ভাষা শহীদদের স্মরণে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা প্রায় শেষ ভাগে এসে পড়েছে। বইপ্রেমী বাঙালির প্রাণের মেলা হিসেবে পরিচিত বইমেলায় নতুন বইয়ের হিড়িক পড়ে যায়। প্রতিবছর নানা ক্যাটাগরির বইয়ের প্রকাশ ও কাটতিতেই মুখরিত হয়ে থাকে বইমেলা।
প্রতিবার বইমেলায় গবেষণামূলক বইয়ের সংখ্যা ও কাটতি কম থাকলেও এবার বেড়েছে প্রকাশকদের গবেষণামূলক বইয়ের সংখ্যা।
গবেষণামূলক বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ায় প্রকাশকরা এ ঘরানার বই প্রকাশে আগ্রহ পাচ্ছেন বললে জানা যায়। তবে, গবেষণার বই ও পাঠক বাড়লেও তারুণ্যের আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে। এতে পরের প্রজন্মে ভালো মানের পাঠক তৈরি না হওয়ার বিপদ থেকেই যায়। কোন বিষয়ে গভীরভাবে জানতে আগ্রহী হচ্ছে না এ প্রজন্ম। সস্তা ও চটুল বিষয় নিয়ে মজে থাকা এ জেনারেশনের চিন্তা করার সক্ষমতা ঠিক ভাবে গড়ে না উঠার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই, সুষ্ঠু চিন্তা ও মানস বিকাশে তরুণ প্রজন্মের গবেষণামূলক বই পড়ার উপর জোর দিচ্ছেন সাহিত্য বোদ্ধারা।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বইমেলায় কথা হয় ১০টির অধিক সরকারি, বেসরকারি এবং স্বায়ত্বশাসিত প্রকাশনাসংস্থার সাথে।
গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির স্টলে গিয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির সেলস মাকেটিং অফিসার জুলফিকার আলীর সাথে। গবেষণামূলক বইয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জার্নাল, পাবলিকেশন, গ্রন্থ মিলিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের মোট প্রকাশনা ১৪০টির মতো। মেলা উপলক্ষ্যে আমাদের নতুন কোনো কিছু না আসলেও গত বছরের মেলার পর থেকে কয়েকটি প্রকাশনা এসেছে।’
বইয়ের কাটতি নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনার কাটতি বেড়েছে। আমাদের নির্দিষ্ট কিছু পাঠক রয়েছে। মূলত গবেষক, উচ্চ শিক্ষিত পাঠকরাই আমাদের ক্রেতা।’
তবে তরুণ ক্রেতাদের নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, গবেষণামূলক বইয়ের তরুণ ক্রেতা নেই বললেই চলে। কিছু তরুণ পাঠক উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলেও কিনেন খুবই কম।
বইমেলার অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যতে গিয়েও একই চিত্র পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় প্রতিনিধি মোজাম্মেল হক দ্য রিপোর্ট লাইভকে বলেন, আমাদের ৫০টিরও অধিক গবেষণামূলক বই রয়েছে। এই ধরনের বইয়ের কাটতি এইবার বেড়েছে।
তবে তরুণ পাঠকদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গবেষণাধর্মী বইয়ের তরুণ ক্রেতা নেই বললেই চলে। কিছু তরুণ গবেষণামূলক বই খুঁজলেও সেই সংখ্যা খুবই কম।
গবেষণাধর্মী প্রকাশনার জন্য বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের মার্কেটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট একেএম কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের গবেষণা ধর্মী বই হাজারেরও বেশি। শিক্ষক-গবেষক, উচ্চ শিক্ষিত পাঠকরা আমাদের ক্রেতা। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রধান ক্রেতা বলা যায়।
তরুণ পাঠকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তরুণ ক্রেতাদের মধ্যে যারা মেধাবী তারাই মূলত আমাদের ক্রেতা ও পাঠক।’
প্রথমা প্রকাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি হাসান ইমামের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমাদের বেশির বই গবেষণামূলক। এবারের মেলায়ও অনেকগুলো নতুন বই আসছে। প্রথমায় আগের বারের চেয়ে গবেষণামূলক বই বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশকিছু তরুণ গবেষণকের বই বের হচ্ছে প্রথমা থেকে। পূর্বের চেয়ে গবেষণামূলক বইয়ের বিক্রিও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান হাসান। তবে, এ ঘরানায় তরুণ পাঠকদের সংখ্যা খুবই কম বলে যুক্ত করেন তিনি।
বইমেলায় বেশ কয়েকটি স্টলে ঘুরে জানা যায় একই ধরনের চিত্র। সবারই অভিযোগ তরুণরা মেলায় বই কিনতে নয়, ঘুরতে আর ছবি তুলতেই আসছেন। এবারের মেলায় গবেষণাধর্মী বইয়ের সংখ্যাবৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যায়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই জানিয়েছে গবেষণাধর্মী বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ বৃদ্ধি ও কাটতি বাড়ার কথা। তবে, গবেষণার বিষয়ে তারুণ্যের অনাগ্রহ অশনিসংকেত হিসেবেই দেখছেন বোদ্ধারা।