ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় বিদায় জানানো হলো কবি হেলাল হাফিজকে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪, ০৪:১৪ পিএম

ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় বিদায় জানানো হলো কবি হেলাল হাফিজকে

ছবি: সংগৃহীত

ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বিদায় জানানো হলো প্রিয় কবি কবি হেলাল হাফিজকে। আজন্ম নিঃসঙ্গতাকে ভালোবেসে যাওয়া কবি হেলাল হাফিজের বিদায় মুহূর্তে ফুলে ফুলে ঢেকে গেল কফিন, চোখের পানি ফেললেন কেউ কেউ।

রাষ্ট্রের উপদেষ্টা, সচিব, বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তারাও এসেছিলেন কবিকে বিদায় জানাতে। ছিলেন সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও।

শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় কবির মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়; তার প্রথম জানাজাও হয় সেখানে। জানাজা পড়ান কবির বড় ভাই দুলাল আবদুল হাফিজ।

পরে বাদ জোহর জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় দফা জানাজার পর তার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন কবি হেলাল হাফিজ।

অকৃতদার হেলাল হাফিজের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটছিল ঢাকার শাহবাগের সুপার হোম নামের এক হোস্টেলে। শুক্রবার দুপুরে বাথরুমে পড়ে গেলে তার মাথায় রক্তক্ষরণ হয়। পাশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে হেলাল হাফিজকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ অনেকে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হেলাল হাফিজকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, পরিচালক সরকার আমিনসহ অনেকেই ছিলেন সেখানে।

এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাব, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন বলেন, “হেলাল হাফিজ একাকী জীবন বেছে নিয়েছিলেন। এ জীবন একান্তই তার।

“এমন জীবন নিয়ে আমরা আক্ষেপ করলেও তিনি খুব একটা আক্ষেপ করতেন বলে আমি মনে করি না।”

কবিকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর এক প্রশ্নে ফারুকী বলেন, “তিনি অগণিত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। একটা কবিতার বই লিখেই এমন বিপুল পাঠকের ভালোবাসা পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার।

“আমি যতটুকু জানি, উনি স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক পাননি। তার অনেক লেখা অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। সেখানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকলে আমরা করব।”

কবি হেলাল হাফিজ ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা খোরশেদ আলী তালুকদার পেশায় ছিলেন স্কুলশিক্ষক আর মা কোকিলা বেগম গৃহিণী।

অনেকটা বোহেমিয়ান জীবন কাটালেও সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন কবি হেলাল হাফিজ। সাংবাদিক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি। সর্বশেষ দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন তিনি।

১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে ওঠে মিছিলের স্লোগান।

‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়।

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ।

আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা একাত্তর’। তৃতীয় ও সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।

খুব কম লিখেছেন হেলাল হাফিজ। তবে তার কবিতা যেমন হয়ে উঠেছিল মিছিলের স্লোগান, তেমনই আবার হয়ে উঠেছিল প্রেমের চিঠির অনুষঙ্গ। কবিতা যে বই ছাড়াও কার্ড হয়ে বের হতে পারে, তাও দেখা যায় হেলাল হাফিজের ক্ষেত্রে।

Link copied!