জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সারা দেশে দেখা দিয়েছে পরিবহন সংকট। ভাড়ায় চলা উবার, পাঠাও -এর মোটরসাইকেলও নামেনি অনেক এলাকায়। তেলের এই দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে তাই বিক্ষোভ হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
ঢাকা: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি, বামদলসহ নানা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। শনিবার সকাল থেকেই অঘোষিতভাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে প্রতিবাদ মিছিল আয়োজন করে তারা। এ ছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব, শাহবাগসহ অন্যান্য এলাকাতেও বিক্ষোভ হয়েছে।
বরিশাল: বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে নগর বিএনপি। শনিবার দুপুরে নগরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দলটি। পরে সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হলসংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, হঠাৎ মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে এই অবৈধ সরকার আবারও প্রমাণ করেছে তারা জুলুমবাজ ও গণবিরোধী। শুধু জনগণের টাকা লুট করতেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমেছে তারপরও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি মানুষের রক্ত চুষে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। অবিলম্বে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি জানান বক্তারা।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে গণপরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণায় চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। ঘর থেকে বের হয়ে বিপাকে তারা। হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। সবধরনের জ্বালানির দাম বাড়ার প্রতিবাদে ধর্মঘটের ডাক দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ। সড়কে শত শত মানুষের জটলা। গণপরিবহনের অভাবে শনিবার ভোর থেকে ঘর থেকে বের হয়েই বিপাকে। দুর্ভোগে গার্মেন্টকর্মী, পথচারী আর অফিসগামীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
বাস বন্ধ রাখার বিষয়ে মালিকদের ভাষ্য, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়ার কারণে রাতে পেট্রোল পাম্পগুলো তেল দেয়নি। সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ শতাংশ বাড়িয়েছে। এত দাম দিয়ে জ্বালানি কিনে একই ভাড়ায় আমাদের পক্ষে গাড়ি চালানো সম্ভব না।
রাঙামাটি: হঠাৎ করে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির কারণে শহরের একমাত্র গণপরিবহন অটোরিকশা ও দূরপাল্লার সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, প্রজ্ঞাপন জারি হলে কী সিদ্ধান্ত হয়, সেটা দেখার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব। রবিবার (৭ আগস্ট) বেলা ১১টায় সভা আহ্বান করা হয়েছে।
কক্সবাজার: জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জেলায় যাত্রীদের থেকে ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য শুরু হয়ে গেছে। শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে স্পিডবোটের ভাড়া যাত্রীপ্রতি ৫৫ টাকা বাড়তি আদায় শুরু হয়েছে। এনিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। অথচ ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি বেড়েছে ৩৪ টাকা।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘বিশ্ববাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকার তেলের মূল্যের নতুন প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করায় মহেশখালী রুটে চলাচলরত স্পিডবোটের ভাড়া আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জনপ্রতি ১১৫ টাকা এবং ডেনিস/কাঠের বোটের ভাড়া জনপ্রতি ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
খাগড়াছড়ি: জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে পাহাড়ে। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি জেলার সব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি। সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহর থেকে ছেড়ে যাওয়ার দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলার রুটের সবগুলো বাস কাউন্টার খালি। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পড়ে আছে গণ ও পণ্যবাহী সব ধরণের পরিবহন। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
পিরোজপুর: হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পিরোজপুরের তেল পাম্পগুলোতে ভিড় থাকলেও সকাল থেকে পাম্পগুলোতে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। পাম্পগুলোতে বাস ট্রাক কিছুটা দেখা গেলেও প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের উপস্থিতি তেমন ছিল না।
পিরোজপুর শহরে দুটি তেলপাম্প থাকলেও মেশিনে সমস্যা বলে একটি পাম্প বন্ধ রাখলে অন্যটিতে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। সেখানে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ব্যাপারে তেল পাম্প মালিক ও জেলা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারনির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল।
ঠাকুরগাঁও: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে জেলার কৃষক। আয়-ব্যয়ের ডামাডোলে পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও সাধারণ মানুষ। এক বিঘা জমিতে হালচাষ দিতে ৫০০ টাকা নিলেও; রাত পোহাতেই তা বেড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় হালচাষ দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে কৃত্রিম সংকটে সার-কীটনাশক ব্যবহারে খরচ বেড়েছে কৃষকের। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবু হোসেন জানান, কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ধানের মূল্যও বাড়ানোর প্রয়োজন হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে সিরাজগঞ্জের গণপরিবহনগুলোতে। শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকেই জেলার পাম্পগুলোতে সরকারনির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেন।
