মেসির জোড়া গোলে আর্জেন্টিনার দারুন জয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ১২:২১ পিএম

মেসির জোড়া গোলে আর্জেন্টিনার দারুন জয়

ছবি: সংগৃহীত

কয়েকটি সুযোগ নষ্ট হওয়ার পর ডেডলক ভাঙার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করলেন হুলিয়ান আলভারেস। কিন্তু নিজে শট না নিয়ে তিনি খুঁজে নিলেন অধিনায়ককে। প্রতিপক্ষের একাধিক খেলোয়াড়ের মাঝে ঠাণ্ডা মাথায় বল ধরে বিশ্বসেরা ফুটবলার জালে পাঠাতেই গ্যালারিতে যেন এক বোমা ফাটল, হাজারো মানুষের মুখে তখন একটাই নাম- মেসি, মেসি, মেসি। পরে আরেকটি গোল করলেন তিনি, অবদান রাখলেন সতীর্থের গোলেও। বিশেষ উপলক্ষ এভাবেই আপন রূপে রাঙালেন তিনি, দলকে জিতিয়ে, সমর্থকদের আনন্দের সাগরে ভাসালেন লিওনেল মেসি।

বুয়েন্স এইরেসের মনুমেন্তালে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে শেষ হওয়া ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির জোড়া গোলের মাঝে বদলি নেমে অন্যটি করেন লাউতারো মার্তিনেস।

২০২৬ বিশ্বকাপের টিকেট অনেক আগেই নিশ্চিত হওয়ায়, কার্যত আর্জেন্টাইনদের কাছে এই ম্যাচের তেমন গুরুত্ব ছিল না। তবে, দুদিন আগে মেসি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিলেন এটাই হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ঘরের মাঠে তার শেষ, তখন এটা হয়ে উঠল গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ উপলক্ষ।

দেশের মাটিতে দলের সেরা তারকার শেষটা উজ্জ্বল করতে তার সতীর্থরাও নিজেদের মেলে ধরলেন। ফলাফল-প্রতিপক্ষ ভেনেজুয়েলা তেমন কোনো লড়াইয়ের সুযোগই পেল না। ৭৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ১৭টি শট নিয়ে ৯টি লক্ষ্যে রাখতে পারে আর্জেন্টিনা। যেখানে ভেনেজুয়েলা নিতে পারে মাত্র পাঁচটি শট, এর কোনোটিই ছিল না লক্ষ্যে।

ম্যাচ শুরু হতেই আক্রমণ শাণায় ভেনেজুয়েলা, ১২ সেকেন্ডের মধ্যে ঢুকে পড়ে আর্জেন্টিনার ডি-বক্সে। সেই যাত্রায় যদিও উল্লেখযোগ্য আর কিছু হয়নি।

এরপর একচেটিয়া পজেশন ধরে রেখে আক্রমণ শুরু করে স্বাগতিকরা। চতুর্থ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগও তৈরি করে তারা। থিয়াগো আলমাদার পাস ধরে ডি-বক্সেই ঢুকেই বুলেট গতির শট নেন জুলিয়ান আলভারেস, দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন রাফায়েল রোমো।

কিছুক্ষণ পর কয়েক মিনিটের মধ্যে দুবার প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের পরীক্ষা নেয় আর্জেন্টিনা। ২২তম মিনিটে নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর কোনাকুনি শট পা দিয়ে আটকানোর পর, মেসির ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ফেরান রোমো।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের আরেকটি আক্রমণ রুখতে মেসিকে ফাউল করে বসেন ভেনেজুয়েলার ফরোয়ার্ড এদুয়ার্দো। তবে ২৬ মিটার দূর থেকে ফ্রি কিকে তেমন কিছু করতে পারেননি আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।

৪০তম মিনিটে আসে সেই বিশেষ ক্ষণ, গোল করেন মেসি এবং উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো মনুমেন্তাল।

