সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বেশ বিতর্কিত হয়েছেন। সর্বশেষ চলচ্চিত্র অভিনেতা মামনুন হাসান ইমন ও অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির সঙ্গে আলাপচারিতার ফোনালাপ ফাঁস হলে দেশ জুড়ে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফোনালাপ ফাঁসের বিষয়ে নায়ক ইমনকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ডেকে এনে অডিও ফাঁসসহ বিভিন্ন বিষয়ে ডিবির কর্মকর্তারা তার সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টা কথা বলেছেন।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুণ-অর-রশিদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডিবি সূত্র জানায়, আলোচিত ওই ফোনালাপ নিয়ে নায়িকা মাহিয়া মাহিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মাহি বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। দেশে ফিরলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইমন ও মাহির সঙ্গে ওই ফোনালাপে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ‘ধর্ষণের হুমকি’ দেওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন। তার বক্তব্যজুড়ে ছিল অশ্রাব্য অশালীন শব্দ।
এছাড়া, তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে অশালীন ও বর্ণবাদী মন্তব্য করায় বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ মুরাদ হাসানের পদত্যাগ দাবি করে বিরোধী দল বিএনপি। অন্যদিকে, নারী বিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে তার পদত্যাগ দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন নারী অধিকার কর্মীরাও।
জাইমাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য এবং ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় চরম বিতর্কের মুখে পড়েন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ। নারী অধিকারকর্মীসহ রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রীর প্রতি। কোনো কোনো বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগও চাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবহিত হওয়ার পর তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন।
বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসা ডা. মুরাদের জন্য নতুন নয়। কিছুদিন আগে বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরার দাবি জানিয়ে নিজ দলের মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম ও রাষ্ট্রধর্ম থাকতে পারে না— এমন মন্তব্যও তিনি আরেক অনুষ্ঠানে করেন।
ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। পেশায় চিকিৎসক এই রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।