সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১, ০১:১৫ এএম
২৫শে সেপ্টেম্বর বাঙালি জাতি এবং বাংলা ভাষার ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন। কারন ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এই দিনটিকে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে নিজের ফেসবুকে বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে বাংলায় দেওয়া বক্তৃতার একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন।
রবীন্দ্রনাথের নোবেল বিজয়ের ৬১ বছর পর বাংলা ভাষা আরেকবার সম্মানিত হলো বিশ্ব সামাজে এবং তা বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্য দিয়ে।
সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দেশের পুনর্গঠন আর বিশ্ব সমাজে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পর পর দুবছর পাকিস্তানের বিরোধিতা এবং চীনের ভেটোর কারণে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ।
অবশেষে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী কূটনৈতিক চেষ্টায় ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। এর ঠিক এক সপ্তাহ পরে জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু।
নানা কারণে সে ভাষণ ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। একদিকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের উদার মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ, অপরদিকে মানব সভ্যতার কল্যাণে জাতিসংঘকে আরও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বান।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুধু একটি নতুন জাতির জন্মের ঘোষণা দেয়নি বরং ধর্মীয় বিভাজনের পরিবর্তে ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক সম্প্রীতিকে সমুন্নত করার ঘোষণা দিয়েছিল।
বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর দুঃখ-দুর্দশা মোচনের জন্য জাতিসংঘকে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধুর আহবান সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত হয়েছিল। সেসঙ্গে প্রকাশ পেয়েছিল বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর টিকে থাকার সংগ্রামে শক্তি, সাহস ও আত্মপ্রত্যয়ের দৃঢ় চেতনা।
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ সম্পর্কে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই ভাষণের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলা ভাষার ব্যবহার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা- দীর্ঘ ৪৭ বছরের ব্যবধানে জাতিসংঘে বাংলাদেশ আজ এক মর্যাদাবান রাষ্ট্র হিসেবে মহিমান্বিত। যে বিশ্ববাস্তবতায় ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে ভাষণ দেন, সেসময়ের অনেক বিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু এত বছর পরেও তার সে ভাষণের তাৎপর্য এতটুকু ম্লান হয়নি।
অপরদিকে মহামারির এ সময়ে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব মানুষের টিকাপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ভূমিকা গ্রহণ, বিশ্বের জলবায়ু বিপর্যয় রোধে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বানসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দফা তিনি উপস্থাপন করেছেন। এজন্য দেশ-বিদেশে ইতোমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছেন।
এছাড়া বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশ বিপর্যয় রোধ, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা নেতৃত্বস্থানীয়।
পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে এবছর ১৮ তম বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আবারও বাংলায় ভাষণ দিলেন।
১৯৭৪ থেকে ২০২১ সাল- এ দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে যেতে যেভাবে ধাপে ধাপে গৌরবের সোপান অতিক্রম করছে, তাতে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের গর্বিত হওয়ার কথা।