চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ আরও ১১ জনকে রাজধানীতে এনে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
এনিয়ে রবিবার রাত ১০ টা পর্যন্ত মোট ১৪ জন দগ্ধকে রাজধধানীতে আনা হলো। এসব দগ্ধদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সার্ভিসের দুই ফায়ার ফাইটার ও পুলিশের এক সদস্য রয়েছেরাত ১০টা পর্যন্ত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন তাঁরা হলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রবিন মিয়া (২২) ও গাউসুল আজম (২২), শিল্প পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান (৩৭), ডিপো সিকিউরিটি অ্যাডমিন খালেদুল রহমান (৫৮), নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক এ কে এস মকফারুল (৬৫), ডিপোর আমদানি পালার দায়িত্বে থাকা মইনুল হক চৌধুরী (৪০), আমিন (১৯), মো. ফারুক হোসেন (৪৫), রাসেল (৩৯), মাসুম মিয়া(৩২), ফরমানুল ইসলাম (৩২), রুবেল মিয়া (৩৪), ফারুক হোসেন (১৬) ও মহিবুল্লাহ (২৭)।
এসব দগ্ধদের রবিবার সন্ধ্যায় রবিন মিয়া, গাউসুল আজম, মাসুম মিয়া, ফরমানুল ইসলাম, রুবেল মিয়া, ফারুক হোসেন ও মহিবুল্লাহকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়।
এদিকে, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিচিকৎসাধীন সবার স্বাস নালী পুড়েছে। দগ্ধদের মধ্যে সর্বোচ্চ পুড়েছে ৮৫ ভাগ। অন্যদিকে সর্বনিম্ন পুড়েছে ১২ ভাগ।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন রবিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা ১৪ জন রোগী পেয়েছি। কিছুক্ষণ আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে সাতজন রোগীকে নিয়ে আসা হয়। প্রত্যেকের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত যাঁরা এখানে এসেছেন, কেউ আশঙ্কামুক্ত নন।”
প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে লাগা আগুনে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া ফায়ার সার্ভিসের ৯কর্মীসহ এখন পর্যন্ত ৪৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে প্রথমে একটি কনটেইনারে আগুনের সুত্রপাত হয়। পরে আরও কয়েকটি কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। প্রথমে কেমিক্যাল কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এরপর আগুন ছড়াতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দুই শতাধিক কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দগ্ধ দুই শতাধিক ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ও অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ৫২ জন এবং অর্থোপেডিক বিভাগে ১০ ভর্তি রয়েছে। চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৫২ জন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।
তাদের বেশিরভাগেরই শ্বাসনালী পোড়া। তাদের বাঁচাতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। রবিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিএম ডিপো থেকে ৪০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখন যে মরদেহগুলো উদ্ধার হচ্ছে সেগুলো আগুনে পুড়ে বীভৎস রুপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা।
মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার জোনের সহকারী (এসি) কমিশনার শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “পাঁচলাইশ থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) মর্গে পাঠাচ্ছে। সেখানে মরদেহ শনাক্তের জন্য ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে। যাদের স্বজন নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।”