মানবতাবাদী সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৮, ২০২১, ০৯:৫১ পিএম

মানবতাবাদী সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা

আমি এক যাযাবর, মানুষ মানুষের জন্য, গঙ্গা আমার মা-পদ্মা আমার মা গানসহ অসংখ্য মর্মস্পর্শী গান উপহার দিয়েছেন আসামে জন্মগ্রহণ করা শিল্পী ভূপেন হাজারিকা। আজো মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানুষ, বিপন্নতা আর বিহ্বলতা পেরিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়ার সময় আপন মনে গুনগুন করে গেয়ে ওঠে ‘একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?’

১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আসামের সদিয়ায় পিতা নীলকান্ত হাজারিকা এবং মা শান্তিপ্রিয়া হাজারিকার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন সংগীতের এই সুধাকণ্ঠ ভূপেন হাজারিকা। ১৯৪০ সালে তেজপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪২ সালে গুয়াহাটির কটন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন তিনি। ১৯৪৪ সালে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং ১৯৪৬ সালে তিনি এমএ পাশ করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। 'অল ইন্ডিয়া রেডিও'-তে অল্প সময় কর্মরত থাকার পর তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পেলে ১৯৪৯ সালে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ভূপেন হাজারিকা ১৯৫২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৩৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে অসমীয়া মুভি 'ইন্দ্রামালাতি' দিয়ে গুণী এই শিল্পী মাত্র তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। শিশু কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে পদচারণা শুরু হয় তার। পরবর্তীকালে তিনি নিজেই হয়ে ওঠেন অসমীয়া চলচ্চিত্রের একজন গুণী পরিচালক। তার সিনেমা আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে ভূপেন হাজারিকা পরিচিতি পান তার গান দিয়ে। মানুষকে সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করেছেন তার সঙ্গীতমূর্ছনায়। 

অসমীয়া লোকসঙ্গীতে আধুনিকতার স্পর্শও দিয়েছেন তিনিই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর মনে সাহস ও শক্তি এনে দিয়েছিলেন। 

এ কথা অনস্বীকার্য যে ‘হে দোলা হে দোলা’ ‘গঙ্গা আমার মা’, ‘বিম্তীর্ণ দু’পারে’– গান তিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মানুষের প্রাণে একত্ববোধ ও ভাতৃত্বের বোধ সৃষ্টি করেছিল। সঙ্গীতের সম্মোহন শক্তিশালী অস্ত্রের মতো বুকে বিদ্ধ হয়ে উন্মাদনার আঘাত হেনেছিল। বাংলাভাষা ও বাংলাদেশের প্রতি তাঁর প্রাণের টান। 

৮৫ বছর জীবদ্দশায় সিনেমা ও গানে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। ২৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক চলচ্চিত্র 'চামেলী মেমসাহেব' ছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার(১৯৭৫), পদ্মশ্রী (১৯৭৭), 'শ্রেষ্ঠ লোকসঙ্গীত শিল্পী' হিসেবে 'অল ইন্ডিয়া ক্রিটিক অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার' (১৯৭৯),  আসাম সরকারের শঙ্করদেব পুরস্কার (১৯৮৭), দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৯২)সহ জাপানে এশিয়া প্যাসিফিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রুদালী ছবির শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।  ১৯৯৩ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই পুরস্কার পান তিনি।

এছাড়াও পদ্মভূষণ (২০০১), অসম রত্ন (২০০৯), সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার (২০০৯) রয়েছে তার ঝুলিতে। 

২০১১ সালের ৫ নভেম্বর মারা যান কিংবদন্তীতুল্য এই শিল্পী। মানবতা ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের বার্তাবাহক উজ্জ্বল এই মানবমূর্তি ভূপেন হাজারিকা যুগের পর যুগ বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।

Link copied!