জুন ২০, ২০২৫, ০১:০৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বড় টুর্নামেন্ট মানেই অপ্রত্যাশিত নাটকীয়তা, যেখানে শক্তিশালী পরাশক্তিরাও হোঁচট খায় দুর্বল বিবেচিত দলের কাছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ঐতিহাসিক রোজ বোলে ক্লাব বিশ্বকাপে দেখা গেল তেমনই এক রূপকথা। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)কে হারিয়ে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বোতাফোগো গড়ল অনন্য এক ইতিহাস।
বাংলাদেশ সময় সকালে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচের আগে খুব কম মানুষই ভাবতে পেরেছিলেন, বোতাফোগো পিএসজির বিপক্ষে জয় তুলে নিতে পারে। কারণ ছিল যথেষ্ট—ট্রেবলজয়ী পিএসজির দুর্দান্ত ফর্ম, তারকাবহুল স্কোয়াড, আর লুইস এনরিকের নান্দনিক ও কার্যকরী ফুটবল দর্শন।
তবে সব অনুমানকে মিথ্যা প্রমাণ করে ম্যাচের ৩৬ মিনিটেই আসে নাটকীয় মুহূর্ত। সতীর্থ জেফারসন সাভারিনোর দুর্দান্ত পাস থেকে ইগর জেসুসের লক্ষ্যভেদে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বোতাফোগো, যা শেষ পর্যন্ত ম্যাচের একমাত্র ও নির্ণায়ক গোল হিসেবেই দাঁড়ায়।
এই জয় শুধু ম্যাচ জেতানোই নয়, বোতাফোগোকে গ্রুপ পর্বে ২ ম্যাচে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলোতেও পৌঁছে দেয়। এর আগে তারা সিয়াটল সাউন্ডার্সকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল।
পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে পিএসজি ম্যাচে আধিপত্য দেখালেও (৭৫% বল দখল, ১৬ শট) বোতাফোগোর কার্যকরী ফুটবলই শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দেয়। মাত্র ২৫% বল দখলে রেখেও বোতাফোগো তাদের চারটি শটই লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয়, যার একটি রূপ নেয় স্বর্ণালী গোলে।
বোতাফোগোর রক্ষণভাগ ছিল অনবদ্য—পিএসজির ফরোয়ার্ডরা যেন বন্দী হয়ে গিয়েছিলেন সুসংগঠিত প্রতিরক্ষার জালে। প্রতি-আক্রমণের কৌশল ও দৃঢ় মানসিকতায়ও বোতাফোগো ছিল এগিয়ে।
অপ্টার সুপারকম্পিউটার যেখানে পিএসজির জয়ের সম্ভাবনা দেখিয়েছিল ৮১.৯ শতাংশ, সেখানে এমন এক ফলাফলের মাধ্যমে পুরো ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিল দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নরা।
৫৩ হাজারেরও বেশি দর্শকের সামনে পাওয়া এই জয়ে বোতাফোগো গড়েছে একাধিক রেকর্ড—ফিফা আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নকে হারাল কনমেবলের কোনো ক্লাব। একই সঙ্গে ১৯৮৪ সালে পিএসজির বিপক্ষে প্রথম সাক্ষাতে পাওয়া জয়টিও এখন অতীতের অংশ নয়, বরং ইতিহাসের ধারাবাহিকতা।
দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাবগুলোর এবারের বিশ্বকাপ অভিযানেও এখন পর্যন্ত অপরাজিত থাকার কীর্তি বজায় রইল—৮ ম্যাচে ৫ জয় ও ৩ ড্র।
এই ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক ইগর জেসুস গোল করে ও উদযাপনে নজর কাড়েন। ম্যাচ শেষে আবেগঘন কথায় তিনি বলেন,
“যখন নিরাপত্তাবেষ্টনী বেয়ে উঠে উদযাপন করছিলাম, চারপাশটা স্বপ্নের মতো লাগছিল। আমি কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি, যারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। এখানে আমি যা কিছু গড়েছি, তা নিয়ে আমি গর্বিত।”
এটাই ফুটবলের সৌন্দর্য—যেখানে অসম্ভব বলে কিছু নেই। বোতাফোগো প্রমাণ করল, সঠিক কৌশল, সাহস ও সংকল্প থাকলে পরাশক্তিকেও হারানো সম্ভব।