মুরাদের বিরুদ্ধে এবার প্রতিবাদী হিরো আলম

বিনোদন প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ১০, ২০২১, ০২:১৫ এএম

মুরাদের বিরুদ্ধে এবার প্রতিবাদী হিরো আলম

অশালীন ও বর্ণবাদী মন্তব্য করাসহ অশ্লীল কথোপকথনের অডিও ফাঁসের ঘটনার পর নৈতিক স্খলনের দায়ে পদত্যাগ করা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে এবার সোচ্চার হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যন্ত জনপ্রিয় হিরো আলম।

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী পদে থাকার সময় বিভিন্ন সিনেমার মহরত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনেক সময় নায়িকাদের  ‘ফিগার’ ও নায়কদের অভিনয় নিয়ে অশালীন মন্তব্য করতেন মুরাদ হাসান। শুধু তাই নয় সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত নাম হিরো আলমকে নিয়েও নানা কটূ কথা বলেেছন। মুরাদ হাসান পদত্যাগ করায়  এবং দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠায় এবার হিরো আলমও প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন।

হিরো আলম তার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিওতে মুরাদ হাসানকে নিয়ে নানা কথা বলেছেন।ভিডিওবার্তায় হিরো আলম বলেন, “সমালোচনা করাই ডা. মুরাদের কাজ। তিনি মনে করেন তিনিই একমাত্র শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, বাকি সবাই নিম্নশ্রেণির লোক। তার মতে আমার গান নাকি নিম্নশ্রেণির লোকদের কাছে শোভা পায়। আমার চেহারা নিয়েও কথা বলেছেন।”

ডা. মুরাদ অনেক দিন ধরে বড় বড় সব হিরো-হিরোইনদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে হিরো আলম আরও বলেন, “ শাকিব ভাই, মৌসুমী আপু, মাহির মতো বড় তারকাদের নিয়ে তিনি বাজে মন্তব্য করেছেন। মানুষ সবাই আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষ মানুষকে যদি ঘৃণা করে তার চেয়ে বড় খারাপ কাজ আর নেই।”

গানের ব্যাপারে তিনি বলেন, ”আমি সংগীতশিল্পী নই, আমি সখের বশে গান করি। গুলশান ১-এর যে অনুষ্ঠানের কথা তিনি বললেন, সে অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি। উনি মিথ্যা বলছেন কি না, জানি না।”

ডা. মুরাদকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে হিরো আলম বলেন, “উনাকে (মুরাদ হাসান) শুধু বহিষ্কার না, আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। কারণ তিনি নারী জাতিকে কলঙ্কিত করেছেন। ক্ষমতা পেয়ে তিনি কথায় কথায় ক্ষমতার বল দেখান, মেয়েদের জিম্মি করে ব্যবহার করেন।”

ভিডিওতে হিরো আলম বলেন, “বেশি বাড়লে মানুষের পতন হয়, এর প্রমাণ এই ডা. মুরাদ। আমার এবং অন্যদের চেহারা নিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন তার জন্য আমি সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করব।”

প্রসঙ্গত, বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠানে হিরো আলমকে নিয়ে কটূক্তি করেন ডা. মুরাদ হাসান। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “একদিন এক অনুষ্ঠানে এসে আমার সামনে গান গাইছিল। গান শেষে আমি তাকে বললাম, তুমি যে গান গাইতে পার না, তোমার কি কোনো লজ্জা-শরম নেই? গান গাইতে সুর, তাল, লয় লাগবে, কণ্ঠ লাগবে। তোমার চেহারা এবং কণ্ঠ আল্লাহ্‌র রহমতে এত সুন্দর, আমার সামনে গান গাওয়ার ধৃষ্টতা তুমি দেখিয়েছ! আমাদের সামনে না দেখিয়ে নিম্নশ্রেণির যারা তোমাকে দেখে তাদের সামনে গিয়ে গাও, গুলশান-বনানীতে এসে গান গেয়ো না।’

অন্যদিকে একটি সিনেমার মহরতে চিত্রনায়িকা মৌসুমীকে কটাক্ষ করে ডা. মুরাদ হাসান বলেন, “কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ অসাধারণ একটি সিনেমা। সুপার-ডুপার হিট। মৌসুমী এখনও অভিনয় করছেন। সবই ভালো, শুধু ওয়েটটা (শারীরিক ওজন) কমাতে হবে। ফিল্মে যারা অভিনয় করবেন, তাদের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, ওয়েটটার (শারীরিক ওজনের) দিকে নজর রাখবেন।”

সম্প্রতি ‘ময়ূরাক্ষী’ সিনেমার মহরতে এসে একই বিষয় নিয়ে আবারও কথা বলেন ডা. মুরাদ হাসান। ওইদিন তিনি বলেন, “এর আগে মৌসুমীকে নিয়ে কথা বলেছিলাম। অনেকেই মাইন্ড করেছেন। মৌসুমীকে টার্গেট করে বলেছি, তা তো নয়। আমি সবাইকে বলেছি। একজন নায়িকার ওয়েট কন্ট্রোল করতে হবে। নায়িকার ভূমিকায় কেউ যদি এমন ‘মোটাসোটা’ হয়, এতে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়।”

ওই অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী শিরিন শিলার দিকে তাকিয়ে তার ফিগারের প্রশংসা করে ডা. মুরাদ হাসান বলেন, “দেখেন শিরিন শিলা সুন্দর পাতলা স্লিম।’

প্রসঙ্গত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে অশালীন ও বর্ণবাদী মন্তব্য করাসহ অভিনেত্রী মাহির সঙ্গে ফোনালাপে তাকে ‘ধর্ষণের হুমকি’ দেওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন মুরাদ হাসান।

মুরাদের সঙ্গে মাহির ফোনালাপ ভাইরাল, নায়ক ইমনকে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদ

এসব ঘটনায় চরম বিতর্কের মুখে পড়েন মুরাদ হাসান। নারী অধিকারকর্মীসহ রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রীর প্রতি। কোনো কোনো বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগও চাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবহিত হওয়ার পর তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ৈ দেন।

Link copied!