পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনান্ডোর জীবনের ৩৭টি মজার গল্প। ফুটবলের গ্ল্যামারবয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর রোনাল্ডোকে বলা হয় ফুটবলে আর্শিবাদপ্রাপ্ত তারকা। রোনাল্ডোর ৩৭তম জন্মদিনে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন। ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী পর্তুগালের মাদেইরার ফানচালে জন্ম গ্রহণ করেন রোনাল্ডো।
৫বার ব্যালন-ডিঅর জেতা এ তারকার ৩৭তম জন্মদিনে জানা অজানা ৩৭টি তথ্য ও ঘটনা:
১. বাবা জস ডেসিন আভেরো ৪০তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের নাম অনুসারে ছেলের নাম রাখেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। ছোটবেলা থেকেই প্রেসিডেন্টের ভক্ত রোনাল্ডো নামের প্রতি যে সর্বোচ্চ সুবিচারটাই করেছেন তা কিন্তু বলাই যায়।
২. ছোটবেলায় মা মারিও ডলোরেস এভেরিও রোনাল্ডোকে ‘ক্রাই বয়’, ‘লিটল বয়’ নানা নামে ডাকতেন। তাকে নিয়ে তার মায়ের স্মৃতিচারণ ছিলো কিছুটা এমন, “যখন স্কুল থেকে রোনাল্ডো ফিরতো তাকে আমি বলতাম হোমওয়ার্ক শেষ করতে, রোনাল্ডো বলতো, আমি এখনো কিছু খাইনি, আমি রান্না করতে গেলে জানলা দিয়ে একলাফে বাইরে চলে যেতো সে, ফিরতো একেবারে দেরী করে।’ স্কুলে বন্ধুরা কেউ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও কান্না করে দিতো রোনাল্ডো, আর লোকজন তাকে ক্রাই বল, লিটল বয় এসব নামে ডাকতো কারণ কেউ তাকে ধরতে পারতো না।”
৩.ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর জীবনী নিয়ে গুইলেম বেলাগ এর লেখা আত্নজীবনীমূলক বই ক্রিস্টিয়ানো রোনান্ডো, দ্য বায়োগ্রাফি। বইতে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো তার তারকা হওয়ার পেছনে এক বন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। পর্তুগালের তরুণ দলের খেলোয়াড় তখন রোনাল্ডো। লিসবনভিত্তিক স্পোটিং ক্লাব স্পোটিং সিপির গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচে বন্ধু আলবার্ট ফান্ট্রের ত্যাগের কথা বলেছেন ক্রিস্টিয়ানো। ওই ম্যাচে বন্ধু আলবার্ট ও রোনাল্ডো দুজনই ১-১ গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে গোলরক্ষককে একা পেয়ে আরেকটি গোল করার সুযোগ পেয়েও পাশে থাকা রোনাল্ডোর কাছে বলটি পাস করে দেন আলবার্ট। ফলে ওই ম্যাচে আলবার্ট থেকে ১টি গোল বেশি করেন রোনাল্ডো। এর ফলে একাডেমীর ঘোষণা অনুযায়ী ম্যাচে বেশি গোল করার জন্য রোনাল্ডোকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। নিজে না করে রোনাল্ডোর কাছে বল পাস করা নিয়ে বন্ধুর কাছে জানতে চাইলে আলবার্ট বলেন, “তুমি আমার থেকে ভাল খেলোয়োড়”।
৪.শরীরের কোথাও ট্যাটু না থাকা এ তারকার খ্যাতি রয়েছে রক্তদাতা হিসেবে। পর্তুগিজ এ তারকা প্রায় তার ভক্তদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রাম ও টুইটারে রক্ত দেওয়ার আহবান জানান।
