ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২, ১২:৫৮ এএম
আবারও ভিসিবিরোধী আন্দোলনে ফিরছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আবারও সরব হয়ে উঠেছেন আন্দোলনরতরা। বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা।
গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচির একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি থেকে এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা ২৮ হয়। ২৬ জানুয়ারি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক ও দেশের জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। এরপর থেকে অহিংস আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে অবরোধ ও অনশন কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চালিয়ে আসছিলেন তাঁরা। এবার ১৪ দিন পর বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিকেল পাঁচটার দিকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। প্ল্যাকার্ডগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার চিত্রও ছিল। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘ফরিদের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ কেন?’, ‘ফরিদের গদি অস্তাচলে, ফরিদ যাবে রসাতলে’সহ বিভিন্ন স্লোগানে দিয়ে মিছিল করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে শুরু হয়ে কিলোসড়ক ধরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে চেতনা-৭১ প্রদক্ষিণ করে আবার গোলচত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
আমরা অধ্যাপক জাফর ইকবালের মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়ের আশ্বাসে অনশন কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। সে সময় আমাদের বলা হয়েছিল আমাদের বিভিন্ন দাবিগুলো মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও আমাদের দেওয়া আশ্বাসগুলোর কোনোটিই বাস্তবায়নের কোনো প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পারিনি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন শাহরিয়ার আবেদীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা অধ্যাপক জাফর ইকবালের মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়ের আশ্বাসে অনশন কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। সে সময় আমাদের বলা হয়েছিল আমাদের বিভিন্ন দাবিগুলো মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও আমাদের দেওয়া আশ্বাসগুলোর কোনোটিই বাস্তবায়নের কোনো প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পারিনি। এমনকি শিক্ষার্থীদের ওপর দেওয়া দুটি মামলা এখনো ঝুলে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রায় আড়াই শ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টসহ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সেগুলোও চালু করা হয়নি। অন্যদিকে আমাদের এক দফা দাবি উপাচার্যের পদত্যাগ কিংবা অপসারণের ব্যাপারেও কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
প্রসঙ্গত, ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ১৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরদিন ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে আন্দোলনটি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। বুধবার ছিল আন্দোলনের ২৮তম দিন।