সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫, ০১:২৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
‘হ্যাঁ, তোমরা ভারত ক্রিকেট দল। হ্যাঁ, তোমরা বিশ্বের সেরা দল…কিন্তু খেলা শেষে হাত মেলাওনি। এতেই তোমাদের আসল রূপ প্রকাশ পায়! পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা অপেক্ষা করছিল, কিন্তু ভারতের খেলোয়াড়েরা সোজা ড্রেসিংরুমে চলে গেল! আইসিসি কোথায়’—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে কথাগুলো লিখেছেন রশিদ লতিফ।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক লতিফ ভালো করেই জানেন, আইসিসির কাছে ‘সুবিচার’ চেয়ে লাভ নেই। কারণ, সেখানকার শীর্ষ পদে বসে আছেন এক ভারতীয়—জয় শাহ। তবু বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ক্রিকেটীয় চেতনা সমুন্নত রাখার আকুতি জানিয়েছেন লতিফ। খবর প্রথম আলো।
খেলাধুলায় দুই দলের বা দুই পক্ষের হাত মেলানো শুধু তো আর আনুষ্ঠানিকতা নয়। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেও এটি পরস্পরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক। ক্রিকেটে টসের সময় দুই অধিনায়ক সাধারণত হাত মেলান। ফল যা–ই হোক, দুই দলের খেলোয়াড়েরা হাত মিলিয়েই খেলার ইতি টানেন।
কিন্তু দুবাইয়ে গত রাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের গ্রুপের পর্বের ম্যাচে ভারত সেই রীতি মানেনি। সালমান–ফখর–আফ্রিদিদের সঙ্গে করমর্দন দূরে থাক; তাঁদের কেউ যেন দেখা করতে না পারেন, সে জন্য ড্রেসিংরুমে ফিরেই দরজা বন্ধ করে দেয় সূর্যকুমার যাদবের দল। ভারতীয়দের এই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানিদের অসম্মান করার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে নতুন করে বিভেদের দেয়াল তৈরি করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের এমন আচরণে হতাশ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসির ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের কাছে অভিযোগও জানিয়েছে।
পিসিবির এক কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আম্পায়াররা ভারতীয় খেলোয়াড়দের খেলা শেষে হাত না মিলিয়েই মাঠ ছাড়তে দিয়েছেন। আমাদের টিম ম্যানেজারের প্রতিবাদের পর ম্যাচ রেফারি এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’
পিসিবি আরও জানিয়েছে, ম্যাচ শুরুর আগে নিয়মকানুন নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। কর্মকর্তাদের দাবি, টসের সময় ম্যাচ রেফারি পাইক্রফটই দুই অধিনায়ককে হাত না মেলানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে খেলা শেষে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। পিসিবির মতে, এই ভুল বোঝাবুঝির কারণে তাদের খেলোয়াড়েরা মাঠে অযথাই অপেক্ষা করে লজ্জায় পড়েছেন।
পিসিবির চেয়ারম্যান ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) প্রধান মহসিন নাকভি ভারতীয়দের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন, ‘আজকের (গত রাতের) খেলায় খেলোয়াড়সুলভ মনোভাবের সম্পূর্ণ অভাব দেখা গেল। খেলায় রাজনীতি টেনে আনা খেলাধুলার মূল চেতনার পরিপন্থী।’
রশিদ লতিফ কথা বলেছেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গেও, ‘যুদ্ধ আগেও হয়েছে, কিন্তু আমরা সব সময় হাত মিলিয়েছি। এ ঘটনা সারা জীবনের জন্য দাগ হয়ে থাকবে।’
পাকিস্তানের হয়ে ৩৭ টেস্ট ও ১৬৬ ওয়ানডে খেলা সাবেক এই উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান আরও বলেন, ‘যুদ্ধ বা পেহেলগাম হামলার বিষয়ে আপনারা আপত্তি তুলতেই পারেন, সেটি যৌক্তিক। কিন্তু মাঠে নামলে খেলাটা সঠিক উপায়ে খেলতে হবে। যদি পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা থাকে, তাহলে দোষীদের ধরুন। কিন্তু ভারত তো যুদ্ধ করেনি, অর্ধেক পথে ছেড়ে দিয়েছে। ভারতের উচিত ছিল শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করা, পিছিয়ে আসা নয়।’
গত রাতের ম্যাচে ভারতের কাছে পাত্তাই পায়নি পাকিস্তান। সালমান–আফ্রিদিদের দেওয়া ১২৮ রানের লক্ষ্য ৭ উইকেট ও ২৫ বল বাকি রেখে টপকে গেছে সূর্যকুমারের দল। মান বিবেচনায় ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেটের মধ্যে এখন কতটা ফারাক, এই ফল তা নতুন করে বুঝিয়ে দিয়েছে।
দলের যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের সমালোচনাও করেছেন শোয়েব আখতার। তবে পাকিস্তানের কিংবদন্তি এই ফাস্ট বোলারেরও ভারতীয়দের আচরণ পছন্দ হয়নি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রীড়া চ্যানেল পিটিভি স্পোর্টসের গেম অন হে অনুষ্ঠানে শোয়েব বলেছেন, ‘ভারতকে অভিনন্দন, তোমরা দারুণ খেলেছ। আমরা তোমাদের সম্পর্কে ভালো কথাই বলছি, কিন্তু চাইলে সমালোচনাও করতে পারি। তোমরা সৌজন্য দেখাও, হাত মেলাও। ঝগড়া তো প্রত্যেক ঘরেই হয়। তাই বলে সেটিকে আরেক ধাপে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। খেলার সঙ্গে রাজনীতি টেনে এনো না।’
গত রাতের অনায়াস জয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোর প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে ভারত। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের শেষ ম্যাচ আগামী বুধবার স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। সুপার ফোরে উঠতে হলে এই ম্যাচে পাকিস্তানকে জিততেই হবে।