৫. রোনাল্ডোর বাবা হোসে দিনিস এভেইরো পর্তুগিজ আর্মিতে চাকরি করতেন। চাকুরিরত অবস্থায় তার বাবা হোসে দিনিস ১৯৭৫ সালে এ্যাংগোলা ও মোজাম্বিকে দুটি যুদ্ধে অংশ নেন। এ্যাংগোলার যুদ্ধে হেরে যায় পর্তুগিজ। যুদ্ধ হেরে দেশে ফিরে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন দিনিস এভেইরা। কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় তখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। পর্তুগালে তখন চাকুরির বাজার একেবারেই সীমিত দীর্ঘ সময় বেকার থাকেন এভেইরা। হতাশায় নেশাগ্রস্থ রোনাল্ডোর বাবা মাত্র ৫১ বছর বয়সে মারা যান। রোনাল্ডো বারবারই আক্ষেপ করে বলেছেন, “তারকা রোনাল্ডোকে শিরোপা জিততে দেখে যেতে পারেননি বাবা, তাকে শতভাগ চেনার সুযোগ আমার হলো না, সুযোগ হলোনা স্বাভাবিকভাবে বাবার সাথে কথা বলার”।
৬.আর্মি থেকে অবসর নেওয়ার পর রোনাল্ডোর প্রথম ক্লাব এন্ড্রোরিনহায় কিটম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন রোনাল্ডোর বাবা। কিটম্যান হিসেবে খেলোয়াড়দের পোশাক সংরক্ষণ করা, খেলার সামগ্রী সংরক্ষণ করে রাখার কাজ করেছেন তিনি। মূলত রোনাল্ডো ওই ক্লাবের খেলোয়াড় হওয়ায় তার বাবা চাকুরিটি পান।
৭. মজার বিষয় হলো, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সাবজেক্টই ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ওকানাগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা রোনাল্ডো বিষয়ে পড়ালেখা করার সুযোগ পান। কোর্সে রোনাল্ডোর ব্যক্তিজীবন, খেলোয়াড় জীবন এবং সুপারস্টার হয়ে ওঠা নিয়ে নানা গল্প তুলে দেওয়া হয়েছে।
৮.রোনাল্ডোর নামে একটি জাদুঘর উৎসর্গ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে জন্মস্থান মাদেইরার ফানচালে মুসেউ-সিআরসেভেন নামের একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। জাদুঘরে রোনাল্ডোর জীবনের নানা সময়ের ছবি, ভিডিও আছে। এফসি এ্যানডোরিনহা, ন্যাশনাল দ্য মাদেইরা, স্পোটিং সিপি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়েল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস এফসি এবং দ্য পর্তুগাল ন্যাশনালের টিম থেকে পাওয়া বিভিন্ন ট্র্যফি আছে এ যাদুঘরে। যাদুঘরের পাশেই রোনাল্ডো এবং পেসটানা গ্রুপের মালিকানাধীন একটি হোটেল রয়েছে।
৯. তাকিকারডিউ নামে হার্টের এক বিশেষ সমস্যা ছিলো রোনাল্ডোর। মিনিটে ১০০ বারের বেশি হৃদস্পন্দন করা তার হার্টের সফল অপারেশন করার পরই তার খেলোয়াড় জীবন নিরাপদ হয়। ১৫ বছর বয়সে তার এই সমস্যা ধরা পড়ে। আশংকা দেখা দিয়েছিলো তিনি খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন কিনা। এদিক দিয়ে বলা যায় রোনাল্ডোভক্তরা ভাগ্যবান। তা না হলে সুপারস্টার রোনাল্ডোবিহীন ফুটবল দেখতে হতো বিশ্বকে!
১০. বলা হয়ে থাকে বাচ্চাদের মত হঠাৎ রেগে যান ক্রিস্টিয়ানো। ১৪ বছর বয়সে শিক্ষকের উপর চেয়ার ছুড়ে মেরে স্কুল থেকে বহিস্কার হন তিনি। রোনাল্ডোর দাবি, তাকে অসম্মান করে ছিলেন ওই শিক্ষক।
১১. এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ক্লাবের ১৭ জন ম্যানেজারের অধীনে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন রোনাল্ডো। স্পোাটিং সিপিতে ২০০২ সালে প্রফেশনাল ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকে তিনি স্যার এলেক্স ফারগুসান, হোসে মরিনহো, রাফায়েল বেনিটেজ, জিনেদিন জিদানের মত নামকরা কোচের অধীনে খেলেছেন।
১২. হিমায়িত মাছ, টমোটো, সিদ্ধ ডিম, পেয়াজ, জলপাই ইত্যাদি মিশ্রণে রান্না করা পর্তুগিজ খাবার বাচালহো রোনাল্ডোর প্রিয় খাবার।
