‘কল্পনাও করি নাই আমার প্রথম সিনেমাই শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার পাবে’

তুহিন কান্তি দাস

ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২১, ০১:৫৫ এএম

‘কল্পনাও করি নাই আমার প্রথম সিনেমাই শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার পাবে’

এ বছর ১৪তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে তরুণ বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি। তার সিনেমার নাম: মাটি। এটিই তার প্রথম সিনেমা। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত। অথচ তিনি ধারণাও করতে পারেননি যে পুরষ্কার পাবেন। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঋদ্ধ ‘মাটি’র নেপথ্যকথা নিয়ে কথা বলেন দ্য রিপোর্ট এর সাথে।

সিনেমার পোকা তার মাথায়। সেই শৈশব থেকেই। ঋদ্ধ সেই শৈশব কৈশোরের স্মৃতিচারণ এবং তার নির্মিম মাটি চলচ্চিত্র সম্পর্কে বলেন, তখন আমি মাধ্যমিকে পড়ি। সে বছর গ্রামের বাড়িতে ছিলাম ছুটিতে। সেখানে এক বিয়েবাড়িতে বরপক্ষ যৌতুক চাচ্ছিলো কনেপক্ষের কাছে। কনের বাবা ছিল এক দরিদ্র মৃতশিল্পী। তাদের পরিবারের সামর্থ্য ছিল না যৌতুক পরিশোধ করার।

বেশ মনে পড়ে তখন ক্লাস টেনে পড়ি। তখন হঠাত করেই মাথায় এ কাহিনীটা নিয়ে একটা চলচ্চিত্র বানানোর পরিকল্পনা আসে। ক্লাসে বসেই একদিন লিখে ফেলেছিলাম গল্পটা। গল্পটা ঠিক এরকম:

মৃৎশিল্পী কৃষ্ণ পাল বাস করেন বাংলাদেশের এক ছোট গ্রামে। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার সংসার। কৃষ্ণ খুব করে চান তার ছেলে পলাশ মাটির কাজ শিখে তাকে সাহায্য করুক। কিন্তু পলাশ চায় মনমতো অন্য কিছু করতে।

কৃষ্ণ তার মেয়ে রূপাকে খুব কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বড় ঘরের প্রস্তাবও আসে, আসে যৌতুকের চাপ, কৃষ্ণ হিমশিম খেতে থাকেন। এভাবেই আগাতে থাকে সিনেমার গল্প।  

সত্যজিৎ-ঋত্বিকদের সিনেমা দেখে শৈশব কেটেছে ঋদ্ধর। তারেক মাসুদ, জহির রায়হান, মোরশেদেুল ইসলামের সিনেমায় বুঁদ তিনি। সিনেমার নেশা তার বাড়তে থাকে তখন থেকেই। জীবনের গল্প সহজে তুলে ধরা যায় বলে সবসময়ই চলচ্চিত্রের প্রতি এক ধরণের সহজাত আকর্ষণ বোধ করতেন তিনি।

গল্পটি লেখার পর থেকে প্রতি বছর তার মনে হয়েছে, আরেকটু গুছিয়ে নেবেন। একটু সময় নিয়ে পরের বছর বানাবেন স্বপ্নের সিনেমাটি। গত বছর হুট করে সিদ্ধান্ত নেন, এবারই। না বানালে আর কখনই না।

যে-ই কথা সে-ই কাজ। গল্প নিয়ে পরিচিত সিনেমাপ্রেমী ভাইয়া-আপুদের সাথে কথা বলেন, মতামত নিতে শুরু করেন। মায়েরও সহযোগিতা নেন স্ক্রিপ্ট তৈরির কাজে। ব্যক্তিগত যোগাযোগের ভেতরেই সিনেমাটোগ্রাফার খুঁজে পেয়ে যান এক সময়। লোকেশন ফিক্সড হয়, শুরু হয় শ্যুটিং।

FB_IMG_1612615751879

শুটিং শেষে এডিটিংয়ের কাজ চলছিল। তখনই জানতে পারেন, করোনা মহামারির মধ্যেও শিশু চলচ্চিত্র উৎসব হবে এবার। এর মাঝেই সিনেমা সম্পাদনাসহ পোস্টপ্রোডাকশনের আনুসঙ্গিক সব কাজ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। অবশেষে কাজ শেষ করে উৎসবে জমা দেন সিনেমা ‘মাটি।’ প্রাথমিক তালিকাতে জায়গা পেয়ে যায় সিনেমাটি। ভেবেছিলেন ‘ওই পর্যন্তই।’

কিন্তু সর্বশেষ জুড়ি বোর্ড যখন ঘোষণা করল, ’মাটি’ এ বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র! তিনি বিস্মিত হয়ে যান! নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ‘কোনদিন  কল্পনাও করি নাই আমার প্রথম সিনেমাটিই শ্রেষ্ঠ শিশু চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়ে যাবে।’

ঋদ্ধ দেশের সিনেমা নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। তিনি মনে করেন, আজকের তরুণরা ভাল ভাল সিনেমা বানাবেন। একদিন বাংলাদেশি সিনেমা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। একদিন নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুক্তি পাবে এ দেশের সিনেমা।

 

Link copied!