বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালবাসা দিবসে ভালবাসায় একাকার বাঙালি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০৩:১৬ পিএম

বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালবাসা দিবসে ভালবাসায় একাকার বাঙালি

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় ‘ ফুল ফুটুক, আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ‘বসন্ত নিয়ে জনপ্রিয় একটি গান হচ্ছে  ‘বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির  ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি  আসে সই গো, বসন্ত বাতাসে’।

কবি গুরু রবীন্ত্রনাথ ঠাকুরও বসন্ত নিয়ে লিখেছেন অনেক কবিতা এবং গান।পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত আমাদের সাংস্কৃতিক অনুসঙ্গ যেমন, তেমনি এ মাসের রাজনৈতিক গুরুত্বও অসীম। ফাগুনে শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ মনে করিয়ে দেয় বায়ান্নর ফাগুনের শহীদদের কথা। তাদের রক্তের সোপান বেয়ে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তাই ফাগুন বাঙ্গালীর দ্রোহেরও মাস।

শীতের রুক্ষতাকে পিছনে ফেলে প্রকৃতিকে আবার নতুন রূপে সাজিয়ে তোলার আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছে বসন্ত। গাছে গাছে নতুন পাতা শোভা পাচ্ছে। ফুলের মুকুল দেখা যাচ্ছে। পাখি গান গাইছে। আর বাতাসে ভাসছে মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ। প্রজাপতিরা রঙিন ডানা মেলে জানাচ্ছে ঋতুরাজের আগমনী বার্তা। বসন্ত শুধু প্রকৃতিতেই নয় মানুষের মনেও জাগায় প্রাণের ছোঁয়া। তাই বসন্তের প্রথম দিনটিকে উদযাপন করতে সবাই মেতে ওঠে উৎসবে।স্নিগ্ধ বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে আজ বাঙালির মনে।

ফাল্গুন নামটি এসেছে মূলত ফাল্গুনী নামে নক্ষত্র থেকে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সালের দিকে চন্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষ উভয়ই মেনে চলা হতো। ফাল্গুন ছিল পূর্ণ চন্দ্রের মাস। ১৯৫০-১৯৬০ দশকেই আনুষ্ঠানিকভাবে পহেলা ফাল্গুন পালন শুরু হয়। সেসময় বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের সংস্কৃতি থেকে নিজেদের আলাদা করতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার পাশাপাশি বাঙালি নিয়মে পহেলা ফাল্গুন পালন শুরু করে। 

প্রতি বছরই দিনক্ষণ গুনে গুনে বসন্ত বরণের অপেক্ষায় থাকে বাঙালি। এ যেন বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম এক উৎসব। আমেজের মায়া। দেশজুড়ে তারুণ্যের জোয়ার নামে। বাঙালি নারীরা এই দিনে শাড়ি পড়ে বের হয়েছে এবং মাথায় অনেক ফুলের মালা পরেছে। এদিন ছেলেরাও পাঞ্চাবি পরে বের হয়েছে বসন্তকে বরণ করে নিতে।

বসন্তকে বরণ করে নিতে বাঙালি নানা আয়োজন করে। মেলা, এমনকি পিঠাপুলির উৎসবেও মেতে উঠে বাঙালি। মন রাঙায় বসন্তের রঙ-বেরঙে। প্রাচীন আমল থেকেই বাংলার অঞ্চলে পালিত হয় বসন্ত উৎসব।

পয়লা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস গত কয়েক বছর একই দিনে পড়েছে। আগে পয়লা ফাল্গুন পড়ত ১৩ ফেব্রুয়ারি, তার পরদিন অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংস্কার করায় এই পরিবর্তন।

তবে  ভালোবাসার জন্য কোনো বিশেষ দিনক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না।  তবু বেশ কয়েক বছর থেকেই পশ্চিমা রীতির ’ভ্যালেন্টাইন ডে’ বা ভালোবাসা দিবস বেশ উৎসাহের সঙ্গেই উদ্‌যাপিত হচ্ছে আমাদের দেশে। বিশেষত তরুণ প্রজন্ম তাদের প্রিয়জনের কাছে হৃদয়ের গোপন কথাটি বলার জন্য এই দিনকে বেছে নেন। ভালোবাসা দিবসে যুগলের বেড়াতে যাওয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়া, উপহার বিনিময় আর মধুর বচনে প্রণয়ের কথোপকথনে কাটিয়ে দেন দিনটি।

অনুষ্ঠানমালা

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার থাকছে বসন্ত উৎসবের আয়োজন। ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’ স্লোগানে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের আয়োজনে এবার ২৮তম বছরে পদার্পণ করছে এই উৎসব। সকাল সাতটায় উৎসবের শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলার সকাল। বিকেলে বকুলতলার পাশাপাশি উৎসবের কার্যক্রম চলবে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ্‌ পার্ক ও উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু উন্মুক্ত মঞ্চে।

Link copied!