১৩. রোনাল্ডোকে নিয়ে একটি লাইন রয়েছে কানাডিয়ান বিখ্যাত গায়ক ড্রেকের এ্যালবাম স্কোরপিয়ান-এ। গানের লাইনটি হলো, “ওয়ে দিস শিট সেট আপ, আই লিভ লাইক রোনাল্ডো, বাট আই নেভার বিন ইন মাদ্রিদ”।
১৪. বেশি পারিশ্রমিকের কারণে রোনাল্ডোর খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজোড়া। ২০০৩ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর সঙ্গে চুক্তি করার সময় আর্সেনাল ও লিভারপুলও রোনাল্ডোর সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহী ছিলো। তবে অর্থের দৌড়ে এগিয়ে থাকে ম্যানইউ।
১৫. একটি গ্যালাক্সির নামকরণ করা হয়েছে পর্তুগিজ এ সুপারস্টারের নামে। কসমস রেডশিফট সেভেন গ্যালাক্সি অথবা সিআরসেভেন গ্যালাক্সি নামে এটি পরিচিত।
১৬. একটি বিমানবন্দরের নাম আছে রোনাল্ডোর নামে। ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ানস ট্র্যফি জয়ের পর ২০১৬ সালে জন্মস্থান পর্তুগালের মাদেইরাতে ক্রিসটিয়ানো রোনালডো নামে ওই বিমানবন্দরটির নামকরণ করা হয়েছে।
১৭. দাতব্য সংস্থার সংস্থা নিজের একটি ব্যালন ডি-আর বিক্রি করে দিয়েছেন রোনাল্ডো। ২০১৭ সালে ২০১৩ সালের ব্যালন ডি-অরের একটি রেপলিকা ৬ লক্ষ ইউরোতে অসুস্থ শিশুদের জন্য কাজ করা- ‘মেক এ উইশ’ নামক একটি ফাউন্ডেশনের জন্য বিক্রি করেন।
১৮. ব্রিটিশ ফিল্ম মেকার এনথনি ওয়ানকে এই তারকার ফুটবলারকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টরি মুভি তৈরি করেছেন। ক্রিস্টিয়ানোর জীবন নিয়ে তৈরি করা এ ফিল্মটি ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যে মুক্তি পায়।
১৯. রোনাল্ডোর ভক্ত সংখ্যা যে নেহাতই কম নন সেটাতো সবারই জানা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে সর্বোচ্চ ফলোয়ার রয়েছে ক্রিস্টিয়ানোর। রোনাল্ডোর ফলোয়ার সংখ্যা ৩৯৭ মিলিয়ন। ইনস্টাগ্রামে আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসির ফলোয়ার রয়েছে ৩০৫ মিলিয়ন।
২০. টুইটারেও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফলোয়ার থাকা খেলোয়াড় রোনাল্ডো। এখানে ক্রাইবয়ের ফলোয়ার সংখ্যা ৯৭ মিলিয়ন।
২১. ইনস্টাগ্রাম, টুইটারের মত ফেসবুকেও রোনাল্ডোর রয়েছে সর্বোচ্চ ফলোয়ার। ফেসবুকে রোনাল্ডোর ফলোয়ার ১৫০ মিলিয়ন।
২২.সিআরসেভেন নামে নিজের একটি ব্রান্ড চালু করেছেন এ পর্তুগিজ সুপারস্টার। সুগন্ধি সামগ্রিসহ বিভিন্ন পোশাকে এখন এ ব্রান্ড ব্যবহার করা হচ্ছে।
২৩.লন্ডনের মাদাম তুসো জাদুঘরেও রয়েছে রোনালডোর স্ট্যাচু। ভক্তরা এ জাদুঘর ভ্রমণের সময় তার স্ট্যাচুর সাথে ছবি তুলে থাকেন।
২৪. পুস্কাস পুরস্কার জেতা প্রথম খেলোয়াড় রোনাল্ডো। এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সর্বোচ্চ গোল দেওয়ার জন্য এ পুরস্কার দেয়া হয়।
২৫. ক্যারিয়ারে মোট ৩৪টি ট্রফি জিতেছেন রোনাল্ডো। যার মধ্যে ৩২টি ক্লাব ফুটবলে এবং ২টি জিতেছেন পর্তুগিজ ন্যাশনাল টিমের হয়ে।
২৬. সর্বোচ্চ সংখ্যাক আন্তর্জাতিক গোল করা খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালডো। আন্তর্জাতিক ফটবলে রোনাল্ডোর গোল সংখ্যা ১১৫টি।
২৭. দেশের হয়ে খেলে অধিকাংশ দেশের জাতীয় ফুটবল দলের বিরুদ্ধেই গোলের রেকর্ড আছে রোনাল্ডোর। ৪৮টি দেশের জাতীয় ফুটবল দলের বিরুদ্ধে গোল করার রেকর্ডটিও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর ঝুলিতে।