মাঝমাঠে প্রতিপক্ষ পজেশন হারালে বল ধরে আক্রমণ শাণায় আর্জেন্টিনা। সতীর্থের লম্বা উঁচু করে বাড়ানো বল ডি-বক্সের বাইরে আলভারেস এক পায়ে দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডজে ফাঁকি দেন একজনকে, অনায়াসে শট নিতে পারতেন তিনি; কিন্তু তা না করে ছোট পাসে খুঁজে নেন মেসিকে। প্রথম ছোঁয়ায় বল ধরে বাঁ পায়ের চিপ শটে গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে ঠিকানা খুঁজে নেন তিনি।

বিরতির আগেই ব্যবধান বাড়তে পারতো। ডি-বক্সে ঢুকে বাঁ দিক থেকে জোরাল কোনাকুনি শট নেন আলমাদা, দারুণ ক্ষিপ্রতায় তা রুখে দিয়ে দলের আশা বাঁচিয়ে রাখেন কোমো।

বিরতির পর আরও বেশি সময় বল দখলে রেখে মুহুর্মুহু আক্রমণ করতে থাকে আর্জেন্টিনা। ৬৫তম মিনিটে নিকো গনসালেসের উদ্দেশ্যে দারুণ এক থ্রু পাস বাড়ান মেসি। বল ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণেও নেন নিকো গনসালেস; কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি তিনি।

৭৪তম মিনিটে আলভারেসের বদলি নামার দুই মিনিটের মধ্যে গোলের দেখা পেয়ে যায় মার্তিনেস। এই গোলেও জড়িয়ে মেসির নাম।

মাঝমাঠে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা তখনও ঠিক প্রস্তুত হয়ে ওঠেনি, কিন্তু রেফারি বাঁশি শুনেই তড়িৎ থ্রু পাস বাড়ান মেসি। বলের পেছনে ছুটে বাইলাইনের কাছ থেকে কাটব্যাক করেন গনসালেস আর ডাইভিং হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ইন্টার মিলান ফরোয়ার্ড মার্তিনেস।

চার মিনিট পরই নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন মেসি। আলমাদার পাস পেনাল্টি স্পটের কাছে ফাঁকায় পেয়ে প্রথম ছোঁয়াতেই বল জালে পাঠান ইন্টার মায়ামি তারকা।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৯৪ ম্যাচে মেসির গোল হলো ১১৪টি। এর মধ্যে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে হলো ৩৬টি। সেই সঙ্গে ৬১টি অ্যাসিস্টও করেছেন রেকর্ড আটবারের ব্যালন দর জয়ী।

এই গোলের পরই গ্যালারিতে শুরু হয়ে যায় একরকম মেসি নামের উৎসব। কিছু সমর্থক গলা ফাটিয়ে গান গাইতে শুরু করেন, অন্যরা তাদের সঙ্গে তাল মেলালেন।

আর শেষের বাঁশি বাজতেই শুরু হয় আতশবাজি। তার মাঝেই সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে দর্শকদের কাছে যান মেসি, হাত উঁচিয়ে জবাব দেন তাদের ভালোবাসার।

বয়স হয়ে গেছে ৩৮ বছর। তার পায়ে অবশ্য বয়সের কোনো ছাপ পড়েনি বললেই চলে। ক্লাব হোক কিংবা জাতীয় দল, এখনও তিনি মাঠে নামলেই গোলের নেশায় মেতে ওঠেন, নিয়মিত। তবে ২০৩০ বিশ্বকাপ অনেক দূরের পথ, তাই বিশ্বকাপ বাছাইয়েও তাকে আর দেখা যাবে না নিশ্চিতভাবেই। হয়তো আগামী বিশ্বকাপের পর বুটজোড়াই তুলে রাখবেন তিনি।

তাই দেশের মাঠে আর কখনও প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে লিওনেল মেসিকে দেখার সম্ভাবনা খুব কমই।

Link copied!