কুসিক নির্বাচন: সাক্কুর হ্যাট্রিক নাকি রিফাতের বাজিমাত?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১৫, ২০২২, ০৮:১২ এএম

কুসিক নির্বাচন: সাক্কুর হ্যাট্রিক নাকি রিফাতের বাজিমাত?

আগামী পাঁচ বছরের জন্য কুমিল্লার নগর ভবনের শীর্ষকর্তা কে হবেন— তা জানতে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি। রাত পোহালেই এই সিটিতে ভোট দিয়ে নগরকর্তা নিয়োগ দেবেন স্থানীয় নাগরিকরা। ভোট ঘিরে এরইমধ্যে উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের ভোট হলেও মেয়র পদ নিয়েই বেশি আগ্রহ নগরবাসীর। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ প্রার্থী। তবে আকর্ষণের কেন্দ্রে আছেন দুইবারের জয়ী মো. মনিরুল হক সাক্কু এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। 

জনমনে এ মূহুর্তে একটিই জিজ্ঞাসা— ১৫ জুন কোন্ ‘হক’ হতে যাচ্ছেন আলোচিত সিটির মেয়র? মনিরুল হক, নাকি আরফানুল হক? মনিরুল হক জিতলে এটি হবে তাঁর হ্যাটট্রিক বিজয়। আর অপর হক, আরফানুল হক জিতলে এটি হবে তাঁর ‘এলাম, দেখলাম আর জয় করলাম’ এর মত বাজিমাত! 

এরইমধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে সাতটি দেশি সংস্থার ৯২ জন পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য নগরে অবস্থান করছেন। আছেন রাজধানী ঢাকাসহ স্থানীয় সাংবাদিকরাও। গোটা দেশই এখন কুমিল্লার দিকে তাকিয়ে।  

নাগরিক দূর্ভোগের নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে সোমবার মধ্যরাতে। শেষ সময়েও প্রার্থীরা ছুটেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটের বাকী মাত্র অল্প কিছু সময়। ইসিও পুরোপুরি প্রস্তুত ভোট গ্রহণ শুরুর।

নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটার। মোট ভোট কেন্দ্র ১০৫টি। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীসহ মোট পাঁচজন মেয়র প্রার্থী। ১০৮ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৩৬ জন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী।

সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সোমবার থেকে নগরীতে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ হাজার ২৬০ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২২৯টি টিমে পুলিশ সদস্য ২ হাজার ৪৬০ জন, ১২ প্লাটুন বিজিবির ২৪০ সদস্য, র‍্যাবের ২৭টি টিমে ২৫০ জন, ১০৫ কেন্দ্রে ১ হাজার ২৬০ আনসার সদস্য, এপিবিএনের ৯টি গ্রুপে ৫০ জন সদস্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

শেষ মুহূর্তে এসে ভোটের মাঠে তৈরি হয়েছে টানটান উত্তেজনা। প্রধান তিন প্রার্থী একে অপরের সমালোচনায় সরব হয়েছেন। শেষ মুহূর্তে এসে মেয়র পদে ভোটের মাঠে চলছে নানা সমীকরণ। কে জিতবেন? কে হারবেন? এমন আলোচনা চলছে নগর জুড়ে।

এই মুহুর্তে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে ইসির নোটিশ দেওয়া নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মেহেরুন্নেসা বাহার। তিনি বলেছেন, তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় আছে৷ তিনি প্রচারণায় অংশ না নিলেও লুকিয়ে থাকতে পারেন না।

আ হ ম বাহাউদ্দিন বাহারের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা বাহার আরও বলেছেন, নির্বাচন হোক, আপনাদের মাধ্যমেই সুন্দর একটা ভালো নির্বাচন হোক। আসলেই আমরা আইনের প্রতি অনেক শ্রদ্ধাশীল। আমরা চাই যে সবাই একত্রিত সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার জন্য কারণ বহুদল আছে যারা সবাই একত্রিত হয়ে নির্বাচন করছে। সবাই যাতে সুন্দর ভাবে নির্বাচন করতে পারে সেদিকে সবার লক্ষ্য থাকবে আমরাও সেই সৃষ্টি করে যাচ্ছি সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, উনি ৬ আসনের সংসদ সদস্য, গণপ্রতিনিধি। সবকিছু বাদ দিলেও আজকে কোনো ধরনের সমস্যা হলে উনি সবার আগেই সমাধান করবেন।

আরেকটা জিনিস হলো, কেউ বলতে পারবে না যে ওনাকে কোন প্রচার-প্রচারণায় দেখেছে। উনি ওনার এলাকায় থাকবেন। উনি ওনার ঘরে থাকবেন। ঘর তো আর বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। ওনার মহানগর অফিস, পার্টি অফিস কীভাবে বন্ধ করে? পার্টি অফিসের সভাপতি কোথায়? লুকিয়ে থাকবে? এই নোটিশটাই মনে হয় ঠিক হয়নি।

এদিকে মাওলানা রাশেদুল ইসলাম রহমত পুরী বলেন, ইভিএম মানেই ই-জালিয়াতি, ই-বাটপারি। ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে অনেক মহল পাঁয়তারা করছে।

মনিরুল হক সাক্কু আশংকা প্রকাশ করে বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। ফলে ভোটারদের উপস্থিতিও কম হবে। 

এমপি বাহারের উপস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নির্বাচন কমিশনারের ব্যর্থতা। তিনি এমন কোন আইন করুক যেটাতে এমপি বাহার কে এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হোক।

একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে অনেকটা আকস্মিকভাবে গতকাল বিকালে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন মনিরুল হক সাক্কু। আট পাতার ইশতেহারে তিনি নগরীর উন্নয়নে ১৮ দফা অঙ্গীকার করেছেন।

সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন এবং অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন কুমিল্লা মহানগর ও জেলা শাখা। 

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বাংলাদেশের ১৩তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তাঁরই ‘প্রথম এসিড টেস্ট’ হতে যাচ্ছে এই নির্বাচন।

Link copied!