অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন, যাদের দায় পেল কমিটি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৫, ২০২২, ০৫:০০ এএম

অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন, যাদের দায় পেল কমিটি

ঢাকা থেকে বরগুনা অভিমুখী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১ জনের দায় খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ৩ কর্মকর্তা, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ৪ মালিক ও ৪ কর্মীকে নৌযানের অগ্নি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছে

কমিটি আরও বলেছে, যে ডকে বিনা অনুমতিতে লঞ্চের ইঞ্জিন প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, সেটিও এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি নিশ্চিত করেছে, লঞ্চে ব্যবহৃত ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল এবং ইঞ্জিন কক্ষ থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে।

তদন্ত কমিটির প্রধান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তোফায়েল ইসলাম জানান, সোমবার রাতে মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছেন, কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ২৫টি সুপারিশ দিয়েছে, যার মধ্যে আছে প্রতি ৩ মাস পর পর দমকল বাহিনীর সদস্যদের নৌযানের অগ্নি নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিদর্শন করা, বছরে ২ বার অগ্নি নির্বাপণ মহড়ার আয়োজন এবং ক্রুদের জন্য নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

২৪ ডিসেম্বর ভোর ৩টার দিকে কয়েক শ যাত্রী বহনকারী বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

সেই রাতে লঞ্চে রাসেল শেখ (৩৮) দগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি গতকাল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যান। তার মৃত্যুতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ হয়।

হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১২ রোগীর মধ্যে ২ জন বর্তমানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালিকরা আইন ভঙ্গ করেছেন। তারা নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে লঞ্চে আগের ২টি ইঞ্জিন বদলে আরও শক্তিশালী ও পুরনো ২টি ইঞ্জিন বসিয়েছিলেন।

আইন অনুযায়ী লঞ্চে একজন ইনল্যান্ড মেরিন প্রকৌশলী থাকার কথা, জানান তারা। কিন্তু এরকম যোগ্যতাসম্পন্ন কেউ সেখানে ছিলেন না, যে কারণে ৪ জন লঞ্চ মালিককে দায় নিতে হবে।

নৌযানটির তিন মালিক হামজালাল শেখ, শামিম আহমেদ ও রাসেল আহমেদ এখন পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। সূত্ররা জানিয়েছেন, ফেরদৌস হাসান রাব্বী নামের অপর মালিক অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে আটক করা হয়নি।

তদন্ত প্রতিবেদনের বরাতে সূত্রগুলো জানিয়েছেন, ডক কর্তৃপক্ষকে পুরনো ইঞ্জিন বসানোর দায় নিতে হবে কারণ তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নেননি।

তারা জানান, যদিও লঞ্চটি প্রায় ৩ মাস পর আবারও কার্যক্রম শুরু করে, তবুও নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএর সার্ভেয়ার ও পরিদর্শকরা লঞ্চটিকে ঠিকমতো পরীক্ষা করেননি।

সদরঘাটে নিযুক্ত নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার মাহবুবুর রহমান কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি তার দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখেননি লঞ্চের ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়েছিল কী না।

৩ মাস পর ১৯ ডিসেম্বর লঞ্চটি প্রথমবারের মতো যাত্রা করে। এরপর আবারও ২৩ ডিসেম্বর এটি যাত্রা করে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান লঞ্চটি পরিদর্শন করেননি।

সূত্রগুলো জানায়, হাবিবুর রহমানকেও কর্তব্যে অবহেলার জন্য দায়ী করা হয়, কারণ ৩ মাস পরে লঞ্চটি আবারও যাতায়াত শুরু করলেও তিনি সেটি পরিদর্শন করেননি।

কমিটি জানিয়েছে, সদরঘাটে নিযুক্ত বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি, কারণ লঞ্চটি আবারও কার্যক্রম শুরু করেছে, এ তথ্য জানা থাকার পরও তিনি তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাননি।

তদন্ত কমিটি জানতে পেরেছে, আগুন লাগার পর হাতে যথেষ্ট সময় থাকার পরও ২ চালক লঞ্চের নোঙর ফেলেননি। তারা যদি নোঙর ফেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতেন, তাহলে মৃতের সংখ্যা কম হতো। কিন্তু তারা সেরকম কিছু না করে লঞ্চ ফেলে চলে যান।

তারা জানান, এ কারণে চালক মাসুম বিল্লাহ, আবুল কালাম এবং গ্রিজাররা এই ঘটনার জন্য দায়ী।

কমিটি একইসঙ্গে ২ মাস্টার রিয়াজ শিকদার ও খলিলুরকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছে, কারণ তারা ইঞ্জিনের সমস্যা সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েও লঞ্চটিকে নোঙর করার কোনো চেষ্টা করেননি।

তারা সবাই এখন কারাগারে আছেন।

সূত্র: ডেইলি স্টার 

Link copied!