানা খান, অমিতাভ বচ্চনের নাতি অগ্যস্তা নন্দা, শ্রীদেবী-বনি কাপুরের কন্যা খুশি কাপুরকে নিয়ে নির্মিত হওয়ায় ছবিটির প্রচার ছিল তুঙ্গে। ছবিটির মূল আকর্ষণই স্টার কিডস।
পরিচালক জোয়া, আর্চি কমিকসের থেকে চরিত্রগুলো নিয়েছেন। ষাটের দশকে আমেরিকায় প্রকাশিত হত আর্চি কমিকস। প্রধান চরিত্রগুলো হলো- আর্চি, বেটি, ভেরোনিকা।
ছবিটি কমিকের মতোই ভারতীয় রিভারডেলের কাল্পনিক শহরে সেট করা হয়। ইংলিশ ও ভারতীয়দের কেন্দ্রে একটি পার্ক রয়েছে। এই পার্ককে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার ঘটনা আবর্তিত হয়েছে। বন্ধুত্বের টানাপোড়েন, সামাজিক জাগরণ ইত্যাদি কাহিনীর মাধ্যমে।
ছবিটিতে প্রথমে পরিচয় হবে আর্চির সঙ্গে। ‘দ্য আর্চিস’ নামে তার একটি মিউজিক্যাল ব্যান্ড আছে। আর্চি গর্ব করে এ ব্যান্ড খুব শীঘ্রই বিটলসের পরে বিশ্বসেরা হবে। এরপর তার জীবনের সেরা বন্ধুদের সঙ্গে তার দেখা হবে। তাদের কেউ বিদেশে গিয়ে ক্যারিয়ার তৈরি করতে চায়, কেউ বা তার সংস্কৃতিকে নিয়ে আগাতে চায়। তাদের সকলের চোখ ভর্তি রঙিন স্বপ্ন। এই ছবির সকল প্রধান চরিত্র টিনেজার হওয়াতে তারা সকলেই ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে চায়।
ছবিতে ষাটের দশককে রিপ্রেজেন্ট করা হয়েছে বলা চলে। কেননা, এখানে দেখানো হয়েছে শহরের ছেলেমেয়েরা খুব প্রাণচঞ্চল। তারা গানবাজনা নিয়ে আনন্দে থাকে। তাই এটিকে একটি মিউজিক্যাল ছবি ও বলা যায়। ষাটের দশকের পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে গান বাজনা এবং তাদের জীবনধারা এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, বন্ধুত্বের পাশাপাশি মিষ্টি প্রেমের গল্পও দেখা যায়। আর্চিকে দেখা যায় তার দুই মেয়ে বন্ধুর সঙ্গে মিষ্টি সম্পর্কে জড়াতে। যদিও এটি দুই মেয়ে বন্ধুদের চোখে পড়লে ও বন্ধুত্বের হিসাব করে কেউ রাগ প্রকাশ করে না।
ছবিটি আর্চি, বেটি, ভেরোনিকা, রেগি, জুগহেড, এথেল, ডিল্টনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে। তারা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত গ্রিন পার্কের সঙ্গে একটি শক্তিশালী বন্ধন করে। পার্কটিতে সবার আবেগ জড়ানো স্মৃতি রয়েছে।
শহরের শিশুদের ৫ বছর হলেই একটি করে গাছ রোপণ করে এই পার্কে। কিন্তু হঠাৎ করে পার্কটিকে একটি হোটেল বানাতে চান একজন ব্যবসায়ী। আর এই ব্যবসায়ী হলেন ভেরোনিকা লজের বাবা। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব হলে, শহরের পার্কটি বাঁচাতে সকলে এগিয়ে আসেন। মূল ভূমিকায় ছিলেন গল্পের প্রধান চরিত্ররা। তারুণ্যে উদ্যমে তারা শহরের পার্কটি রক্ষার কাছে নেমে পড়ে।
এছাড়াও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কথাবার্তা হলে, সেখানে আর্চি কোনো মত প্রকাশ না করে চুপ থাকে। সে অনাগ্রহ দেখালে তার সহপাঠীরা তাকে রাজনৈতিক বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে। সঙ্গে একটি গানও করে তারা। গানটি হলো “Everything is politics”। যা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের জন্য দারুণ একটি বার্তা।
পরিচালক জোয়া ছবিটিতে যেমন বন্ধুত্বের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছেন ঠিক তেমনভাবে প্রকৃতিকে বাঁচানোর লড়াইও শিখিয়েছেন। সঙ্গে রাজনৈতিক সচেতনতার ভাবধারা প্রকাশ করে অনৈতিকতার বিরোধিতা করা দেখিয়েছেন। আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন ছবিটি দেখলে।
যাদের সুপারস্টার জীবনযাত্রায় আগ্রহ আছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আগ্রহ রয়েছে, তারা চাইলেই সাদামাটা ঘটনায় আবর্তিত এই ছবিটি দেখতে পারেন নেটফ্লিক্সে। গত ৭ ডিসেম্বর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।
দ্য আর্চিসের আইএমডিবি (IMDB) রেটিং ৬.৫। ৪০ কোটি রুপি বাজেটের ছবিটির এ পর্যন্ত ভিউ হয়েছে প্রায় ২৫ লক্ষ। ভারতীয় সিনেমা বিশ্লেষক এক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, নেটফ্লিক্সের মতো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ৪০ লক্ষের বেশি ভিউ হলে সে ছবিটিকে ফ্লপ হয়নি বলা চলে। নেটফ্লিক্স-এ নন-ইংলিশ ছবির তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ২ ঘণ্টা ২৪ মিনিটের এই ছবিটি।