সুনামগঞ্জ: পেট্রোল-অকটেনের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের আয়-রোজগার অনেক কমে গেছে। সুনামগঞ্জ শহরের আব্দু জহুর সেতু পয়েন্ট, পলাশ বাজার, রাধানগর, বিশ্বম্ভরপুর, সাচনাবাজার পয়েন্টসহ ১০টি নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ -বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-বড়ছড়া, চারাগাঁও-বাগলীসহ ২৮ রুটে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করেন চালকরা।
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের হানিফ উদ্দিন বলেন, এভাবে তেলের দাম বাড়ানো কোনোভাবে ঠিক হয়নি। হাজার হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছে। শহরের ওয়েজখালী এলাকার ছফেদা ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক কামদা চৌধুরী বলেন, ‘ডিপো থেকে তেল আনার জন্য তিন গাড়ি পাঠালে এক গাড়ি তেল দেয়। চাহিদামতো তেল পাওয়া যায় না। গতরাতে পাম্পের তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় তেল বিক্রি করা যায়নি।’
পঞ্চগড়: সরকার নির্ধারিত বাড়তি নতুন দামে শনিবার জ্বালানি তেল বিক্রি শুরু করেছেন পাম্প মালিকরা। এর আগে শুক্রবার (৫ আগষ্ট) রাত ৯টা থেকেই তেল বিক্রি বন্ধ রাখেন তারা। অনেকে জ্বালানি তেল কিনতে এসে বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে ঘুরেও কাউকে পাননি।
গাইবান্ধা: হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে গাইবান্ধায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে নাগরিক মঞ্চ। এ সময় অনতিবিলম্বে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। শনিবার (০৬ আগস্ট) দুপুরে নাগরিক মঞ্চের আয়োজনে জেলা নাট্য সংস্কৃতি সংস্থার সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অনতিবিলম্বে তেলের দাম কমানোর জোর দাবি জানান বক্তারা।
রংপুর: পেট্রোল-অকটেন, জিজেলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির পর প্রথম দিনে রংপুর নগরীর বিভিন্ন ফিলিং স্টেশন ঘুরে চিত্রটা স্বাভাবিক দেখা গেলেও বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। হঠাৎ করে দাম বাড়ানোয় নিজেদের জীবনে কী ধরনের সংকট সৃষ্টি হবে, তা উল্লেখ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তারা।
রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার তিনটি পাম্প বন্ধ করে দেয়া হয় দাম বাড়ার খবর গণমাধ্যমে প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে। নগরীর মডার্ন মোড়, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, সিও বাজার এলাকার ফিলিংস্টেশনগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। বুড়িরহাট এলাকার একটি ফিলিং স্টেশনে ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় ও হট্টগোল ঠেকাতে পুলিশি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন পড়ে।
বাগেরহাট: জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে বাগেরহাটের সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে উল্লেখ করে সরকারের কাছে জ্বালানি তেলের দাম কামানোর দাবি করেছেন তারা। এদিকে দামবৃদ্ধি কার্যকর হওয়ায় শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে জেলার ফিলিং স্টেশনগুলোতে জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে। এর আগে শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে হঠাৎ করেই তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছিল তারা।
বাগেরহাট শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি অথচ ব্যয় বেড়েই চলেছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বছরে বছরে বেতন-ভাতা বাড়লেও সাধারণ মানুষের আয় তো আর বাড়েনি। আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ কষ্টে আছে।
মাদারীপুর: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে বিপাকে পড়েছেন মাদারীপুরের ট্রাক ও পিকআপ চালকরা।তারা জানান, হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও বাড়েনি পরিবহন খরচ। এজন্য দূরে কোথাও মালামাল পরিবহন করতে রাজি নন চালকরা। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।
মাদারীপুর জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইউসুফ আলী জানান, জেলায় দুই শতাধিক ট্রাক ও শতাধিক পিকআপ রয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যেই পাম্পগুলোতে তেল বিক্রি করছে। কিন্তু ট্রাক, লরি কিংবা পিকআপে পরিবহন খরচ বাড়াননি মালিকরা।
মৌলভীবাজার: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দুপুরে মৌলভীবাজার চৌমুহনা চত্বরে হাওড় রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আয়োজনে এ মানববন্ধন হয়। সরকার আকস্মিকভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে বক্তারা সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।
গাজীপুর: জ্বালানি তেলের বাড়তি মূল্য নির্ধারণের প্রভাব পড়েছে পরিবহন সেক্টরে। গণপরিবহনের পাশাপাশি পণ্য,মালামাল পরিবহণে ব্যবহৃত ট্রাক চালকদের মাথায় হাত। পরিবহন মালিক শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তেলের দাম অনুপাতে ভাড়া বাড়াবেন। আগে যেখানে ৫০ লিটারে ৪ হাজার টাকা খরচ হতো, সেখানে এখন ৫ হাজার ৭০০ টাকা গুনতে হবে বলেও জানান পরিবহন শ্রমিকরা।
নেত্রকোনা: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খবরে জেলায় পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেয়ার তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সাময়িক বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে আবারও বাস চলাচল শুরু হয়। কিন্তু গ্যাসের দাম না বাড়লেও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা বাড়িয়ে দিয়েছে ভাড়া বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নরসিংদী: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে জেলায় বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল। আন্তঃজেলা বাস ও ট্রাক ডিপোসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় থাকা সব ডিপো থেকেই কোনো ধরনের যানবাহন ছেড়ে যায়নি। জেলা বাস ও ট্রাক চালক সমিতি জানায়, জেলা থেকে দৈনিক মোট ৫০০ বাস রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। এছাড়া নরসিংদীর বিভিন্ন উপজেলা ও আঞ্চলিক সড়কে চলাচল করে আরও ৫ শতাধিক বাস। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও লোকসানের আশঙ্কায় এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।